অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় নুসরাতকে হত্যা করা হয়েছে

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১১:০৬ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারল। এই ধরণের অমানবিক ঘটনা গুলো সত্যিই মানব জাতির জন্য দুঃখ জনক।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এ সময় তিনি বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং এই ধরনের কোন আলামত দেশবাসীকে তখনই পুলিশকে জানানোর আহ্বান জানান।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রীলংকার সন্ত্রাসী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমাদের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং বর্তমানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ফজলুল করীম সেলিমের কন্যার বড় ছেলে আট বছরের জায়ান চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেছে। শেখ সেলিমের মেয়ে সোনিয়ার জামাই হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আর সেখানে শুধু জায়ান চৌধুরী-ই নয়, প্রায় ৪০ জন শিশুসহ সাড়ে তিনশ’র কাছাকাছি মানুষ মারা গেছে।

তিনি বলেন, জায়ান চৌধুরী একটা ছোট্র বাচ্চা। মাত্র আট বছর বয়স। আজকে সে আমাদের মাঝে নেই। তার বাবাও মৃতুশয্যায়। বাবাকে এখনও জানতে দেয়া হয়নি যে, জায়ান নেই। সে বারবার খুঁজছে। আর তার মা, বাবা পরিবারের অবস্থা আপনারা বুঝতেই পারেন। আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাছে বলব এ ঘটনায় যারা মারা গেছে শুধু তারা নয়, যাদের জন্য আমরা শোক প্রস্তাব নিলাম, তাদের সকলের আত্মার মাগফেরাত আমি কামনা করছি। তাদের শোক সন্তপ্ত পরবারের প্রতি আমি আমার সমবেদনা জানাই। আর দেশবাসির কাছে এটাই আমার আহ্বান তাদের জন্য দোয়া চাই। আর এ ধরণের সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ থেকে যেনো সকলে দূরে থাকি। এ ধরণের ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে যেনো কোনো মানুষ-মানুষ যারা তারা যেনো জড়িত না হয় সেটাই আমার কামনা।

তিনি বলেন, এই ধরণের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এই ঘৃণ্য অপরাধ ঘটিয়ে থাকে তারা এর মধ্য দিয়ে কি অর্জন করছে জানি না। নিহতদের মধ্যে যে ছোট্র শিশু, নিষ্পাপ, কোনো অপরাধ যাদের নাই। তারা কেনো এভাবে জীবন দেবে?

তিনি বলেন, ঠিক এর কিছুদিন পূর্বেই নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সরাসরি গুলি করে অনেক গুলি মানুষকে হত্যা করা হল। সেখানেও নারী, পুরুষ, শিশু ছিল। আমাদের ক্রিকেট টিম সেখানে ছিল। খুব অল্পের জন্য তারা বেঁচে গিয়েছে। সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘৃণ্য কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতরাই নয়, সহায়তাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদেরও খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আওয়ামী লীগ চতুর্থবার সরকার গঠন করার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে অনেক তথ্য প্রকাশ পায়। এ সব তথ্য হতে দেখা যায়, পরোক্ষভাবে দেশি-বিদেশি কিছু লোক ও সংস্থা বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তাই এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে অন্যান্য পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর যেসব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে বা আশ্রয় গ্রহণ করে আছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। এখনও যে সব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে এবং আশ্রয় গ্রহণ করে আছে, তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন।

সরকার প্রধান জানান, পলাতক আসামি নূর চৌধুরী কীভাবে কানাডায় বসবাস করছে, সে সম্পর্কে তথ্য দিতে কানাডা সরকারকে বাধ্য করতে ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিসের আদালতে আবেদন করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ এ বিষয়ে আদালতে শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। শুনানি শেষে বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। পলাতক আসামি রাশেদ চৌধুরীকে আমেরিকা থেকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগের দ্বারস্থ হতে আইনগত বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সেখানে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্স কাজ করছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ/এএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: