জাহিদের শপথ নিয়ে যা বলছেন বিএনপি নেতারা

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৩২ পিএম

সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির প্রার্থী জাহিদুর রহমান জাহিদ। তিনি শপথ নেওয়ার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায় বিএনপির নেতাকর্মী ও আমজনতার মধ্যে।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বেলা ১২টায় জাতীয় সংসদ ভবনে তার দপ্তরে জাহিদুর রহমানকে শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংসদ সচিব জাফর আহমেদ খান।

কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেও বিষয়টি নিয়ে মোটেই শঙ্কিত নন জাহিদুর। তিনি জানান, নিজের ইচ্ছেতেই শুধু নয়, জনগণের চাপে শপথ নিয়েছেন।

জাহিদুর বলেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে গিয়েছি। শপথের জন্য সম্মতি চেয়েছি, কিন্তু পাইনি। দল এখন পর্যন্ত শপথ না নেয়ার ব্যাপারে অনড়। দল যদি মনে করে বহিষ্কার করবে, করতে পারে। কিন্তু আমি দলেই আছি। বহিষ্কার করলেও আমি বিএনপিরই একজন নিবেদিত প্রাণ। ছাত্রজীবন থেকে দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে আমি বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি তো বিএনপি থেকে বহিষ্কার হব না।

সংসদে গিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইবেন উল্লেখ করে জাহিদ বলেন, আমার নেত্রী ৭৩ বছর বয়সে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে জেল খাটছেন। উনাকে যেন গণতন্ত্রের স্বার্থে মুক্ত করে দেয় সংসদে এ আহ্বানও জানাব। এটিই আমার প্রথম অঙ্গীকার।

‘আমার নেত্রীর মুক্তির জন্য সংসদে যে ভূমিকা রাখা দরকার, সেটি আমি করব। বিশেষ করে আমার এলাকার হাজার হাজার নিরপরাধ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাব’-যোগ করেন বিএনপির এ নেতা।

ভোটে অনিয়ম, কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ এনে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। যেখানে বিএনপির ৬ জন সহ ঐক্যফ্রন্ট থেকে মোট ৮ প্রার্থী বিজয়ী হন। ভোট বর্জন করায় বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিজয়ীদের শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তবে জোটের সিদ্ধান্ত না মেনে ইতিপূর্বে শপথ নেন ধানের শীষের প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ও উদীয়মান সূর্য প্রতীকে বিজয়ী প্রার্থী মোকাব্বির খান। আর আজ শপথ নিলেন বিএনপি মনোনীত বিজয়ী প্রার্থী জাহিদুর রহমান।

বিএনপি থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমানের শপথের ব্যাপারে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি। তিনি বলেন, আমি মোবাইলে কোন মন্তব্য দিবনা, থ্যাঙ্কইউ (ধন্যবাদ)।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বিডি২৪লাইভকে বলেন, জাহিদুর রহমান দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গেছে। তার ব্যাপারে আর কিছুই বলার নাই। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিনিয়র নেতারা মিটিংয়ে বসে যে সিদ্ধান্ত আসে তাই করা হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিতরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নিলে তারা ‘গণদুশমন’। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তিনি এ কথা বলেন।

গয়েশ্বর বলেন, দলের সিদ্ধান্ত, দলের আদর্শ এবং নেত্রীকে জেলখানায় রেখে কেউ যদি শপথ নিয়ে থাকে বা ভবিষ্যতে নেয়, তারা জাতীয়তাবাদী দলের শক্তির সঙ্গে চলার যোগ্যতা রাখে না। তারা হলো গণদুশমন এবং জনগণই তাদের বিচার সময়মতো করবে।

বিএনপি নেতার শপথর বিষয়ে জানতে চাইলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বিডি২৪লাইভকে বলেন, তিনি দল বিরোধী কাজ করেছে। যুগে যুগে গণ-শত্রুর জন্ম হয় তার মধ্যে সে তার নাম লেখিয়েছে। তিনি এখন ঘৃণার পাত্র হয়ে হয়ে গেছেন।

তার ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানতে চাইলে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, তার ব্যাপারে দল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেবে। তিনি বিএনপি এবং জাতীয় এক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্তের বাইরে কাজ করেছেন। আমরা আগে থেকেই বলে আসছি ৩০ ডিসেম্বর কোন নির্বাচন হয়নি, ভোট হয়ে হয়েছে ২৯ ডিসেম্বর। এটা একটা প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আমরা এই নির্বাচনকে প্রত্যাক্ষ্যান করেছি। বিএনপি এবং জাতীয় এক্যফ্রন্টের নির্বাচিতদের শপথ না নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিএনপি নেতারা বলেছেন দলের নির্বাচিত কেউ শপথ নিবে না। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নিয়েছেন জাহিদুর রহমান এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমি বলিনি কেউ শপথ নিবেনা। যারা একথা বলেছে তাদের কাছ থেকে মন্তব্য নেন।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: