হঠাৎ হাসপাতালে মাশরাফির অভিযান, দিশেহারা ডাক্তার-নার্স!

প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:২৯ পিএম

খেলোয়াড়ি জীবনে যেমনি নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য খেলেন, তেমনি জনপ্রতিনিধি মাশরাফিকে নড়াইলবাসী দেখলো সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রে। জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগদানের আগে দুদিনের নির্বাচনী এলাকায় সফরে মাশরাফি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন হাসপাতালকে।

২৫ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) দুপুর সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টানা ২ ঘন্টা নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে ঝটিকা সফর করেন ম্যাশ। নারী ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীদের সাথে কথা বলে তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের সমস্যা শোনেন। ওই সময় পুরো হাসপাতালে মাত্র একজন ডাক্তারের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি।

সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে মাত্র ২ জন নার্স দেখে তাদের ডিউটির ব্যাপারে খোঁজ নেন। জানতে পারেন হাসপাতালে পর্যাপ্ত নার্স থাকলেও ২-১ জন নার্স দিয়েই বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিচালিত হচ্ছে।

ঘটনা শুনে তাৎক্ষণিক নিচে নেমে এসে নার্সিং সুপারভাইজারদের খোঁজ করেন মাশরাফি। নার্সদের কক্ষে তালা দেখতে পেয়ে টেলিফোনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। এসময় একজন সুপারভাইজারের ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং অপরজনের ফোন খোলা থাকলেও রিসিভ করেননি।

রোগীদের অনুরোধে হাসপাতালের বাথরুম ও তার পরিবেশ নিজে দেখেন এবং মোবাইলে ছুবি তুলে নেন। কয়েকটি বাথরুমের দরজা ভাঙ্গা এবং দূর্গন্ধ তাকে অত্যন্ত বিব্রত করে তোলে। তিনি এ ব্যাপারে জানার জন্য আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারকে ফোন করতে বলেন। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বিথী খাতুন এসময় অফিসে উপস্থিত থেকে মাশরাফির নানা প্রশ্নের জবাব দেন। মাশরাফি জানতে পারেন, হাসপাতালের চিকিৎসক সংকট থাকলেও নার্সের কোনো সংকট নেই। এই মুহূর্তে ৭৩ জন নার্স রয়েছে ওই হাসপাতালটিতে।

এরপর মাশরাফি পুনরায় দোতলায় এসে ডাক্তারদের অবস্থান জানতে চেয়ে হাজিরা খাতা দেখেন। হাজিরা খাতায় সার্জারী চিকিৎসক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা.আকরাম হোসেনের ৩ দিনের অনুপস্থিতির প্রমাণ পেয়ে ছুটির আবেদন দেখতে চান। পরে জানতে পারেন ছুটি ছাড়াই সেই ডাক্তার ৩ দিন অনুপস্থিত!

এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে টাইগার ক্যাপ্টেন প্রথমে রোগী সেজে ওই চিকিৎসককে ফোন করলে তিনি রোগীকে অর্থাৎ মাশরাফিকে রবিবার হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে বলেন। এ সময় নিজের পরিচয় দিয়ে মাশরাফি ডাক্তারকে বলেন, ‘এখন যদি হাসপাতালের সার্জারী প্রয়োজন হয় তাহলে সেই রোগী কী করবে?’ এরপর সেই ডাক্তারকে তার কর্তব্যর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দ্রুত এলাকায় ফিরে আসার নির্দেশ দেন তিনি।

দুই দিনের সফরের শেষ দিন শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) মাশরাফি নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, সততা স্টোর, ডিজিটাল হাজিরা শুভ উদ্বোধন করেন। ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নাকসী মাদ্রাসা বাজারের মসজিদের কাজেরও উদ্বোধন করেন তিনি। পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা হোস্টেলের উদ্বোধনও করেন মাশরাফি।

শুধু তাই নয়, নড়াইল জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে জেলাপর্যায়ের কর্মকর্তা ও সুধীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মাশরাফি। ওই সময় তিনি বলেন, নড়াইলের উন্নয়নে মাস্টার প্ল্যান করেছি। আমরা একটি পরিকল্পিত মডেল জেলা গড়তে চাই। ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। পৌরসভার উন্নয়নে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন নদীতীরবর্তী এলাকায় ভাঙনরোধে কাজ করে চলেছি।

বিডি২৪লাইভ/আরআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: