মাশরাফির উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠিতে যা রয়েছে!
নড়াইল সদর হাসপাতালে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফির ঝটিকা অভিযান নিয়ে কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যকে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
যে অভিযানের ভিডিও পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও এ নিয়ে প্রতিবেদন হয়। এ ঘটনায় মাশরাফি যেমন প্রশংসিত হচ্ছেন, আবার সমালোচিত হচ্ছেন।
মাশরাফির এই অভিযান নিয়ে ফেসবুকে একটি ‘খোলা চিঠি’ লিখেছেন নাগরিক টিভির প্রধান নির্বাহী আব্দুন নূর তুষার।
বিডি২৪লাইভ’র পাঠকদের জন্য নিম্মে তুলে ধরা হল:-
‘প্রিয় ম্যাশ, মাশরাফি! ১১ জনের দলে ৪ জন নিয়ে ক্রিকেট খেলতে রাজি হবেন? তাহলে ২৭ জনের জায়গায় ৭ জন দিয়ে হাসপাতাল চলে কিভাবে সে প্রশ্ন সংসদে করেন!
প্রশ্ন করেন ৩০০ বেডের হাসপাতালে ১ হাজার ৮০০ রোগী ভর্তি করলে, ডাক্তার নার্স কেন ছয়গুণ বেশি নিয়োগ দেয়া হয় না। স্টোরে গিয়ে প্রশ্ন নয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন হাসপাতালে স্টোরগুলো কি যথাযথভাবে ওষুধ সংরক্ষণের জন্য মানসম্মত?
ম্যাশ, আন্তর্জাতিক নিয়মে যে কোনো স্টেডিয়ামে খেলা চলাকালীন দর্শকদের জন্য ডাক্তার নার্স এমনকি নেবুলাইজার, অ্যামবু ব্যাগ, ডিফিব্রিলেটর থাকতে হয়। মিরপুর স্টেডিয়ামে কোথায় সেই ডাক্তার বসেন, ডি ফিব্রিলেটর আছে?
আশা করি, আগামীতে খেলার আগে মাঠে এগুলো নাই কেন সেটা ক্রিকেট বোর্ডে জিজ্ঞাসা করে, সেই ভিডিও ভাইরাল করবেন!
‘মেরুদণ্ডহীন ডাক্তার সমাজকে’ ওএসডি করা যতো সোজা, রোগীর জন্য সেবা নিশ্চিত করা ততো সোজা না। আপনার জেলা হাসপাতালে কার্ডিওলজিস্ট আছে, তার জন্য সব যন্ত্রপাতি আছে কিনা প্রশ্ন করেন।
বল ছাড়া ক্রিকেট খেলতে পারবেন? তাহলে আধুনিক দুনিয়ায় চিকিৎসার জন্য কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন এবং পেস মেকার বসানোর যন্ত্রপাতি আছে আপনার হাসপাতালে? সেটা জানতে চান। না থাকলে, কার্ডিওলজিস্ট থাকা আর তার ছবি দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা একই কথা।
অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা (এসি) আছে সেটায় হেপা ফিল্টার আছে? সেন্ট্রাল মেডিকেল গ্যাস সাপ্লাই?
খেলার জন্য আপনাকে কি বল-ব্যাট দেয় ক্রিকেট বোর্ড?
প্রশ্ন করেন, কার্ডিওলজিস্ট যে বিশেষ কার্ডিয়াক স্টেথো দিয়ে রোগীকে পরীক্ষা করে সেটা কি সরকার দেয়? সরকার প্রেসকিপশন লেখার কাগজ দেয়? সরকারি আউটডোর স্লিপে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) নাম্বার থাকে? জায়গা আছে সব ওষুধের নাম লেখার? কলম দেয়? ডাক্তারের নাম ও নাম্বার ছাড়া সকল প্রেসক্রিপশন কিন্তু অবৈধ।
এভাবে অসম্মান, অপমান সয়ে, ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরামগিরি করে ডাক্তারি করাটা পুরো ডাক্তার সমাজের একটা বিরাট ফাইজলামি। সকলকে ওএসডি করে, দানের গরু (ডিজি) অফিসে ন্যস্ত করে দেন। জাতি ফাজিলদের হাত থেকে রক্ষা পাক।
ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক, একটা অপ্রিয় কথা বলি।
আপনি বেতন নেন খেলায় জেতার জন্য, উইকেট পাওয়ার জন্য। তারপরে দুই চারটা টুর্নামেন্টে রানার-আপ হয়ে বেতনের অতিরিক্ত প্লট পান, কোটি টাকা এক্সট্রা পান। তাহলে বেতন নেন কি খেলার মাঠে যাওয়া-আসা করার জন্য?
চাবকায়া ছাল তুলে ফেলেন ডাক্তারদের। কিন্তু একটু প্রশ্ন করেন। মায়ের পেটের মধ্যে গুলি খাওয়া শিশুকে বাঁচালে কোন ডাক্তার কিন্তু প্লট উপহার পায় না। হাজার টাকা এক্সট্রা পায় না।
কারা গোলাগুলি করেছিল, সেটা পত্রিকায় দেখে নেবেন। না হলে মাগুরার সাকিব আল হাসানকে জিজ্ঞাসা করবেন। তাদের কি বিচার হয়েছে, সে প্রশ্নও করবেন।
প্রশ্ন করেন, বিনা অপরাধে শারীরিকভাবে আক্রান্ত একজন চিকিৎসকও কি বিচার পেয়েছেন?
চিকিৎসক কর্মস্থলে যান না, সেটার জন্য নিয়মানুযায়ী শাস্তি হবে, প্রতিকার হবে, হোক। কিন্তু তাকে ধমকানো তো সরকারি বিধান নয়। প্রশ্ন করেন, সবার ডিউটি আট ঘণ্টা। সপ্তাহে ৫ দিন। চিকিৎসক কেন ৬ দিন? কোন সরকারি আইনে এটা করা হচ্ছে?
ডাক্তারদের অন্যায় থাকলে সেটার শাস্তি হোক। কিন্তু এলাকার লোককে তো স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে। তাই প্রশ্ন করতেই হবে। উত্তরও দরকারি। ডাক্তার কোনো ফেরেশতা না। কিন্তু সবখানে অনিয়ম রেখে হাসপাতালকে শুধু স্বর্গোদ্যান বানানো সম্ভব না।
আল্লাহ আপনাকে আরো বড় করুক। এত বড়, যাতে আপনি একদিন এসব প্রশ্ন করতে পারেন সংসদে।’
প্রসঙ্গত, নড়াইলের-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা গত ২৫ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে ঝটিকা সফর করেন। এ সময়ে তিনি নারী ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের সমস্যার কথা শোনেন। ওই সময় পুরো হাসপাতালে মাত্র একজন ডাক্তারের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তিনি। পরে সেখানকার চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়।
তাদেরকে বিনা অনুমতিতে হাসপাতালে অনুপস্থিতির কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি এ চার চিকিৎসককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
চিকিৎসকরা হলেন- নড়াইল সদর হাসপাতালের সার্জারির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আখতার হোসেন, কার্ডিওলজির জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শওকত আলী ও ডা. রবিউল আলম এবং মেডিকেল অফিসার ডা. এ এসএম সায়েম।
গতকাল রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই চিকিৎসকদের ওএসডি করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
বিডি২৪লাইভ/এএস
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: