এক পেশা অন্য পেশাকে বিষিয়ে তুলছে?

প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৪৯ পিএম

প্রত্যেক মানুষকে সৃষ্টিকর্তা তার নিজস্ব গুণাবলী এবং স্বত্তা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যারা নিজেদের স্বতন্ত্র গুণাবলীকে আবিস্কার করতে পারেন তারাই পৃথিবীর বুকে অমর হন। নিজের পেশাকে বড় করে দেখা এবং অন্যকে ছোট করে দেখার মাঝে কোন কৃতিত্ব নেই। একে অপরের পেশাকে ছোট বলে তাচ্ছিল্য করা সুস্থ মানসিকতার পরিচয় বহণ করে না বলে জানান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও একুশে পদক প্রাপ্ত কলামিস্ট অধ্যাপক যতীন সরকার।

তিনি বলেন, অন্যকে ছোট করতে গিয়ে আমরা নিজেরাই ছোট হয়ে যাচ্ছি। একথা আমরা হরহামেশাই ভুলে যাই। এতে করে আমাদের দৈন্যতাই ফুটে উঠে। তবে এর কারণ হিসেবে বলতে হয়, আমাদের মাঝে পরমতসহিষ্ণুতার অভাব রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হরহামেশাই নানা রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকে। এবার তেমনি এক ঘটনা ঘটেছে, ফেসবুকে ডা. অশিত লিখেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায় ও বর্তমান সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্তুজাকে নিয়ে লিখেছেন, মাশরাফিটা কে? আমিনুল ইসলাম জুয়েল লিখেছেন, ‘নড়াইলের কোনো পাতি নেতাটেতা হবে আর কি!’ অশিত পুনরায় লিখেছেন, ‘সে রকমই তো ক্ষেতের মত এটিচিউড করল’। আমিনুল ইসলাম জুয়েল পুনরায় লিখেছেন, ‘কিছু বুঝে নাকি? সেভেন এইট পাশ মনে হয়।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ব্যক্তি জীবনে যেমন পরিবর্তন ঘটেছে সামষ্টিক ভাবেও পরিবর্তন হয়েছে বহুগুনে। এক ঘরে থেকেও কেউ কারও নয়! ভার্চুয়াল জগত কেড়ে নিয়েছে আবেঘ। অন্যের মত ও পথের প্রতি অশ্রদ্ধা দিন দিন বেড়েই চলছে বলে অভিযোগ করেছেন সমাজ বিজ্ঞানী ড. সাদেকা হালিম। আগের মত প্রাণচাঞ্চল্য কোন ভাব কারও মাঝে নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরকে নিয়ে খোলামেলা বক্তব্য দিতে দিতে এমন পর্যায়ে এসে পৌছেছে যা অসহনীয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. ইনামুল হক বলেন, পারিবারিক শিক্ষা এবং নৈতিক শিক্ষার অভাব যেখানে দৃশ্যমান সেখানে একে অপরের প্রতি বিরুপ মন্তব্য করবেন। এটা অবধারিত। এ থেকে মুক্তির উপায় হল আমাদের শিল্প ও সাহিত্য মনা হতে হবে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে এখন অবলীলায় একে অপরকে গালি গালাজ করতে পাচ্ছি। এটা মূলত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। যা এক সময় সমাজে খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

&dquote;&dquote;

এ বিষয়ে বলতে গিয়ে বাসস এর সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাঈদ বলেন, মানুষের মাঝে যখন নীতি- নৈতিকতার ঘাটতি থাকে এবং পারিবারিক মূল্যবোধের অভাব হয় তখনি একে অপরকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে ব্যতিব্যস্ত থাকে। এটা একজন মানুষের শুধু মাত্র হীনমন্যতাই প্রকাশ পায় না, তার রুচি বোধও ফুটে উঠে বলেই আমি মনি করি।

তিনি আরও বলেন, এক পেশার মানুষ অপর পেশার মানুষকে সহ্য করতে পারে না। মূলত প্রত্যেক মানুষ নিজেকেই বড় মনে করে। যেমন ধরুণ আপনি সমাজের মস্তবড় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার অথবা সরকারি আমলা, তারা কখনই সাংবাদিকদের ভালো চোখে দেখেন না! তারা বলে আপনারা তো বিশাল ক্ষমতাধর মানুষ, এবং সাংঘাতিক কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। আপনাদের বিশ্বাস নেই। আপনাদের সাথে সম্পর্ক থাকলে আর শত্রুর প্রয়োজন হয় না। মূলত একরক অপমান। এটা দেখেছি এবং এমন কথা প্রতিনিয়ত শুনছি। এটা ভাল কথা নয়। নিজের দুর্বলতা ডাকতেই তারা মূলত এসব কথা বলেন। কারণ সাধারণ মানুষ তাদের কিছু বলতে পারে না, যা কিছু একটু সাংবাদিকরাই গণমাধ্যমে প্রকাশ করে।

স্থানীয় সরকরের প্রকৌশলী আল নূর তারেক বলেন, আমি আমার পেশাগত জীবনে দেখতে পাচ্ছি, কেউ কারও প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। এটা মূলত এক ধরণের কপটতা বা মূর্খতাও বলতে পারেন। যেমন ধরুণ ডাক্তারের কাছে আমি চিকিৎসা নিতে গেলাম, তখন ডাক্তার যদি আমাকে ভালো করে না দেখে। আর আমি তখন খারাপ কথা বলে দিলাম। এটা মূলত ভালো কথা নয়। যখন আমরা সেবা নিতে যাই তখন তুচ্ছ ঘটনা ঘটলেই বলি ঐ পেশার মানুষ খারাপ, এটা অনাকাঙ্খিত।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক সানোয়ারুল আলম চৌধূরী বলেন, যার যে পেশার জ্ঞান আছে, তাকে সেই পেশায় কাজ করতে দিতে হবে। অযথা যা খুশি মন চায় লিখে দিলাম এবং করে ফেললাম তা কিন্তু পেশাজীবীর বৈশিষ্ট্য নয়। আমরা কী দেখতে পাই? অনেক সাংবাদিক না জেনেই ঢালাও ভাবে চিকিৎসক নিয়ে বিরুপ কথা লিখে দিচ্ছে, এতে করে সকলের মুখোমুখি অবস্থানে পড়তে হয়। এটা পেশাগত সাংবাদিকের কাজ নয়। জেনে বুঝে সংবাদ পরিবেশন করুন। তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আক্রোশের বশবর্তী হয়ে যা মন চায় তাই লিখে দিচ্ছেন আমার সাংবাদিক বন্ধুরা, এতে করে নিজের পেশার প্রতি মানুষের যেমন অশ্রদ্ধা তৈরি হচ্ছে, তেমন পেশার বদনাম হচ্ছে। এটা অনাকাঙ্খিত।

বিডি২৪লাইভ/এসবি/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: