বরিশালে নিম্নমানের গ্যাসের চুলায় বাজার সয়লাব

প্রকাশিত: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১০:৩২ পিএম

মিজানুর রহমান রনি,
বরিশাল প্রতিনিধি:

নিম্নমানের গ্যাসের চুলায় সয়লাব হয়ে গেছে বরিশালের প্রতিটি মার্কেট ও বাজার। কোনো ধরনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বাজারে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে এসব গ্যাসের চুলা।

সূত্রমতে, এসব নি¤œমানের গ্যাসের চুলা কয়েকদিন যেতে না যেতেই বিস্ফোরিত হয়ে ঘটছে একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা। শুধু অগ্নিকান্ডই নয়, সেই আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরন করছেন নারী-পুরুষ, শিশুসহ অনেকেই। আবার কেউ কেউ আহত হয়ে চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করে বেঁচে থাকছেন। এসব কারণে তছনচ হচ্ছে গোটা পরিবারের স্বপ্ন। অথচ নি¤œমানের এসব গ্যাসের চুলা বিক্রি বন্ধে নেয়া হচ্ছেনা কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। সর্বশেষ গত শুক্রবার ঢাকার উত্তরার একটি বাসায় গ্যাসের চুলা বিস্ফোরিত হয়ে বরিশালের একই পরিবারের পাঁচজন দগ্ধ হন। এরমধ্যে পরিবারের কর্তাসহ দুই পুত্র সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন ওই পরিবারের কর্ত্রী ও এক সন্তান। এ ঘটনাটি দেশবাসীর মনে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে। শুধু উত্তরায় নয়, সম্প্রতি সময়ে বাসায় গ্যাসের চুলা ও লাইন বিস্ফোরিত হয়ে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়েছেন কমপক্ষে ৩০জন।

বরিশাল নগরীর একাধিক চুলা মিস্ত্রির সাথে আলাপকালে তারা বলেন, বর্তমানে দেশের বাজারে কতো ধরনের গ্যাসের চুলা রয়েছে তার হিসাব নেই। এরমধ্যে বেশির ভাগ চুলাই নিম্নমানের। এছাড়া গ্যাসের চুলা ও পাইপের যেসব ফিটিংস রয়েছে সেগুলোও নিম্নমানের। তারা বলেন, বর্তমানে পাশের কয়েকটি দেশ থেকে নিম্নমানের চুলার ফিটিংস আনা হচ্ছে। ওইসব ফিটিংস বা পাটর্স দিয়ে গড়ে ওঠা চুলা প্রস্তুতকারী দোকান থেকে তৈরি করা হচ্ছে গ্যাসের চুলা। এরপর ওই চুলায় ভালো কোনো কোম্পানির নাম ও স্টিকার বসিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। গুনগত মান পরীক্ষা ছাড়াই দামে সস্তা হওয়ায় ক্রেতারাও তা সহজেই কিনে নিচ্ছেন। মিস্ত্রিরা বলেন, এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ একটি জিনিস মান পরীক্ষা না করে ব্যবহার করলে বিপদ আসতেই পারে। মিস্ত্রিদের ধারণা, নিম্নমানের চুলা ও ফিটিংস ব্যবহার, চুলা ও সিলিন্ডার ব্যবহারকারীদের অসচেতনতা, গ্যাস ব্যবহারের মতো উপযোগী রান্নাঘর না থাকা এবং সময়মতো চুলা ও লাইন চেক না করার কারণেই একের পর এক গ্যাসের চুলা বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানীর গ্যাসের চুলা রয়েছে। যার বেশির ভাগই অখ্যাত কিছু কোম্পানির তৈরি। এ ব্যাপারে বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্যাসের চুলা বা পাইপ বিস্ফোরণে অগ্নিকান্ডের ঘটনার জন্য কয়েকটি বিষয়কে দায়ী করা হয়। এরমধ্যে চুলা ব্যবহারকারীদের অসচেতনতা, নিম্নমানের চুলা ও ফিটিংস অন্যতম। তিনি আরও বলেন, গ্যাসের চুলা বা পাইপ ছিদ্র থাকলে সেখান দিয়ে গ্যাস নির্গত হতে থাকে। ওই গ্যাস রান্নাঘরে জমাট বাঁধতে থাকে। এরপর যখন রান্নাঘরে আগুন জালানো হয় তখনই আগে থেকে জমাটবাধা গ্যাসে আগুন ধরে বিস্ফোরণ ঘটে। এজন্য রাতে অবশ্যই চুলা পরীক্ষা করে ঘুমানো উচিত। সকালে চুলা জ্বালানোর আগে জানালা খুলে পরীক্ষা করে চুলা জালাতে হবে। পাশাপাশি মাসে অন্তত একবার ভালো মিস্ত্রি দিয়ে গ্যাসের চুলা, লাইন ও ফিটিংস পরীক্ষা করা উচিত। যারা সিলিন্ডার ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন বলেও ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: