হলুদ বর্ণে ছেয়ে গেছে পুরো মাঠ

৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৭:৪৩:০৪

ক্যালেন্ডারের পাতায় এখন মাঘ মাস। শীতের সকালে শিশির ভেজা ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো মাঠজুড়ে কেবল চোখে পড়ছে সরিষা ফুলের সমারোহ। ঝলমলে রোদে চকচকে সরিষা ফুলের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। প্রজাপতির দল ছুটে বেড়াচ্ছে ফুলে ফুলে। মৌমাছির আনাগোনা বেড়েছে। তাদের গুঞ্জনে মুখরিত সরিষার বিস্তৃত মাঠ। চোখ জুড়ানো হলুদের মেলা প্রকৃতিকে অপরূপ সাজে সাজিয়েছে নিখুঁত ভাবে। মাঠের পর মাঠ যেন শুধু সর্ষে ফুলের হলুদ হাসিতে রাঙিয়ে দিয়েছে পুরো গ্রাম।

কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া বাজার থেকে পিএমখালী সড়ক দিয়ে পৌনে এক কিলোমিটার গেলেই সরিষার হলুদ ফুলে সজ্জিত বিস্তীর্ণ ভূমি। যেদিকে চোখ যায় শুধু হলুদ রঙের মেলা। ক্ষেতের পর ক্ষেতে সরিষা ফুলের এমনই নয়নাভিরাম দৃশ্য। দেখলেই জুড়িয়ে যায় নয়ন। মন বলে সেই হলুদের মাঝে মিশে যেতে। সরিষার ক্ষেতে নিজের স্মৃতি ধারণ করতে দলবেঁধে ছুটে আসছেন স্কুলের শিক্ষার্থী, তরুণ, শিশু এমনকি নানা পেশার মানুষ। বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ছবি তুলছেন মোবাইল ও ক্যামেরায়।

আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সরিষার হলুদ ফুলের অগণিত মাঠ। দূর থেকে ভেসে আসছে সরিষা ফুলের মিষ্টি গন্ধ। মধু সংগ্রহে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমাছির দল। তাদের গুনগুন সুরে বিমোহিত চারদিক। মাঠে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে কৃষকের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি।

কৃষকরা জানান, আমন ধান কাটার পর কৃষি জমি অনেকটা অলস পড়ে থাকে। সেই ফাঁকা মাঠে সরিষা চাষ করে জমির উবর্রতা রক্ষার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ হয় কৃষকের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে এ জেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার দশটি উপজেলার ৯শ ২৫ হেক্টর জমিতে এ বছর সরিষার আবাদ হয়েছে। ধান বা অন্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা দিন দিন সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। চকরিয়ায় ৫০০ হেক্টর, পেকুয়া ১০০ হেক্টর, সদর ১০০ হেক্টর, রামুতে ১০০ হেক্টর এবং অন্যান্য উপজেলাসহ এবছর জেলায় মোট ৯২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।

তাদের মতে, দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণা বাস্তবায়নে এবার কৃষি অফিস সরিষা আবাদ বাড়াতে প্রণোদনার মাধ্যমে কয়েক হাজার কৃষককে বিনামূলে সরিষা বীজ ও সার দিয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকে পতিত জমিতে সরিষা চাষ করেছেন।

সদরের খরুলিয়া মাষ্টার পাড়া গ্রামের সরিষা চাষি সরওয়ার আলম জানান, এবার পাঁচ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত তার ক্ষেতে গুরুতর কোনো রোগবালাই নেই। আশা করছেন, এবার ভালো ফলন পাবেন।

তিনি আরও জানান, সেচ, সার, ওষুধ, শ্রমিক খরচসহ প্রতি বিঘায় তার খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মতো। ফলন ভালো হলে সব খরচ বাদ দিয়ে তার ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ হবে।

পিএমখালীর পাতলী গ্রামের কৃষক নজির হোসেন বলেন, আমি এ বছর আট বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। গত বছর ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকা করে প্রতি মন সরিষা বিক্রি করেছিলাম। মোটামুটি লাভ হয়েছিল। আমাদের কৃষি অফিস থেকে সহায়তা হিসেবে বীজ দেয়া হয়। তবে সেটা অল্প পরিমাণে। বাকি বীজ কিনতে হয়। বর্তমানে সরিষাগাছে প্রচুর পরিমাণে ফুল ধরছে। আশা করছি, এবার সরিষার ভালো ফলন হবে।

খরুলিয়ার হিন্দু পাড়া গ্রামের কৃষাণী ঝর্ণা শর্মা বলেন, আমি প্রতিবছর বাইরে থেকে ভালো বীজ সংগ্রহ করে সরিষা আবাদ করি। এই মৌসুমে তিনকাঠা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। বেশ ভালো ফুল ধরেছে আশা করি ভালো ফলন হবে।

রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ির শাহাদৎ বলেন, আগে ধান কাটার পর জমি পতিত পড়ে থাকতো। কিন্ত টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না এই কথা শোনে তিন কাঠা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। বৈরী আবহাওয়া ও পোকামাকড়ের উপদ্রব না হলে সরিষা বিক্রি করে ভালো লাভ হবে।

সদরের কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা সুপন বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের ভোজ্যতেলের চাহিদা ৪০% দেশে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। সরিষা আবাদ বাড়াতে প্রণোদনা কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। কৃষক যেন ভালো ফলন পায় সেলক্ষে কৃষি বিভাগের টিম মাঠে কাজ করছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।’

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ কবির হোসেন বলেন, ‘জেলায় এ বছর ৯২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষকের মাঝে ভালো মানের বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার সরিষার ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি। সাধারণত মাঘ ও ফাল্গুন মাসে কৃষকেরা ঘরে সরিষা তুলতে পারবেন।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।