
চট্টগ্রামের আলোচিত সেই মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন পলাতক আসামি কামরুল ইসলাম সিকদার মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার। সাক্ষ্যে তিনি বলেছেন, ‘মিতু খুন হওয়ার পর (১৯ কিংবা ২০ জুন, ২০১৬) একটি বিশেষ নম্বরে মুছাকে ফোন করেন বাবুল আক্তার। মুছাকে বলতে শুনি, স্যার আমি তো এটা করতে চাইনি, আমার ফ্যামিলির কোনো সমস্যা হলে আমি পুলিশের কাছে মুখ খুলব। কথা শেষে মিতু হত্যায় মুছা জড়িত কিনা জানতে চাই। জবাবে মুছা বলেন, বাবুল আক্তার তাকে মিতুকে খুন করতে বাধ্য করেছেন। ফোন নম্বরটি আমাকে দেয়নি মুছা।’
পান্না ছাড়াও সরোয়ার আলম ও মোখলেসুর রহমান ইরাদ নামে দুইজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে তাদের জেরা অব্যাহত রয়েছে। আজও তাদের জেরা অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার চট্টগ্রাম তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে এই সাক্ষ্য ও জেরা অনুষ্ঠিত হয়। সরোয়ার ও ইরাদ উভয়েই কক্সবাজারে গায়েত্রী (বাবুলের কথিত প্রেমিকা) যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেই ফ্ল্যাটের দারোয়ান ছিলেন।
সাক্ষ্যে স্বামী মুছাকে জীবিত না পেলেও অন্তত লাশটি ফেরত চেয়ে আদালতের কাছে আকুতি জানান পান্না। মিতু হত্যায় মুছা জড়িত থাকলে স্বামীর ফাঁসি হলেও তাঁর কোনো আপত্তি নেই বলে জানান তিনি। পান্নার দাবি, মুছাকে গুম করা হয়েছে।
সাক্ষ্য ও জেরায় পান্না জানান, পিবিআই কর্মকর্তা তৎকালীন ইন্সপেক্টর মহিউদ্দিন সেলিম ও ইন্সপেক্টর নেজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম নগরের কাঠগড় এলাকা থেকে মুছাকে আটক করে নিয়ে যান। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ। মুছা ২০০৩ সাল থেকে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। পরে বাবুল আক্তারের সোর্স হন।
বাবুল আক্তারের আইনজীবীর জেরায় পান্না বলেন, মুছা নিখোঁজ হওয়ার পর আর্থিক সংকটে পড়েন। চট্টগ্রাম শহর থেকে রাঙ্গুনিয়ায় মুছার গ্রামের বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে তিনি চলে যান। তবে পিবিআইর আর্থিক সহযোগিতা এবং ভাশুর সাকুকে মামলার চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার শর্তে বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি পান্নার।
নিখোঁজ মুছাকে পেতে পুলিশ কিংবা আদালতে কোনো আবেদন করেননি পান্না। তবে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছিলেন, বিএনপি করার কারণে মুছাকে গুম করা হয়েছে। ওই বক্তব্য স্বীকার করেছেন পান্না।
বাবুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরীর দাবি, মুছা নিখোঁজ হওয়াই স্ত্রী পান্নার আর্থিক সংকটের সুযোগ নিয়ে পান্নাকে বাবুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়েছে। সাক্ষ্য ও জেরায় নানা পরস্পরবিরোধী তথ্য দিয়েছেন পান্না।
সরোয়ার আলম সাক্ষ্যে জানান, তাঁরা কক্সবাজারের বাহারছড়া এলাকায় মহেশখালীর এমপি আশেকউল্লাহ রফিকের বাসায় সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করতেন। সেই বাসায় ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তা গায়েত্রী ম্যাডাম থাকতেন। বাবুল আক্তারকে ওই বাসায় একবার আসতে দেখেছেন। গায়েত্রীকে নিয়ে নিজের গাড়িতে করে চলে যেতেও দেখেছেন। তবে বাবুল আরও কয়েকবার গায়েত্রীর বাসায় রাত কাটান বলে অন্য দারোয়ানরা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পিপি আবদুর রশিদ বলেন, বাবুলের নির্দেশে সোর্স মুছা মিতুকে খুন করেছেন। পান্না সাক্ষ্যে তা প্রমাণ করেছেন। জেরা অব্যাহত রয়েছে। আজও জেরা অনুষ্ঠিত হবে।
২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার ওআর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি করে ও ছুরিকাঘাতে মিতুকে হত্যা করা হয়।
সর্বশেষ খবর