বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর নানা আঙ্গিকের শতাধিক ছবি এঁকে মুজিবপ্রেমীদের মাঝে বিতরণ করে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রসংশিত হন তারিন সুলতানা ওরফে চারু তারিন। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের কাজী নজরুল ইসলাম লেন (কোর্টপাড়া) এলাকার একটি বাসা থেকে তারিনের (২৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা যায়, তারিন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বেতবাড়ীয়া গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে। আড়াই বছর আগে কুমিল্লার নবীন হোসেনের সঙ্গে তারিনের বিয়ে হয়। বিয়ের আগে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের এক বছর বয়সী একটি মেয়েও রয়েছে। কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তারা।
তারিনের মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে স্বামীর সাথে ঝামেলা হয়। ঘটনার এক পর্যায়ে বাসা থেকে বের হয়ে তার চাচার বাসা ভেড়ামারায় চলে যায়। কয়েকদিন পর স্বামী নবীন তারিনের বাবার কাছে ভুল স্বীকার করে তাকে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করে। এরপর তারিন কুষ্টিয়ায় স্বামীর সাথে চলে যায়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না তারিনের। বাবার কথা রাখার জন্য স্বামীর বাড়ি যায় সে। এর পর থেকেই পরিবারের ওপর অভিমান করে ফেসবুকে পোস্ট দিতে থাকে। মৃত্যুর আগে এক বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে তারিন নিজের ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, 'আমাকে মাফ করে দিস মা'
বুধবার মৃত্যুর আগ মুহূর্তে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একাধিক আবেগঘন পোস্ট করেন তারিন। সবশেষ পোষ্টে তিনি লেখেন, "আমার শেষ ইচ্ছা। আমার মৃত্যুর পরে আমার মুখ আমার মা বাবা এবং আমার হাসবেন্ডকে না দেখানো হোক এবং আমার লাশ আমার মা-বাবার বাড়িতে না নিয়েছে আমার দাদী বাড়ি নিয়ে আমার শেষ কাজটুকু করে আমার দাদীর কাছে আমার কবর দেয়া হোক।"
তারিনের সবশেষ পোস্ট দেখে তাৎক্ষনিক তার সাথে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। পরে শুশুর বাড়ির লোকজন জানান, তিনি গলাই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগ তাদের মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত তারিনের এক চাচা বলেন, সম্প্রতি তারিনের দাম্পত্য জীবন ভালো যাচ্ছিলো না। তার স্বামী প্রচুর অত্যাচার করতো। আমরা বিষয়টিকে সমাধান করারও চেষ্টা করেছি। তারিনকে তার স্বামী হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখে এখন বলছে আত্মহত্যা করেছে। ফেসবুকে পোস্টের বিষয়ে তিনি বলেন, তারিনের ফেসবুক থেকে তার স্বামী একাধিক পোস্ট করে যেন মানুষ বিশ্বাস করে সে আত্মহত্যা করেছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান জানিয়েছিলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হতাশায় ওই নারী আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। তদন্ত চলছে।
এরআগে, মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ৯০ দিনে শতাধিক ছবি এঁকে তা মুজিব প্রেমীদের মধ্যে বিতরণ করেন। ভারত-বাংলাদেশের অনেক লেখক তারিনের আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি বইয়ের প্রচ্ছদে ব্যবহার করেন। অল্প বয়সে ছবি এঁকে পুরস্কার ও স্বীকৃতির ঝুড়িও বেশ ভারী করে নিয়েছিলেন তারিন।
এছাড়াও ২০১৯ সালে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তিতে খুলনা বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন তারিন। ছবি এঁকে তারিন ইতোমধ্যে এসএম সুলতান, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসান পুরস্কার পেয়েছিলেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী তারিন রঙ-পেন্সিলের একজন শিল্পী হলেও কবিতা, অভিনয় ও বিতর্কতে পরিচিতি ছিলো তার।
আশরাফুল/সা.এ.
সর্বশেষ খবর