
দৃষ্টিনন্দন নকশা ও মডেল মসজিদের সৌন্দর্য প্রথম দেখায় যে কাউকে আকৃর্ষ্ট করলেও কয়েক মিনিটেই জন্ম দিবে তীক্ত অভিজ্ঞতার। কারণ দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ ঘেঁষেই রয়েছে ময়লা ফেলার আঁস্তাকুড়। এখানে নিয়মিত ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। উৎকট গন্ধের কারণে বিগ্ন ঘটে নামাজ ও কোরআন শিক্ষার। শুধু তাই নয় দূর দূরান্ত থেকে মসজিদ দেখতে আসা দর্শনার্থীদের তীক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। তবে এ নিয়ে যেন প্রশাসন বা স্থানীয়দের বলার বা দেখার যেন কেউ নেই। এতে করে মর্যাদা হারাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সাভার বাসীর জন্য উপহার মডেল মসজিদের।
মসজিদ শুধু নামাজ আদায় নয়, ইসলামি গবেষণা, সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহার করা মুসলিমদের ঐতিহ্য। কালের বির্বতনে ঐতিহ্য গুলো দেখা যায় না বললেই চলে। মসজিদগুলো এখন শুধু নামাজ আর শিশুদের প্রাথমিক আরবি শিক্ষার জন্যই ব্যবহার হয়। হারিয়ে যাওয়া সে ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সারাদেশের মত ঢাকার সাভারেও নির্মাণ করা হয়েছে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রাজালাখ ফার্ম এলাকায় কয়েক একর জায়গা নিয়ে দৃষ্টিনন্দন এ (বি) ক্যাটাগরির তিনতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদ ঘেঁষে থাকা উপজেলা ভূমি অফিসের ফাঁকা স্থানটি এখন ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তূপ। প্রতিদিন শতাধিক ভ্যান দিয়ে পৌর সভার অপসারিত ময়লা আবর্জনা ময়লা এনে ফেলা হচ্ছে এই স্থানে। মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের আবর্জনার স্তুপের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিঘ্ন ঘটাচ্ছে নামাজে। গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে ফেলার কারণে দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। কয়েক বছর ধরে একই স্থানে ময়লা ফেলা হলেও পরিষ্কার করা বা বর্জ্য অপসারণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন ও পৌরসভা। প্রায় সময় দুর্গন্ধ এত তীব্র হয় যে মসজিদের ভবনে বসে থাকাও দায় হয়ে যায়। দরজা-জানালা বন্ধ করেও দুর্গন্ধ এড়ানো যায় না। তবে ময়লা ফেলার সাথে প্রভাবশালীদের জড়িত থাকায় অনেকটা নিরবে চলছে সৌন্দর্যবর্জনের কাজ।
জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদফতরের আওতাধীন ওই মসজিদ টি ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ হয়। আশুলিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ফারুক হাসান তুহিনের নিজস্ব মালিকাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সনি এন্টারপ্রাইজ সাভার মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শেষ করে গত ২০২১ সালের উদ্বোধনের ঠিক একদিন আগে। এরপর থেকে মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়ানো হয়। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাসহ মসজিদে আছে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স পাঠাগার, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয়কেন্দ্র, পবিত্র হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা। গত২০২১ সালের ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে মসজিদের নামফলক উন্মোচন করেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এনাম। বর্তমানে মসজিদটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি হলেন সাভার উপজিলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
মহাসড়কের সাথে দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদ যেখানে প্রতিদিন শত শত মুসল্লি নামাজ আদায় করে। তার পাশে এভাবে আবর্জনার স্তুপ করা পছন্দ নয় সাভার পৌরসভার এক পরিচ্ছন্নকর্মীর। এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, এই স্থানটি একটি পুকুর ছিল। মসজিদের স্থানটিও একটি পুকুর অংশ ছিল। এখানে পৌর সভার নির্দেশে ময়লা ফেলে পুকুর ভরাট করা হয়। গত তিন বছর আগে এখানে মসজিদ নির্মাণ হয়। মসজিদের নির্মাণের পর কিছু দিন বন্ধ থাকলে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলের নির্দেশে পুনরায় আবর্জনা ফেলা শুরু হয়। আমাদের কিছু বলার নেই।
নামাজ পড়তে আসা স্থানীয় মুসল্লিরা জানান,উদ্বোধনের পর থেকে এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করতাম। কিন্তু ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে নিয়মিত নামাজ আদায় করা কঠিন হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী অন্য একটি মসজিদে নামাজ পড়তে হয়। মসজিদের পাশে এভাবে ময়লা ফেলে পরিবশে নষ্ট করে দিয়েছে। সেই সাথে সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দুর্গন্ধে বমি চলে আসতো।
এব্যাপারে কাউকে অবগত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকায় ময়লা ফেলার সাথে জড়িত প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি আছে যাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস নেই। যেনে শুনে কেউ বিপাকে পড়তে চায় না।
মডেল মসজিদের পাশে অস্থায়ী দোকানদার মিজানুর রহমান, তিনি এই মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি। দীর্ঘদিন ধরে এ পরিস্থিতি দেখছেন। তিনি জানান নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের অভিজ্ঞতার কথা,নামাজ পড়তে কষ্ট হয় দুর্গন্ধ আসে। সেই সাথে মশা মাছির উৎপাত সবসময় থাকে। জুম্মার দিনে সময় বেশি নিয়ে নামাজ পড়তে আসে সবাই। কিন্তু মুখে মাস্ক পড়ে বা কাপর পেচিয়ে মসজিদে থাকতে হয়। পরিবশে ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি তো আছেই।
এ বিষয়ে কাউকে অভিযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে কেউ অভিযোগ করবে না। সবাই ভয় পায়। এছাড়া অভিযোগ করার দরকার কি এ এলাকায় পৌর মেয়রের বাসা, তার ছেলে মসজিদ নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তারা যদি সমাধান না করে অন্য এলাকার কে এসে করবে?।
মডেল মসজিদের খতিবের দায়িত্বে থাকা বুলবুলের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি পরামর্শ দেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পরিচালনা পরিষদের কারও সাথে কথা বলতে। সে এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি নয়।
মসজিদের মুয়াজ্জিনের দায়িত্বে থাকা ইমাম হাসান বলেন, আবর্জনার কারণে মসজিদের ভিতর অতিরিক্ত সময় বসে থাকা কষ্টকর। এছাড়া মশার উৎপাত এতো বেশি যে কয়েল ও স্প্রে দিয়ে কমানো যায় না।
এব্যাপারে সাভার মডেল মসজিদের পাশে ময়লা ফেলার বিষয়টি জানতে পৌর মেয়র আলহাজ্ব মো: আব্দুল গণি বলেন, এটি আসলে আমাদের ডাম্পিং স্টেশন না। মূলত সাভারের বাজারের আশে পাশে ব্যবসায়ীরা ময়লা আবর্জনা ফেলে রেখে যায়। নিয়মিত আমাদের কর্মীদের দিয়ে পরিস্কার করা হয়। সন্ধ্যা বেলায় আবার তারা এই ময়লা আবর্জনা ফেলে যায়। মসজিদের পাশে ময়লা ফেলার বিষয়টি পরিবেশ জন্য ক্ষতিকর কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমি এতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি ময়লা সড়িয়ে নিতে। তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে।
সাভার উপজেলা ভূমি অফিসের নিজস্ব জায়গায় পৌর সভার ময়লা ফেলার বিষয়টি জানতে মুঠোফোনে সহকারি কমিশনার ( ভূমি) এস. এম. রাসেল ইসলাম নূর এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এবিষয়ে সাভার মডেল মসজিদের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজলো নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা এর আগেও ময়লা ফেলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু গভীর রাতে আবার ফেলে যায়। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি স্থায়ী ভাবে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য।
সর্বশেষ খবর