
‘ওই উত্তরা নামেন। মিরপুর আসেন; ওই মিরপুর আগারগাও আসেন।’ এভাবেই একটানা ডেকে চলেছে সে। সঙ্গে বাস যেন ছেড়ে না যায় এজন্য চালকের দৃষ্টি আকর্ষণে দরজায় হাত দিয়ে আঘাত করছে। কোমল গলা, নরম হাত। কিন্তু কোনোটাই থেমে নেই। যাত্রীদের বাসে তুলতে গলা ও হাত দুটোই চলছে সমান তালে।
আবার চলন্ত অবস্থায় কখনও বাসের দরজা এক হাতে চেপে ধরে শরীর ভাসিয়ে দিচ্ছে বাতাসে। যানজটে পড়লে অন্য গাড়ির ওপর পা তুলে দিচ্ছে। চাঞ্চল্যের কোনো কমতি নেই শিশু রাকিবের মাঝে। অথচ পালন করছে বড় দায়িত্ব। শনিবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকায় মিরপুরগামী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) একটি বাসে রাকিবের দেখা মিলে। মাত্র ১০ বছর বয়সের শাকিব ওই বাসের সহকারী (হেল্পার) দায়িত্ব পালন করছে। প্রায় ৫ বছর ধরে রাকিব কাজের সাথে জড়িত।
রাকিবের দেশের বাড়ি রংপুর। দুই ভাই এক বোনের পরিবার। মা বাসায় কাজ করেন। বাসের হেল্পারী করে জীবন কেমন চলছে জানতে চাইলে রাকিবের ভাষ্য, আমি প্রতিদিন নরমালি ৬০০-৮০০ টাকা ইনকাম করি। দিন যদি ভালো যায় তাহলে ১০০০ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করি।
শিশুদের বিআরটিসি বাসে কাজ করানো প্রসঙ্গে কথা হয় বাসটির কন্ডাক্টরের সাথে। তিনি বলেন, আমরা তাদের নিয়ে আসি। তাদের পরিবারের ভালোর জন্য কাজে লাগায়। দেখা যাচ্ছে আমি ভাড়া কাটতে উপরে গেলাম তখন একটা লোক লাগে। ওই পিচ্চিটা থাকলে লোক ডাকা সুবিধা হয়।
এ নিয়ে এক যাত্রীর সাথে কথা হলে। তিনি জানায়, খুবই খারাপ ব্যাপার। মাত্র ১০ বছরের একটি ছেলেকে এভাবে কাজ করানো মোটেই উচিত না। যেখানে অনেক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ কাজের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে সেখানে এতটুকু বাচ্চাকে কাজ করানোর কোনো মানেই হয় না।
উল্লেখ্য, শ্রম আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নগরের বিভিন্ন বাস ও লেগুনায় হরহামেশা শিশুদের দেখা যায়। এবার সেই চিত্র দেখা গেল সরকারি সংস্থা বিটিআরসির বাসেও। যদিও বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ২ নম্বর ধারার ৬৩ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, ১৪ বছর পূর্ণ করেনি এমন ব্যক্তি শিশু।
শ্রম আইন, ২০০৬-এ বলা আছে, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে কাজে নেওয়া যাবে না। ১৪ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত কাজে নেওয়া যাবে, তবে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নেওয়া যাবে না।
সর্বশেষ খবর