রাজধানীর বাড্ডার সোনা কাটারায় অবস্থিত রাশমনা আপন ঘর। আশ্রয়হীন মা-বাবা ও এতিম শিশুদের নিবাস এটি। হেলপ দ্যা চিলড্রেন ফাউন্ডেশন কতৃক পরিচালিত এ নিবাসে প্রায় ৪০ জন বৃদ্ধ ও এতিম শিশু থাকেন। এসব আশ্রয়হীন মানুষদের সঙ্গে শুক্রবার সারাদিন কাটিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাফিয়া খাতুনের তত্ত্বাবধানে বিভাগের চতুর্থ ও পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এই নিবাসে বসবাসরত বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য নানা রকমের খাবারের আয়োজন করেন। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি ভিন্ন ধরণের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এ ধরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
সৌরভ ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ম্যাম একদিন আমাদের বললেন পড়াশোনার পাশাপাশি একটু ভিন্ন কিছু করতে যেটা আমাদের চিন্তা-চেতনায় প্রভাব রাখবে। আমরা সবাই একদিন বৃদ্ধাশ্রমে যেয়ে তাদের সঙ্গে দিন কাটাতে ও তাদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেই। এর মাধ্যমে আমরা এসব মানুষের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা জানতে পারব এমন চিন্তা থেকে আমাদের ব্যাচের সবাই মিলে আমরা এ আয়োজন করেছি।
আরেক শিক্ষার্থী অন্তর হোসেন বলেন, আমরা আজ দুপুর থেকে সারাদিন এখানে কাটিয়েছি। বৃদ্ধ ও এতিম শিশুদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছি। আমরা সবাই মূলত চেয়েছিলাম একদিন এমন সহায় সম্বলহীন মানুষদের সঙ্গে কাটাতে, তাদের কষ্ট ও দুঃখ বুঝতে। এখানে এসে ১০৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ দাদুর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে যিনি কিছুদিন আগে তার একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছেন। অসহায় হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, এখানে এসে আমরা এক মুক্তিযোদ্ধাকে পেয়েছি। তার থেকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের অনেক গল্পও শুনেছি। এখানে যে শুধু সহায় সম্বলহীন মানুষরা আছেন তা নয়, এমন মানুষও আছেন যারা বেশ সামর্থ্যবান। একজনের সঙ্গে কথা হয়েছে যিনি সাবেক সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন। নিজের পরিবার ছেড়ে তিনি এখানে থাকছেন। তবে তারা এখানে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সমবয়সী বৃদ্ধ ও শিশুদের সঙ্গে তারা এখানে থাকতে ভালোবাসেন বলে আমাদেরকে জানান।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাফিয়া খাতুন বলেন, অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ভিন্নরকমের অভিজ্ঞতা দেয়ার ইচ্ছা থেকে আজ আমরা এখানে আসি। শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের মনুষ্যত্ববোধ, বিবেকবোধ থেকে বিচ্যুত না হয় আমাদের সেদিকে খেয়াল রাখা উচিৎ। আশা করি আমাদের শিক্ষার্থীদের আজকের এ অভিজ্ঞতা তাদেরে বাস্তব জীবনেও কাজে আসবে। ভালো নাগরিক হতে হলে আমাদের সবাইকে সমাজের সমস্যাগুলো কাছ থেকে উপলব্ধি করা প্রয়োজন।
রাশমনা আপন ঘর নিবাসের প্রতিষ্ঠাতা সাকিব হাসান শাওন বলেন, আমরা ছয়জন শিক্ষার্থী মিলে এই নিবাসটি পরিচালনা করি। 'ভালো কাজের হোটেল' প্রজেক্টের একটি অঙ্গসংগঠন হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে এটি। মূলত ওখানে যদি এমন কোনো ব্যক্তি আসে যাদের থাকার জায়গা নেই আমরা তাদেরকে এখানে নিয়ে আসি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর