• ঢাকা
  • ঢাকা, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ৫১ মিনিট পূর্বে
রফিকুল ইসলাম.
লেখক ও রাজনীতিবিদ
প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারী, ২০২৪, ০১:৪৬ দুপুর
bd24live style=

বৈদেশিক সম্পর্কের ভারসাম্যহীনতা, বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির বেহাল দশা

ফাইল ফটো

বাংলাদেশে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধীদলের রাজনীতি বিশেষ করে আন্দোলন-সংগ্রামের বেহাল দশার কারণ যদি আমরা বুঝতে চাই তাহলে সাম্প্রতিক একটি ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ৷ টানা চতুর্থবারের মতো একটি একপক্ষীয় ও কারচুপিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন৷ নির্বাচনের পরের দিনই ভারত, চীন, রাশিয়া, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন ব্লকের দেশগুলো শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে৷ আমরা জানি যে ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি দূরত্ব রয়েছে৷ 

শেখ হাসিনা যখন এই মেয়াদে ২০০৮ সালে ক্ষমতাসীন হন, তখনো পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না৷ ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমরা সেটা লক্ষ্য করলাম৷ এরপর ইমরান খান যখন ক্ষমতায় আসেন তখন থেকে আমরা একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম এবং তাদের মধ্যে একটা গুড আন্ডারস্ট্যান্ডিং ধীরে ধীরে তৈরি হতে লাগলো৷ এখানে দুইটা বিষয় কাজ করেছে বলে মনে করি৷ 

প্রথমত, রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে চীনের একটি অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হয়৷ এরকম একটা পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে চীনের যথেষ্ট দূরত্ব তৈরি হয়েছে৷ একটা সময় পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে চীন এবং পাকিস্তানের ভালো সম্পর্ক ছিল৷ কিন্তু তাদের একতরফা এবং হঠকারী বৈদেশিক নীতির কারণে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান এবং চীনের সম্পর্কটা থাকেনি৷ জামায়াতও তার রাজনৈতিক অক্ষমতায় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কহীন হয়ে পড়েছে৷ ফলে পাকিস্তানও ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগ মুখী হয়েছে৷ এখানে টুইস্ট হলো আঞ্চলিকভাবে পাকিস্তান ও চীনের চিরশত্রু ভারত শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন রেখেছে৷ ভারতের  নিরঙ্কুশ সমর্থনের কারণেই শেখ হাসিনা বাংলাদেশে তার জনসমর্থন না থাকা সত্ত্বেও নানান অপকৌশল এর মাধ্যমে বারবার ক্ষমতায় আসছেন৷ অর্থাৎ শেখ হাসিনাকে সমর্থনের ক্ষেত্রে বর্তমানে ভারত ও চীন একই পক্ষে অবস্থান করছে। পাকিস্তানের অবস্থানও বিপরীতমুখী নয়৷

পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক না হলেও সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির ভূমিকা সামনে আনা হয়৷ তিনি হলেন শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। পাকিস্তানের ডিপ স্টেটের সঙ্গে মিস্টার সালমানের সম্পর্কের কারণে শেখ হাসিনার সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে৷ বাস্তবতা হচ্ছে যে বিএনপি চীন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে তার স্টেইক হারিয়েছে৷ অথচ তাদের উচিত ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন উভয় দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখা৷      

       
মূলত ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ভারতের প্রত্যক্ষ ভূমিকায় ওয়ান ইলেভেন হয়, যেখানে  সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব ভারতের সহযোগীর ভূমিকায় ছিল৷ মূলত ওয়ান ইলেভেনের আগে বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় চীনের সঙ্গে তাইওয়ান ইস্যুতে বৈরী মনোভাব সৃষ্টি হয়, পরবর্তীতে বেশ কিছু ঘটনায় চীন আরো বেশি ক্ষুব্ধ হয়৷ অথচ আমরা জানি যে বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বাংলাদেশের দক্ষিণ—পূর্বমুখী কূটনীতির উপর জোর দিয়েছিলেন৷ ঐতিহাসিকভাবে বিএনপির সঙ্গে চীনের ভালো সম্পর্ক ছিল৷ অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেশটির দূরত্ব ছিল৷ শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ১৯৭৫ সাল নাগাদ চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি৷ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরেই চায়না এবং সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়৷ এরপর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সরকার থেকে শুরু করে বেগম জিয়ার ২০০১ সালে সরকার গঠন পর্যন্ত চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল৷ মূলত বিএনপির মধ্যে লুকিয়ে থাকা একটি ভারতপন্থী লবিং চীনের সঙ্গে সম্পর্কটা নষ্ট করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে৷ এক্ষেত্রে বিএনপি'র শীর্ষ নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা এবং দুর্বলতা একটি অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে৷ বিশেষ করে বেগম জিয়া যখন ভারতীয় পরিকল্পনায় রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেলেন, তার পরবর্তী সময়ে দলটির নেতৃত্ব চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি৷ একই বাস্তবতায় বিএনপি এবং জামায়াত পাকিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক দুর্বল করে ফেলেছে৷ অথচ দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই দুইটি দেশের সঙ্গেই তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা দরকার ছিল৷ কারণ এখানে ভারত হচ্ছে শেখ হাসিনার প্রধান খুঁটি, যে কিনা বার বার অবৈধভাবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে সহায়তা করেছে৷ অথচ সেই ভারতেরই প্রতিপক্ষ চীন এবং পাকিস্তান একইভাবে এখন শেখ হাসিনার পক্ষে অবস্থান করছে৷ এই যে একটি কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট এর মধ্যেও এসব দেশকে শেখ হাসিনা হাত করতে পেরেছেন, এটা শুধু তার নিজস্ব ক্রেডিট বলা যাবে না, এটা মূলত প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপি'র ব্যর্থতাকেই চিহ্নিত করে৷ 

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বিএনপির যে সম্পর্কের বাস্তবতা মানুষের মধ্যে বিরাজমান— এটা কি আসলে রিয়েল? বাস্তবে কিন্তু তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তা মনে হয় না। যুক্তরাষ্ট্র তার ইন্দোপ্যাসিফিক স্ট্রাটেজির কারণে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ আশা করেছিল বা এখনো আশা করে৷ সে কারণে তারা একটা ইনক্লুসিভ ইলেকশন সহ ওভারল ডেমোক্রেসি দেখতে চায়৷ কিন্তু বিএনপি একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে তার শক্তিমত্তা বা তার জোরালো উপস্থিতি বিভিন্নভাবে দেখাতে সক্ষম হয়নি৷ সে কারণে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে এখানে ক্যাপিটালাইজ করতে পারেনি৷ অন্যদিকে বিএনপি অতিরিক্ত যুক্তরাষ্ট্র নির্ভর হয়ে গেছে৷ তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয় যে আমেরিকা তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে৷ হয় তারা আমেরিকান পলিসি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে বা তাদের সে সক্ষমতা এখন আর নাই। এই কারণে তারা বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনি। 

এবং লক্ষ্যনীয় যে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব দলটিকে ভারতমুখী করে ফেলে৷ ভারতই তাদেরকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে পারে এরকম একটি সুবিধাবাদী অবস্থান বিএনপি নেয়। যার খেসারত সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি তাদেরকে আবারো দিতে হলো৷ আসলে রাজনীতিতে নীতি থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ আপনি যদি ক্ষমতার রাজনীতিতে মৌলিক অবস্থান হারিয়ে ফেলেন, তাহলে বন্ধুর কাছেও গ্রহণযোগ্যতা হারাবেন৷ যারা ঐতিহাসিক, আদর্শিক এবং স্ট্রাটেজিক বন্ধু, তাদের সঙ্গে যদি দূরত্ব তৈরি করে ফেলেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতার রাজনীতিতে আপনি পিছিয়ে থাকবেন৷ বিগত এক দশকেরও অধিক কাল ধরে বিএনপি এবং জামাতসহ বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সেরকমই একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে৷ এ থেকে উত্তরণ অবশ্যই সম্ভব৷ প্রথমত, তাদেরকে সস্তা সুবিধাবাদী অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ রাজনীতিতে সঠিক সময়ে সঠিক কথাটা বলতে হবে৷ মৌলিক বিষয়ে আপোস করা যাবে না৷ অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার—সার্বভৌমত্ব, ইসলামী মূল্যবোধ, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ফিলিস্তিনসহ সমগ্র মুসলিম উম্মার কল্যাণ সাধনের বিষয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে৷ তারা যদি সঠিক অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়, স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা গৌণ হয়ে যাবে৷ তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নির্ভর আওয়ামী ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতির বিপরীতে নতুন রাজনীতি দাঁড় করাতে হলে এসব মৌলিক বিষয়ে জোরালো ভুমিকা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই৷

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:


BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ [email protected]