ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নবীন শিক্ষার্থীকে উলঙ্গ করে রাতভর র্যাগিং এর অভিযোগ উঠেছে অন্য দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এসময় ভুক্তভোগীকে নাকে খত ও রড দিয়ে মারধর করা হয়। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষে (গণরুম) এ ঘটনা ঘটে। তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর কোন অভিযোগ দেয়নি ভুক্তভোগী। এদিকে শাখা ছাত্রলীগের মধ্যস্থতায় বিষয়টি সমাধান করে দেওয়া হয়। তাই অহেতুক কোন ঝামেলায় না জড়াতে অভিযোগ দিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী।
অভিযুক্তরা হলেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মো: সাগর ও উজ্জ্বল হোসাইন ও শারীরিক শিক্ষা বিভাগে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মুদিাস্সর খান কাফি। তারা সবাই শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী।
জানা যায়, গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা জুনিয়র শিক্ষার্থীদের পরিচয় জানার আসেন। পরিচয় জানার এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীকে র্যাগ দিতে থাকে। র্যাগিং এর একপর্যায়ে অভিযুক্ত তিনজন ভুক্তভোগীকে উলঙ্গ হতে বলেন। এসময় সে উলঙ্গ হতে অস্বীকৃত জানালে তার উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
নির্যাতনের একপর্যায়ে তাকে রড় দিয়ে আঘাত করতে থাকেন অভিযুক্তরা। পরে তাকে জোরপূর্বক উলঙ্গ করা হয় বলে জানান ভুক্তভোগী। এছাড়াও তাকে উলঙ্গ অবস্থায় হাত উঁচিয়ে টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয়। এবং দীর্ঘক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে রাখা হয় ভুক্তভোগীকে। রাত সাড়ে ১২ টা থেকে ভোর ৪ টা পর্যন্ত চলে এ অমানবিক নির্যাতন। পরে নাকে খত ও তার বিছানা সামগ্রী কক্ষের বাইরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগও তোলেন ওই ভুক্তভোগী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মী জানান, ঘটনার পরেরদিন দুপুরে জিয়া মোড়ে ছাত্রলীগ কর্মী হাফিজ, নাসুম আহমেদ মাসুমসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ভুক্তভোগীর কাছে মাফ চাওয়ায়। এসময় তারা অভিযুক্তদের চড়—থাপ্পড়ও মারেন। পরে দ্বিতীয় দফায় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী শাহিন আলম, নাসিম আহমেদ মাসুম এবং লিখন লালন শাহ হলের ১৩৬ নং কক্ষে ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্তদের নিয়ে বসে বিষয়টির মধ্যস্থতা করেন।
ভুক্তভোগীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গত বুধবার আমার সাথে এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তবে পরে হলের সিনিয়র ভাইয়েরা বিষয়টি মিটমাট করে দেয়। তবে মিটমাটের পর অভিযুক্তদের হলে দেখা যাচ্ছেনা।”
এঘটনায় মধ্যস্থতাকারী ছাত্রলীগ কর্মী নাসিম আহমেদ মাসুম বলেন, “ঘটনাটি মিটমাট হয়ে গেছে। আমি এই বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাই না।”
এদিকে বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত মোহাম্মদ সাগর বলেন, “এ রকম কোন ঘটনাই ঘটেনি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তাছাড়া আমি ওইদিন হলের বাইরে ছিলাম। পরে তিনি হলে থাকার কথা স্বীকার করলেও ওই কক্ষে ছিলেন না বলে জানান। ”
আরেক অভিযুক্ত মুদিাস্সর খান কাফিকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, “আমার হলে এ রকম কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই। তাছাড়া এরকম ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেছে কিনা তাও জানা নেই। ছাত্রলীগ কর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নাম দিয়ে কেউ যদি এমন ঘটনা ঘটায়, তাহলে সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে ছাত্রলীগকে জড়ানোর কোন মানে হয় না।”
এ বিষয়ে লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, “আমি আনঅফিসিয়ালি বিষয়টি জেনেছি। খোঁজ খবর নিয়ে আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। তবে ভুক্তভোগী এখনো কোন অভিযোগ দেয়নি। যদি অভিযোগ দেয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিবো।”
বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদত হোসেন আজাদ বলেন, “আমি বিষয়টি শুনেছি। ওই ছেলে আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের হওয়ায় ওই বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর ড. আমজাদ হোসেন বিষয়টি দেখতে বলেছি। এছাড়াও যেহেতু এটা হলের বিষয় হল প্রভোস্টকেও খোঁজ-খবর নিতে বলেছি। তিনি আমাদের কিছু জানালে অথবা ভুক্তভোগী জানালে ব্যবস্থা নিবো। হাইকোর্টেও নির্দেশের পর আমরা র্যাগিং নিয়ে খুব শক্ত অবস্থানে আছি।”
এর আগে, গত বছরের জুনে একই হলের একই কক্ষে এক শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিচার চেয়ে প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তাকে পুনরায় মারধর করা হয়। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে লিখিত অভিযোগটি উঠিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর