
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনটা ভালো হয়েছে কী খারাপ হয়েছে সেটা আমাদের বিবেচন্য বিষয় না। সামনে আরো অনেকগুলো নির্বাচন আছে, উপ-নির্বাচন, সেগুলোকেও খাটো দেখার অবকাশ নেই।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আরএফইডি'র নবনির্বাচিত কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ ও বিদায়ী কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন,ক্ষমতা নয় দায়িত্বটিই আমাদের গ্রহণ করতে হয়। ক্ষমতা শব্দটিকে যদি আমরা পরিহরা করতে পারি তাহলে দেশে সমাজ অনেক বেশি এগিয়ে যেতে পারে।গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে লম্বা বক্তৃতা দেওয়া প্রয়োজন নেই। অনেক সময় কিন্তু রাষ্ট্রের স্তম্ভগুলো কাজ করে না, তখন সবগুলো কাজ গণমাধ্যম একাই করে সমাজকে বাঁচিয়ে রাখে। যদি গণমাধ্যমে সেই জায়গায় যায় যে শূন্যস্থান…সেখানে এগিয়ে এলে জবাবদিহিতা আরো নিশ্চিত হয়।
তিনি বলেন,গণমাধ্যমকে আমরা পছন্দ করি না বা ঘৃনা করি। যখন আমরা প্রশংসা করা হয় তখন ভালো লাগে। কিন্তু আমাকে জানতে হবে প্রশংসা নয়, সমালোচনার জায়গায় সমালোচনা করতে হবে। সমালোচনার জায়গায় ছাড় দেওয়া যাবে না। এই সাহসী ভূমিকা গণমাধ্যমের পালন করতে হবে। এটাই গণমাধ্যমের ভূমিকা। দেশের গণমাধ্যমের প্রতি যথেষ্ট আস্থাশীল। অনেক পেপার পত্রিকা পড়ি, চ্যানেলগুলো দেখি-আমাদের গণমাধ্যমের ভূমিকা যে খুব নেতিবাচক তা বলা যাবে না। আমি তখনই ক্ষুব্ধ হয়ে যাই, যখন আমার বিরুদ্ধে কিছু থাকে। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, যে আমার বিরুদ্ধে বা সরকারের বিরুদ্ধে থাকলেও গণমাধ্যম সাহসী ভূমিকা পালন করবে।
সিইসি বলেন,অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গুরুত্ব আছে। বিশ্বের দিকে যদি দেখি ক্ষমতার যে শক্তি সেই শক্তি যে কত বড় শক্তি তা আমরা গাজাতে দেখেছি। গণমাধ্যম আমাদের জাগ্রত করে রেখেছে। আমরা অনেক সময় চোখের পানিও ফেলি। গণমাধ্যম যদি ব্লাকআউট করে দিতো তাহলে গাজাতে কী হচ্ছে আমরা জানতাম না।
তিনি আরও বলেন,নির্বাচনটা ভালো হয়েছে কী খারাপ হয়েছে সেটা আমাদের বিবেচন্য বিষয় না। সামনে আরো অনেকগুলো নির্বাচন আছে, উপ-নির্বাচন, সেগুলোকেও খাটো দেখার অবকাশ নেই।তৃণমূল পর্যায়ে নেতৃত্ব গড়ে তোলার যে দায়িত্ব,সেখানে যদি নেতৃত্ব যদি শক্তিশালী না হয়, তাহলে জাতীয় পর্যায়েও নেতৃত্ব শক্তিশালী হবে না। তৃণমূলের সংস্থাগুলোয় নেতৃত্ব গড়ে তোলার প্রয়োজন আছে। সেখানেও গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে। সেখানে গণতন্ত্র কতটা কাজ করছে, কতটা কাজ করছে না, এগুলো তুলে আনতে হবে।
তিনি বলেন,বস্তনিষ্ঠতা, এটা খুব কাম্য। আরেকটা হচ্ছে অতিরঞ্জিত, এটাকে আমি মন্দভাবে দেখিনা। অতিরঞ্জনের মধ্যে সাহিত্যের উপদান থাকে, কিন্তু বিকৃত হলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। মিস ইনফরমেশন, অতিরঞ্জন হতে পারে। কিন্তু বিকৃত হলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়।জনগণকে সচেতনা করা যে কমিশন কতটা দায়িত্ব পালন করেছে। সরকার কতটা সহয়াতা করছে কী কি করছে না, এগুলো প্রচার হলে সচেতনা ও দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে।
সিইসি বলেন,নির্বাচনকে যদি আরো স্বচ্ছ, উন্নত করা যায় সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করা প্রয়োজন। আমার সহকর্মীরা চমৎকার কাজ করেছেন, একটা জেলার মধ্যে তিনটা পর্বে নির্বাচন করি, ভরতে যেসন তিন মান ধরে হয়, আর এখানে যদি তিনটা পর্বে হয়, একই জেলায়;তাহলে একই ডিসি, একই পুলিশ সুপারের অধীনে নির্বাচন করা যায়, তাহলে নির্বাচনকে অনেক সহজ করে দেবে। একই জেলার মধ্যে হওয়ার কারণে প্রশাসনের জন্য এটা সহজ হয়ে যাবে।ভোটার আসছে কিনা, সহিংসতার সম্ভাবনা আছে কি-না, এমন বিষয় পর্যালোচনা করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যায়। উপজেলায় এটা প্রয়োগ হচ্ছে। এটার বেশ কিছু ইতিবাচক হতে পারে।
উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন,দলীয় প্রতীক না থাকলে এটার ভালো দিক আছে। এটার তো জাতির জন্য নয় এলাকার জন্য। স্থানীয় সরকার ছোট একটা এলাকায় পরিচালিত হয় সীমিত ক্ষমতা নিয়ে। পাকিস্তানেও বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে একটা অংশগ্রহণমূল নির্বাচন হয়েছে। দলীয় প্রতীক নিয়ে না ছাড়াই হোক, আমরা চাই সুন্দর হোক।
তিনি বলেন,আমরা সব সময় বলেছি যে নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক আছে। জাতির উদ্দেশ্যে শেষ ভাষণেও বলেছিলাম বিএনপির জন্য সময় এখানো ফুরিয়ে যায়নি। ফোনে কথা বলেছি, ডিও লেটার দিয়ে আহ্বান জানিয়েছি। আহ্বানে সাড়া দেয়নি। আমরা খুবই খুশি হতাম এটা নিদ্বির্ধায় বলেছি, যদি নির্বাচনটাও আরো অনেক বেশি অংগ্রহণমূলক হতো, তাহলে ভোটার উপস্থিতি আরো বেশি হতো। নির্বাচনটা সার্বজনিন হোক। বড় বড় দল অংশ না দিলে নির্বাচন অবৈধ হবে না। তবে নির্বাচনের ন্যয্যতা, গ্রহণযোগ্যতা খর্ব হবে। আমরা যদি সঠিক সমন্বয় ঘটাতে পারি নির্বাচন আরো সুন্দর হবে।
আমরা আশা করোব সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বিশিষ্ট জনরা যদি স্থানীয়দের ভালবাসেন, জনপ্রিয়তা আছেন, তারা যে দলেরই হোক তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।
ভোটার উপস্থিতি স্থানীয় নির্বাচনে সব সময় অনেক বেশি। সেখানে প্রার্থীর সঙ্গে ভোটারের সম্পর্ক অনেক নিবিড়। আমরা আশা করবো আগামী আরো নির্বাচন হবে, স্থানীয় নির্বাচনে আপনারা দৃষ্টি রাখুন।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় এটা আদায় করে নিতে হয়। স্বাধীনতা সব সময় থাকবে না। তবে স্বাধীনভাবে কাজ করলেও সব সময় চাপ আসবে তা নয়।গণমাধ্যমের ভূমিকাকে আরো শক্তিশালী কিভাবে করা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। উন্নত বিশ্বে শাসকদের ঠিক জায়গায় রাখতে গণমাধ্যমে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। গঠণমূলক সামলোচনা করার করার কথাও বলেন।
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর