
যৌথ জরিপকে কেন্দ্র করে সিলেটের গোয়াইনঘাটে নলজুরি খাসিয়া হাওর এলাকার সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সঙ্গে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) উপজেলার নলজুরির খাসি হাওর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ জরিপ বিভাগ, ঢাকা ও সিলেটের ম্যাজিস্ট্রেট, সার্ভেয়ার এবং বিজিবি সদস্যরা গোয়াইনঘাটের নলজুরি খাসিয়া হাওর ১২৭৮-১২৭৯ পিলারের সীমান্তবর্তী খেলার মাঠে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে জরিপ কাজে যান। নির্ধারিত সময়ে দুই দেশের যৌথ সার্ভে দল সীমান্ত চিহ্নিতকরণে কাজ শুরু করেন। সার্ভে কাজে সহযোগিতা করে বিজিবি ও বিএসএফ। তবে সার্ভে চলাকালে বিএসএফের কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে খাসিয়া হাওর এলাকায় প্রবেশ করলে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদ জানান।
পরে খবর পেয়ে স্থানীয় অধিবাসীরা ভিড় করেন। একপর্যায়ে জনতা উত্তেজিত হয়ে জরিপ করতে বিএসএফকে বাধা দেয়। বিজিবিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিএসএফকে বাধা প্রদান করে। বিজিবি উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে সীমান্ত থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে। পরে সাধারণ জনতা ও বিজিবির বাধার মুখে বিএসএফ পিছু হটে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই যুগ পূর্ব থেকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের দখলে থাকা ৬-৭ একর ভূমি বার বারই দখল করতে উদ্যত হয়েছিল। ওই সময় বিজিবির সঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকরা প্রতিবাদ করলে তারা পিছু হটে। গত ১৭ বছর ধরে ওই স্থানে বিএসএফ আসেনি। ১২৭৮-১২৭৯ পিলারের মধ্যে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলার মাঠে ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির আলোকে সীমান্ত চিহ্নিতকরণ করে পিলার বসানো হয়েছিল। ওই পিলারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়ে খেলার মাঠসহ আরও কিছু কৃষি জমি। এরপর থেকে বাংলাদেশ অংশের লোকজন এই ভূমি দখলে রেখে ব্যবহার করে আসছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ করে সেখানে যান বিজিবির কর্মকর্তারা। সঙ্গে জরিপ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও। ভারতের অংশ থেকে বিএসএফ ও জরিপকারক কর্মকর্তারা আসেন। তারা খেলার মাঠে যাওয়ার পর স্থানীয় কয়েকজন লোক সেখানে কৌতূহল বশত যান।
স্থানীয়রা আরও জানান- সার্ভের শুরুর সময় ভারতের বিএসএফ জওয়ানরা খেলার মাঠকে তাদের ভূমি বলে দাবি করে। এতে আপত্তি জানান উপস্থিত থাকা বাংলাদেশ অংশের সীমান্তবর্তী খাসিয়া হাওর, আমসত্বপুর, নলজুড়ি গ্রামের বাসিন্দারা। এ নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে তর্ক বাধে তাদের। এ সময় বিএসএফ জওয়ানরা বাড়াবাড়ি করলে স্থানীয় লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে ওই এলাকায় অবস্থান নেন। পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় বিজিবি ও বিএসএফ’র জওয়ানদের পরামর্শে সার্ভে টিমের সদস্যরা ওই এলাকা ত্যাগ করে চলে যান।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘এ ধরনের একটি ঘটনার সংবাদ পেয়েছি। যতটা জানতে পেরেছি সীমান্তে যৌথ সমীক্ষা চলছিল। তবে কে বা কারা সমীক্ষা চালিয়েছে তা আমার জানা নেই। এই সমীক্ষার বিষয়ে আমাদের কেউ জানায়নি।
সিলেটের ৪৮ বিজিবি’র ব্যাটেলিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল নাজমুল হক জানান, বিজিবিকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের জরিপকারকরা ওই স্থানে গিয়েছিলেন। ওপার থেকে ভারতের জরিপকারকরাও এসেছিলেন। স্থানীয় লোকজনের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয়ায় আমরা জরিপকারকদের ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি।
তিনি বলেন, ছিট মহল চুক্তির আওতায় ভূমি নিয়ে নতুন করে সার্ভে চলছে। এজন্য সার্ভে টিমের সদস্যরা ওই এলাকায় গিয়েছিলেন।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর