পিকনিকের চাঁদার টাকা না দিতে পেরে অভিমানে ফারজানা আক্তার নামে স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যার পাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনা ঘটে (৫ মার্চ) মঙ্গলবার কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল ইউনিয়নের উত্তর আনন্দপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে। খবর পেয়ে বুড়িচং থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানায়, উপজেলা বাকশীমূল ইউনিয়নের আজ্ঞাপুর গ্রামের মোরশেদা বেগম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক শিক্ষা সফর পিকনিকের জন্য জনপ্রতি শিক্ষার্থীদের ১২শত টাকা চাঁদা নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ। এই চাঁদার টাকা জমার শেষ নির্ধারণ করা হয়েছিল মঙ্গলবারে।এই দিন সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে মা--বাবার কাছে ধার্যকৃত পিকনিকের ১২শত টাকা চায় ফারজানা আক্তার। তার মা-বাবা নির্ধারিত চাঁদার টাকা মেয়েকে না দিতে পেরে ঘরের ভিতরে স্কুলে যাওয়া আগে ফারজানা আক্তার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সে স্থানীয় মোরশেদা বেগম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী এবং উত্তর আনন্দপুর গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হকের ২য় স্ত্রীর মেয়ে।
সরেজমিনে গিয়ে নিহতের মা সালেহা বেগম কথা বলে বললে তিনি কান্নার সুরে বলেন, তার মেয়ে ফারজানা আক্তার স্কুলের ধার্যকৃত চাঁদার জন্যই আত্মহত্যা করেছে। তিনি আরো জানান,বাড়ির অন্যের কাছ থেকে ৬০০ টাকা হাওলাত করে তাকে দেন।
তারা বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক জানান, ৬০০ টাকা অন্যের কাছ থেকে ধার করে এনে স্কুলে যাওয়ার আগে ফারজানা আক্তার দেন এবং আরো ৬০০ টাকা বাজার থেকে দুধ বিক্রি করে দিবেন। তিনি বাজারে যাওয়ার পর খবর পায় তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এই ওভারের সময়ে একসাথে ১২০০ টাকা না থাকায় তাই মেয়েকে সম্পূর্ণ টাকা দিতে ব্যর্থ হয়।
নিহতের খালা প্রতিনিধিকে জানান, তার বোন জামাই ফজলুল হক সম্পূর্ণ টাকা না দেয়ায় ফারজানা অভিমানে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে তীরের সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করে। পরিবার মনে করছিলেন ফারজানা স্কুলে যাওয়ার জন্য স্কুল ড্রেস পড়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। স্থানীয়রা জানান স্কুল ছাত্রীর ফারজানার মৃত্যুর জন্য শিক্ষক ও পরিবারের লোকজন দায়ী।
এছাড়াও এলাকার সচেতন নাগরিকরা জানান, বর্তমানে বিভিন্ন স্কুলে বড় বড় অনুষ্ঠান করে ও খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করে কিন্তু স্কুলের বার্ষিক শিক্ষা সফরের শিক্ষার্থীদেরকে চাঁদার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. তৌহিদুল ইসলাম ও সভাপতি সাবেক মাস্টার নুরুল ইসলাম চেয়ারম্যান বলেন,প্রতি বছরে বার্ষিক শিক্ষা সফরে যাওয়ার জন্য চাঁদা নির্ধারণ করা হয়। শিক্ষার্থীরা সবাই যেতে হবে বাধ্যবাধকতা নেই। স্কুল ছাত্রীর ফারজানা আত্মহত্যা করেছে এমন খবর পেয়ে শিক্ষক ও কমিটি বৃন্দ বাড়িতে গিয়ে ওই ছাত্রীর মৃত্যু প্রকৃত কারণ জানার চেষ্টা করছেন।
খবর পেয়ে বুড়িচং থানা ওসির নির্দেশনায় এসআই রেজাউল করিম জানান, ঘরের ভিতর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার জন্য পুলিশের তদন্ত চলমান।
বুড়িচং উপজেলার ইউএনও সাহিদা আক্তার বলেন, স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যার খবর শুনেছি, আজকাল ছেলে-মেয়ার অতি ইমোশনাল হয়ে এধরণের ঘটনা ঘটায় যা করা উচিত না। এমন ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে শিক্ষক ও অভিভাবকরা সচেতন থাকতে হবে।স্কুলের চাঁদা নির্ধারণ ক্ষেত্রে আমি অবগত নই।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর