ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে কক্সবাজারের রামু সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইনকে অপসারণ চেয়ে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনের পর ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) থেকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইনকে অপসারণ না করে ‘নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে’ তাকে সাতদিনের ছুটি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু সাধারণ শিক্ষকরা বলছেন, কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় মোহাম্মদ হোছাইনের ব্যাপারে তদন্ত কার্যক্রম কতটা নিরপেক্ষ হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
জানা গেছে, গত সোমবার দুপুরে কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুপ্রতীম বড়ুয়াকে প্রধান করে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হক, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমম জহির ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক হুমাইরা আকতারকে সদস্য করে চারজনের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) এক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে কক্সবাজার সৈকতের কবিতা চত্বর এলাকা সংলগ্ন ঝাউবাগানে শিক্ষার্থীদের কাছে ধরা পড়েন রামু সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইন।
ভুক্তভোগী নিজেই শিক্ষকের ঘৃণ্য কাজের প্রতিবাদ ও তার মুখোশ উন্মোচনে সহপাঠীদের খবর দেন। সে সুবাদেই ছাত্র-ছাত্রীরা ঝাউবাগানে নিয়ে মোহাম্মদ হোছাইনকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন।
পরে তাকে উত্তমমধ্যম দিয়ে কক্সবাজার আদালত পাড়ায় নিয়ে আসেন তারা। সেখানে আইনজীবীর সামনে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান তিনি। এসব ঘটনার পর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ ও ছাত্রীকে কেলেঙ্কারিতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে মোহাম্মদ হোছাইনের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে গত রোববার সকালে কলেজ প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করে রামু সরকারি কলেজের কয়েকশ শিক্ষার্থী। এসব বিষয়সহ শিক্ষার্থীরা কলেজের অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
পরে গত সোমবার শিক্ষকদের নিয়ে জরুরি সভা ডাকেন অধ্যক্ষ। এতে উপস্থিত ছিলেন ২৫-৩০ জন শিক্ষক। তারা সবাই যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় কলেজের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে দাবি করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
সভার ব্যাপারে পরে কয়েকজন শিক্ষক গণমাধ্যমকে জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক হোছাইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এ সভা ডাকা হলেও দুই ঘণ্টার আলোচনায় অধ্যক্ষের বক্তব্যে সৃষ্ট ঘটনার বিচারের দাবিতে কেন মানববন্ধন করা হয়েছে? কারা করেছে? এ কর্মসূচির পেছনে কার কার ইন্ধন রয়েছে? কে ব্যানার করেছে? কে পোস্টার করেছে- বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে।
তারা আরও জানান, গণমাধ্যমে কেন কথা বলেছেন জিজ্ঞেস করে শিক্ষকদের কাছেও এর কারণ জানতে চেয়েছেন অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম। তারা যুক্তি তুলে ধরলে অধ্যক্ষ তাদের শাসান এবং এ ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে সবাইকে নিষেধ করা হয়।
নাম না প্রকাশের শর্তে এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, প্রথমত, হোছাইন অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ। দ্বিতীয়ত, কমিটি যেটি করা হয়েছে এটি অধ্যক্ষের পকেট কমিটি। দুই ঘণ্টা ধরে তিনি মিটিং করলেও কমিটির কোনো শিক্ষকের মতামত নেওয়া হয়নি। নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় গঠিত কমিটির প্রধান করা হয়েছে একজন পুরুষ শিক্ষককে। আবার কমিটিতে একজন নারী রাখা হয়েছে তাও প্রভাষক পদমর্যাদার। সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, অধ্যক্ষের অনিয়ম দুর্নীতির তদন্তের সময় হোছাইন তার পক্ষে ছিল। এখন হোছাইনকে বাঁচাতে চান অধ্যক্ষ। সব মিলিয়ে এই কমিটি কতখানি নিরপেক্ষ থাকতে পারবে সেটি নিয়ে আমি সন্দিহান।
তদন্ত কমিটির প্রধান সুপ্রতীম বড়ুয়া বলেন, আমরা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও আমাদের গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। সেভাবেই কমিটি কাজ করছে। ভিকটিম, ভিকটিমের অভিভাবক, অভিযুক্ত শিক্ষক, আইনজীবীসহ এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আমরা কথা বলবো।
সামগ্রিক বিষয়ে প্রশ্নে অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম বলেন, কেলেঙ্কারির ঘটনার শতভাগ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত কার্যক্রম চালানোর জন্য তদন্ত কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একজন শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এখানে সরকারি বিধির বাইরে যাওয়া কোনো ধরনের সুযোগ নেই। অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচানোর প্রশ্নই আসে না।
নিজের বিশ্বস্ত শিক্ষকদের নিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, কলেজের সবচেয়ে সিনিয়র এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) থেকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর