আম্মান ছেলেটা ম্যালাদিন ধরে বিভিন্ন সময় বিরক্ত করছে, থ্রেট দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধমকি দিচ্ছে। বিভিন্ন মানুষকে হ্যারেজ করে, ছেলে একাধারে সাংবাদিক, রাজনীতি করে যার কারণে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ দিলে ও উত্ত্যক্তকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। এমনটিই বলেছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তীকা। বিডি২৪লাইভ-এর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধির কাছে একটি ভয়েস রেকর্ড এবং কয়েকটি মেসেজ হাতে এসেছে।
ভয়েস রেকর্ডে শোনা যাচ্ছে অবন্তীকা বলছে, ঔ ছেলেটি হচ্ছে পলিটিক্যাল, দেখা গেল মানুষজন তো পলিটিক্যাল হলে সে তার দিকেই ফেভার করে। যদি এইরকম হয় যে, এই ছেলেকে তো কিছুই বলবে না, ছেলেটা একাধারে সাংবাদিক, রাজনীতি করে এবং বিভিন্ন জনকে হেনস্তা করে। এছাড়াও, আত্মহননের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, মেসেঞ্জার এবং হোয়াটসঅ্যাপের কয়েকটি গ্রুপে এমন অভিযোগ করেন অবন্তিকা।
আত্মহত্যার দুই মাস আগে গত ১৬ জানুয়ারি 'খাদিজার মুক্তি চাই' হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেয়া শেষ মেসেজে ফাইরুজ অবন্তিকা লিখেছেন, প্রক্টর অফিসে উত্ত্যক্ত করার লিখিত অভিযোগ দেয়ার ২ মাস পার হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, উত্ত্যক্তকারী আমার ডিপার্টমেন্টের পলিটিক্যাল হওয়ায়। এটার রিমেডি কেউ বলতে পারেন আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমনিতেও কখনো মূল্য ছিল না এনাদের (প্রক্টরিয়াল বডির)। আর কত অজাচার করবে এত সিভিয়ার একটা ইস্যুতে তাদের কোনো স্টেপ নাই, ছেলে পলিটিক্যাল বলে। এখানে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা বানের জলেই ভেসে আসছি বলে ওরা মনে করে, এজন্য এত ইনজাস্টিস।' এতে অবন্তিকা উত্ত্যক্তকারী আম্মান সিদ্দিকীকে রাজনীতিক বলে উল্লেখ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আম্মান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি সাথে জড়িত ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিকে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সাথে জড়িত। যার কারণে তার সাথে প্রক্টর অফিসের একটা সখ্যতা গড়ে উঠে।
এদিকে আম্মানসহ উত্ত্যক্তকারী বাকি সহপাঠীদের কয়েকজন ছাত্রলীগের কর্মী হওয়ায় গত বছরের নভেম্বরে অবন্তিকার দেয়া অভিযোগ আমলেই নেননি সাবেক প্রক্টরিয়াল বডি বরং এর আগে অবন্তিকার নামে আম্মানসহ তার সহপাঠীরা অভিযোগ দিলে অবন্তিকার মা-বাবাকে ডেকে এনে মুচলেকাসহ হেনস্তা করা হয়।
এ ঘটনায় অবন্তিকার মা তাহমিনা বেগম বলেন, অবন্তিকা বলতো আম্মান পলিটিক্যাল তার সাথে আরেকজন মেয়ে আছে লাকি। তাকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখাতো। লাকি ছিল সবকিছুর নাটের গুরু। তাদের সঙ্গে রাফি, রিমি, মাহিমা, গিতাসহ ৮-১০ জন ছিল। লাকি, রিমিসহ আরো কয়েকজন হলে থাকে। তাদের অত্যাচারে আমার মেয়ে হলে থাকতে পারেনি। আমার মেয়ে খুব মেধাবী। প্রথম থেকে তৃতীয় পর্যায়ে রেজাল্ট ছিল। রাফি প্রথম হবে বলে মানসিক হেনস্তা করে রেজাল্ট খারাপ করতে চাইত। মানসিক ট্রমার ভেতর রাখত। অবন্তিকার মৃত বাবাকে নিয়ে নানা কটু কথা বলত। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অত্যাচারে আমার মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি ২০-২৫ দিন হলো প্রক্টরের দায়িত্ব পেয়েছি। ঘটনাগুলো অনেক পুরোনো। তবুও একটি একটি করে সব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। প্রক্টর অফিসে সবাই সমান।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন, কালকে দুপুর ১২ টায় আমাদের একটা মিটিং আছে সেখানে ভয়েস রেকর্ড এবং মেসেজ গুলো নিয়ে আসবেন সেখানে আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখবো।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, অবন্তিকার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। তদন্তে প্রমাণিত হলে যে-ই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় অবন্তিকার মা তাহমিনা বেগম উল্লেখ করেন, লাকি আক্তার লাকি ও রাফিসহ আরো কয়েকজন আমার মেয়ের ওপর নজর রেখে বিভিন্নভাবে মানসিক নিপীড়ন করতে থাকে। লাকি ছাত্রী হলে থাকেন। ছাত্রী হলেও ছাত্রলীগের প্রভাব দেখিয়ে অবন্তিকাকে মানসিক নিপীড়ন করা হতো। যার কারণে তিনি হলে থাকতে পারেননি বলে জানান অবন্তিকার মা।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর