নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামছাড়া মূল্য বৃদ্ধির ফলে দেশের জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সিন্ডিকেটগুলোর সক্রিয়তার ফলে এসব পণ্যের দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে জিনিসপত্রের দাম হয়ে উঠেছে আরো উত্তাপ। দেশের অন্যান্য জায়গার মতো একই চিত্র দেখা যাচ্ছে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শেখপাড়া বাজারেও। এখানকার বাজারের চড়া মূল্যের প্রতিনিয়ত ভুক্তভোগী হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এমনকি ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী অন্যান্য বাজারের তুলনায় শেখপাড়া বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রয়ের অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস সংলগ্ন আর কোনো বাজার না থাকায় শিক্ষার্থীদের এ বাজারের উপরই নির্ভর করতে হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের জিস্মি করে এ চাহিদার সুযোগ নিচ্ছেন এ বাজারের বিক্রেতারা। শিক্ষার্থীদেরও নিরুপায় হয়ে কেনাকাটা করতে হয়। শেখপাড়া বাজারের মাছ-মুরগি, শাক-সবজি, ফল ও ইফতার সামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সাথে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য বাজারের রয়েছে বড় ব্যবধান। এই অস্থিতিশীল দাম বৃদ্ধির পেছনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তদারকির অভাবকে দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেখপাড়া বাজার বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন একমাত্র বাজার। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ও পার্শ্ববর্তী মেসগুলোতে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য এ বাজারের উপর র্নিভর করতে হয়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ডাইনিংগুলোর জন্য এ বাজার থেকে কেনাকাটা করতে হয়। আর এ চাহিদার সুযোগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের থেকে স্বাভাবিক দামের চেয়ে অতিরিক্ত আদায় করেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ , ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী বিকল্প বাজার না থাকায় স্থানীয় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করেন। তবে বেশি দাম হলেও নিরুপায় হয়ে এখান থেকে পণ্যসামগ্রী কিনতে একপ্রকার বাধ্য শিক্ষার্থীরা। ফলে শিক্ষার্থীরা ভালো খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনিতেই নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাস শেষ না হতেই পকেট ফাঁকা হয়ে যায়। এর মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে চড়া দামে কিনে আরো বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাস থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার উত্তরের হরিনারায়ণপুর বাজার ও দেড় কিলোমিটার দক্ষিণের মদনডাঙ্গা বাজারের সঙ্গে শেখপাড়া বাজারের পণ্যের দামে রয়েছে বড় ব্যবধান। একইদিনে শেখপাড়া ও পার্শ্ববর্তী দুই বাজার ঘুরে দেখা যায়, পার্শ্ববর্তী দুই বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। একইদিনে তা শেখাপাড়ায় বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা। এছাড়াও অন্য জাতের মুরগি ক্ষেত্রেও ২০ থেকে ৩০ টাকা ব্যবধান দেখা গেছে।
শেখপাড়া বাজারে অন্য দুই বাজারের তুলনায় ৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বড় আপেল বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকায়। একইভাবে কেজিপ্রতি দাম বাড়িয়ে মাল্টা ৬০ টাকা, আঙ্গুর ৪০ টাকা, কমলা ২০ টাকা ও বেদানা ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন শেখপাড়া বাজারের বিক্রেতারা।
এছাড়াও শেখপাড়া বাজারে প্রতি হালি লেবু ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই ধরনের লেবু অন্য বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এছাড়া আলু, বেগুন, টমেটো, শশাসহ অন্য সবজি জাতীয় পণ্যে প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা ব্যবধান দেখা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অনেক আগ থেকে শেখপাড়া বাজারের সিন্ডিকেটগুলো বাজারের দাম ওঠানামা করাচ্ছে। আশপাশে বেশ কয়েকটা গ্রাম ও বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ বাজারের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় সিন্ডিকেট দমানোও মুশকিল।
জোবায়ের হোসেন নামের মেসে অবস্থানকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল অবস্থা। ক্যাম্পাস সংলগ্ন একমাত্র বাজার হওয়ায় শেখপাড়া বাজারে অত্যধিক দাম রাখে। আমরা চাই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবে।
শেখপাড়া বাজার কমিটির সভাপতি হাকিম মোল্লা বলেন, অতিরিক্ত চাহিদা থাকায় আমাদের বাজারে সবকিছুর দাম অন্য বাজারের তুলনায় বেশি। বিষয়টি নিয়ে আমরাও খুব অতিষ্ঠ।
এ বিষয়ে শেখপাড়া বাজারের বিক্রেতাদের দাবি বেশী দামে পাইকারি পণ্য কিনতে হয় বলে বেশী দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তারা অন্য বাজারগুলোর চেয়ে অধিক দামের বিষয়টি নিয়ে কোন সদুত্যর দিতে পারেননি। তবে অপর দুই বাজারের দোকানিরা শেখপাড়া বাজারে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেন। তাদের দাবি, ক্যাম্পাস সংলগ্ন হওয়ায় শেখপাড়া বাজারে চাহিদা বেশী থাকে। এজন্য বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দামে পণ্য বিক্রি করে। অনেকে আমাদের গ্রামের বাজার বাদ দিয়ে শেখপাড়া বাজারে গিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহ জেলার সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের বলেন, শেখপাড়া বাজার নিয়ে আমাদের কাছে আগেও অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে নিয়েছি। খুব দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। বাজার কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে এটি সমাধান করা যায় এ নিয়ে আমি প্রক্টরের সঙ্গে আলোচনা করবো।
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর