পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটিতে মৌসুমের শুরুতে বড়, মাঝারি বা ছোট আকারের পাহাড়ি তরমুজ টসটসে এবং স্বাদে মিষ্টি ও রসালো ফলে বাজার ভরপুর থাকলেও দাম বেশ চড়া। কারণ, এবার তরমুজের বীজ ভালো না হওয়ায় এবং বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ে বেশিরভাগ তরমুজের বীজ নষ্ট হওয়ায় ফলন কম হয়েছে এবং যা ফলন হয়েছে তা বেশির ভাগই তরমুজের আকার ছোট ছোট। টাকা-পয়সা খরচ করে এবং দীর্ঘদিন শ্রম দিয়ে কম ফলন হওয়ায় দুশ্চিন্তায় চাষিরা। ভঙ্গ হয়েছে চাষির স্বপ্ন, এবার গুণতে হচ্ছে লোকসান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের বনরূপা বাজারের সমতাঘাটে কাপ্তাই হ্রদের তীরে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে চাষিরা বিভিন্ন উপজেলা থেকে তরমুজ আনছেন বিক্রি করার জন্য। তবে তাদের কপালে দেখা গেছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কারণ জানতে চাইলে তাঁরা জানান, এবার বীজ জলে যাওয়ায় এবং বিভিন্ন রোগবালাইয়ের কারণে তরমুজের ফলন ভালো হয়নি।
রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা তরমুজ চাষি আবু সৈয়দ জানান, এক একর জমিতে ৩ লাখ টাকা খরচ করে তরমুজের চাষ করেছেন। তবে এবার তরমুজের বীজ ভালো না হওয়ায় তাঁর জমিতে ফলন খুবই কম হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ পর্যন্ত তিনি তরমুজের ক্ষেত থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো তরমুজ বাজারে বিক্রি করেছেন। এতে তাঁর লোকসান হবে আড়াই লক্ষ টাকার মতো। যার কারণে এবার স্থানীয় বাজারগুলো চড়া দামে তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
লংগদু উপজেলার মাইনী এলাকার বাসিন্দা তরমুজ চাষি পঙ্কজ চাকমা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজের ফলন কম হয়েছে। তরমুজের ক্ষেতে বিভিন্ন রোগ-বালাই দেখা দেয়ায় বেশিরভাগ তরমুজের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এবার যা ফলন হয়েছে তা থেকে তাদের খরচ হওয়ায় অর্থ পুষিয়ে নিতে পারবেন না। এতে তাদের প্রচুর লোকসানে পড়তে হবে।
রাঙ্গামাটি শহরের বনরূপা বাজারের সমতাঘাট এলাকার পাইকারি তরমুজ ব্যবসায়ী দীপংকর চাকমা জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর তরমুজের দাম বেশি। কারণ,এ বছর তরমুজের বীজ ভালো না হওয়ায় এবং বিভিন্ন রোগে তরমুজের চারা নষ্ট হওয়ায় ফলন ভালো হয়নি। তিনি আরো জানান, বেশি দাম হওয়ায় তাদের তরমুজ কিনতে বেশি দামে। ফলে ক্রেতাদের নিকটও চড়া দামে তরমুজ বিক্রি করতে হয়। ছোট তরমুজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং মাঝারি ও বড় তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে, বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর রাঙ্গামাটির উৎপাদিত তরমুজ পাইকারি দরে ক্রয় করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলায় তরমুজ বিক্রি করে তাঁরা বেশ লাভবান হতেন। তবে এবার ফলন কম হওয়ায় গত বছরের চেয়ে এ বছর রাঙ্গামাটির স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে বেশি দামে তরমুজ কিনতে হচ্ছে। ফলে এ বছর তাঁরা তরমুজ বিক্রি করে সুবিধা করতে পারবে না বলে জানান।
রাঙ্গামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, তরমুজ মূলত হচ্ছে হাইব্রিড বীজ। হাইব্রিড বীজের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে,বীজ যদি গুণগত মানের সঠিক না হয়, তাহলে রোপণ করলেও তরমুজ উৎপাদন করা সম্ভব। আবার বিভিন্ন রোগে আক্রমণও হতে পারে। এই বীজগুলো কৃষিবিভাগের নিয়ন্ত্রণে নেই। এটি চাষিরা বাইরের বিভিন্ন কোম্পানি থেকে আমদানি করে থাকে।
তিনি জানান, এবার লংগদু হটিকালচার সেন্টারেও কিছু তরমুজের চাষ করা হয়েছিল, সেখানেও ব্যাপকভাবে গোড়া পচা রোগে বীজ নষ্ট হয়েছে। এটির দুটি কারণ হতে পারে, প্রথমত ছত্রাক আক্রমণ করেছে,দ্বিতীয়ত বীজটি যতটুকু শক্ত থাকার কথা, ততটুকু শক্ত না হওয়ার কারণে বীজটি পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এই কারণে তরমুজের ফলন কম হয়েছে।
তিনি আরো জানান, গত বছর ২৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। তবে এ বছর তরমুজের চাষ হয়েছে ২৪৮ হেক্টর জমিতে। কিন্তু গত বছরের তুলনায়, এ বছর ফলন ভালো হয়নি এবং জেলার অনেক জায়গাতে গোড়া পচা রোগে তরমুজের বীজ নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি চাষিদের উদ্দেশ্য করে জানান, ভালো ফলন পেতে গেলে তরমুজ ক্ষেতে প্রচুর পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করতে হবে এবং সময় মতো সেচ দিতে হবে এবং প্রয়োজন মাফিক ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। তবে চাষিরা না জানার কারণে এগুলো করে না। বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে হলে বা ভালো মুনাফা অর্জন করতে হলে এগুলো জানতে হবে বলে তিনি জানান।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর