মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সাগরলতা বেষ্টিত লাল কাঁকড়া ও কাছিমের ভাস্কর্য। সামুদ্রিক প্রাণীকুলের বিস্ময়কর এবং অদ্ভুত সৌন্ধর্য্য এ সামুদ্রিক প্রাণী দুটির বিশাল ভাস্কর্য কক্সবাজারের মেরিনড্রাইভ সড়কের পেচারদ্বীপে মারমেইড বিচ রিসোর্টে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। সাগর পাড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে আকর্ষণীয় ভাস্কর্যের শৈল্পিক সৌন্দর্য অবলোকন করে বিমোহিত দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। পাশাপাশি সাগরলতা, লাল কাঁকড়া ও কাছিমের সুরক্ষা এবং সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাতে সচেতনতা বৃদ্ধির তাগাদা পাচ্ছে পর্যটকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, কক্সবাজার থেকে মেরিনড্রাইভ সড়ক হয়ে পেচারদ্বীপে অবস্থিত মারমেইড বিচ রিসোর্ট। সড়কের পশ্চিম পাশে সবুজ-শ্যামল প্রাকৃতিক পরিবেশে এ রিসোর্ট। নারিকেল গাছ, শিশু গাছ, কৃষœচূড়া গাছ, কাঠ গোলাপ, জবা ফুল সহ নানা প্রজাতির দেশীয় গাছপালায় সবুজ শ্যামল পরিবেশ। গাছ পালার ফাঁকে ফাঁকে নির্মল পরিবেশে ছোট ছোট কক্ষ। কাঠ, বাঁশ, ছন দিয়ে তৈরি ইক্যু রিসোর্ট। রয়েছে হরেক রকম পাখির কোলাহল। কাঠ, বাঁশ, ছন দিয়ে তৈরি সুসজ্জিত ক্যাফেতে এক সাথে ২৫০ জনের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। সী-ফুডের আইকনিক স্থান মারমেইড এর আরেক বৈশিষ্ট্য হলো দেশি-বিদেশি উন্নতমানের খাবার। যা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের খুবই প্রিয়।
এ রিসোর্টে বসেই একদিকে পাহাড় ও আরেকদিকে সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেন আগত পর্যটকরা। পাশাপাশি সাগরলতা বেষ্টিত লাল কাঁকড়া ও কাছিমের ভাস্কর্যের শৈল্পিকতা অবলোকন করে বিমোহিত হন আগত পর্যটকরা।
মারমেইড কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, মারমেইড এর স্বত্বাধিকারী আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ ২০০৫ সালে কক্সবাজারের কলাতলীতে যাত্রা শুরু করেন মিউজিক এন্ড সি-ফুড ক্যাফে নামে প্রতিষ্ঠান দিয়ে। অল্পদিনে গ্রাহকদের উত্তরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া এবং এতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় পার্শ্ববর্তী আরেকটি স্থানে পরিবর্তন করে মারমেইড ক্যাফে করেন। কাঠ, বাঁশ, ছন দিয়ে তৈরি এ ক্যাফেটিতে ১৫০ থেকে ২৫০ জন একসাথে বসে খাবার গ্রহণের সু ব্যবস্থা আছে।
২০০৯ সালে মেরিন ড্রাইভ সড়কের রেজু ব্রিজ সংলগ্ন পেচারদ্বীপে যাত্রা শুরু করেন মারমেইড ইকো রিসোর্ট। গাছ পালার ফাঁকে ফাঁকে নির্মল পরিবেশে মাটি, কাঠ, বাঁশ, ছন দিয়ে ছোট ছোট ২৫টি কক্ষ তৈরি করেন। সর্বোচ্চ ৩০ ফিট উচ্চতায় নির্মিত পরিবেশ বান্ধব নির্মল পরিবেশের এ ইকো রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্টে পরিবেশিত সি-ফুড সহ উন্নতমানের খাবার অল্পদিনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব ইকো রিসোর্ট স্থাপনের জন্য বাংলাদেশে একমাত্র প্রতিষ্ঠান মারমেইড ইকো রিসোর্ট এর স্বত্বাধিকারী আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ ২০১১ সালে লন্ডনে অ্যাওয়ার্ড পান।
দেশি-বিদেশি পর্যটকদের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৩ সালে পেচারদ্বীপে যাত্রা শুরু করেন আরেকটি রিসোর্ট, নাম; মারমেইড বিচ রিসোর্ট। রয়েছে ৩৫টি কক্ষ, সুইমিংপুল ও সু-পরিসর রেস্টুরেন্ট। মারমেইড বিচ রিসোর্টেই লাল কাঁকড়া ও কাছিমের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। ভাস্কর্য দুটির পাশে রয়েছে সাগরলতাও। এ ছাড়াও পেচারদ্বীপে মারমেইড ক্যাফে ও ব্যাংককিয়ান (অথেনটিক থাইফুড) নামে আরো ২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
মারমেইড এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সামুদ্রিক প্রাণীকুলের বিস্ময়কর এবং অদ্ভুত সুন্দর লাল কাঁকড়া ও কাছিম প্রাকৃতিকভাবে খুবই উপকারী। কাছিম সমুদ্রে ময়লা আবর্জনা ভক্ষণ করে পরিচ্ছন্ন রাখেন। কাছিম হাজার মাইল দুর থেকে কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলের বালিয়াড়িতে এসে ডিম পাড়েন। সামুদ্রিক কাছিম ২০০ মিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে সমুদ্রে বাস করছে সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে। অতি প্রাচীন এ প্রাণীর অনেক প্রজাতিই এখন বিলুপ্তির পথে।
অপরদিকে সাগরপাড়ের বালিয়াড়িতে লাল কাঁকড়া বসবাস। সৈকতে মনোমুগ্ধকর আলপনা আঁকেন কাঁকড়ার দল। যেন অবচেতন মনের কোনো শিল্পীর ক্যানভাস সদৃশ এ দৃশ্য। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তে সৈকতে ঝাকে-ঝাকে লাল কাঁকড়ার সমাহার অনিন্দ্য সৌন্দর্য মন্ত্রমুগ্ধ করে তুলে পর্যটকদের। এ লাল কাঁকড়া বিশে^র দ্বীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের আরেকটি ঐতিহ্য। জোয়ারের পানিতে বালিয়াড়িতে ভেসে আসা সামুদ্রিক মরা প্রাণী ভক্ষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছেন লাল কাঁকড়া।
পরিবেশের উপকারী এ অনিন্দ্য সুন্দর সামুদ্রিক প্রাণী লাল কাঁকড়া ও কাছিম রক্ষায় সচেতনতার জন্য এ দুটি ভাস্কর্ষ্য নির্মাণ করেন মারমেইড কর্তৃপক্ষ।
তিনি জানান, মারমেইড রট, সিমেন্ট, ইট দিয়ে স্থাপনা না করে মাটি, কাঠ, বাঁশ, ছন দিয়ে কুঁড়ে ঘর ধরনের কক্ষ (ইকো রিসোর্ট) তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি কক্ষের চারপাশে দেশীয় নানা প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের স্থান এখন মারমেইড। মারমেইড এ স্থানীয় জনশক্তিকে কাজে নিযুক্ত ও স্থানীয় মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনে নানা ভূমিকা রেখে আসছেন। এমনকি মানবিক সহায়তাও অব্যাহত রাখা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৩০০ জন কর্মকর্ত-কর্মচারীর মধ্যে ২৭০ জন (৯০ শতাংশ) স্থানীয় জনশক্তি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর