বৈজ্ঞানিকের উদ্ভাবিত নতুন নতুন প্রযুক্তি ও রাসায়নিক ফরমুলা ব্যবহার করে বিভিন্ন ফলমূল যেমন আগাম উৎপাদিত হচ্ছে, তেমনি নির্ধারিত সময়ের আগেই ‘রাইফেন’ নামক হরমোন জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে‘ হানিকুইন’ জাতের আগাম আনারসে চাষ করছেন পাহাড়ের কৃষকরা। আগাম ভালো ফলন পাওয়ায় এবং ভালো দামে বিক্রি করতে পেরে খুশি স্থানীয় কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটি শহরে বনরূপা বাজারের সমতাঘাটে সারি সারি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ‘হানিকুইন’ জাতের আনারসের ভরপুর। রসে টইটম্বুর সুস্বাদু ও বেশ মিষ্টি পাহাড়ি এই আনারস। বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত কৃষকরা পাইকারি ব্যবসায়ীর আশায় আনারস নিয়ে নৌকায় বসে আছেন এবং বিক্রিও করছেন। এছাড়াও বর্তমানে এ জাতের আগাম আনারসে ভরপুর রাঙ্গামাটির বাজারগুলো। তবে আনারসের আগাম ফলন ভালো হওয়ায় ন্যায্য দাম নিয়ে খুশি চাষীরা। বর্তমানে রাঙ্গামাটি শহরের বাজার গুলোতে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে আনারস। এছাড়াও শহরের বাইরে ঢাকা-চট্টগ্রামেও সরবরাহ হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত দেশীয় আনারসে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল আসে এবং আগস্ট মাসে আনারস পাকে। কিন্তু হানিকুইন আনারস জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে বাজারে আসা শুরু হয়েছে। হানিকুইন ‘জলডুপি’ হিসেবেও পরিচিত। চোখ সুচালো ও উন্নত। গড় ওজন প্রায় এক কেজি। পাতা কাঁটাযুক্ত ও পাটল বর্ণের। হানিকুইন বেশ মিষ্টি আনারস। মধুর মতো মিষ্টি বলেই এই নাম।
রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা চাষি স্মৃতি বিন্দু চাকমা জানান, এবার তিনি এক একর জমিতে আনারসের চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে এবং ন্যায্য দামও পাচ্ছেন। এবার ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। এতে খুশি তিনি।
একই ইউনিয়নের বাসিন্দা আনারস চাষি জিকু চাকমা জানান, এখন অনেকেই আগাম আনারসের চাষ শুরু করেছে। আগাম ফল আসলে ভালো লাভে বিক্রি করা যায়। এই আনারসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে সমতলে।
নানিয়ারচর উপজেলা থেকে শহরের বনরূপা সমতাঘাট বাজারে আনারস বিক্রি করতে আসা চাষি প্রীতিসেন চাকমা জানান, আগাম আনারস চাষ করতে যা খরচ হচ্ছে তা এবার পুষিয়ে নেওয়া যাবে। কারণ আনারসের প্রচুর বাম্পার ফলন হয়েছে এবং ন্যায্য দামও পাচ্ছেন।
আরেক চাষি পদ্মকোমল চাকমা জানান, এবার আনারসের ভালো ফলন হয়েছে। দাম ও ভালো পাচ্ছি। এতে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।
পাইকারি ব্যবসায়ী কুমিল্লার হাবিব জানান, তারা চাষিদের কাছ থেকে পাইকারি দরে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে প্রতিজোড়া আনারস ক্রয় করেছেন। বর্তমানে আনারসগুলো ছোট, বড় এবং মাঝারি বাছাই করে ৩০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, রাঙ্গামাটি অঞ্চলের আনারস কিন্তু বিখ্যাত। দেশজুড়ে এটির একটি সুনাম আছে। এটির প্রতি বাইরের পর্যটকরা আকৃষ্ট। জেলায় বেশিরভাগই আনারসের চাষ হয় নানিয়ারচর উপজেলায়। তাছাড়া রাঙ্গামাটি সদর ও লংগদু উপজেলায় প্রচুর আনারসের চাষাবাদ হচ্ছে। সাধারণত আনারসের উৎপাদন হয় বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ্যে। কিন্তু বর্তমানে যে আগাম আনারসের উৎপাদন হচ্ছে সেগুলো বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে ‘রাইফেন’ নামের হরমোন জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এই আনারসের জাতের নাম হচ্ছে ‘হানিকুইন’। ‘রাইফেন’ হরমোন দিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যে-সব আনারসের উৎপাদন হচ্ছে সেগুলো মানুষের দেহে কোন ক্ষতি হবে না।
তিনি আরও জানান, এবার মৌসুমে জেলায় আনারসের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। মোট উৎপাদন ৬২ হাজার ৫শত মেট্রিক টন।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর