• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ২২ মিনিট পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল, ২০২৪, ০৮:৫৭ রাত
bd24live style=

রাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাসের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিক্ষার্থীদের খোলা চিঠি

ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি মুক্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি পাঠ করেছে আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজন হলে আইন সংস্কার করে ক্যাম্পাসকে ছাত্ররাজনীতির বাইরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বিকেলে বুয়েট ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আবেদন জানান তিনি। এসময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি পড়ে শোনানো হয়।

ওই চিঠিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত পাঁচ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী আপনার প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে সবিনয়ে আমাদের দু-চারটি কথা এবং আমাদের আর্জি আপনার কাছে নিবেদন করছি।’

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের স্বপ্নসারথি, বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করে আপনি দৃঢ় পায়ে এগিয়ে চলেছেন। আপনি দেশকে জ্ঞানে বিজ্ঞানে এগিয়ে যেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন, সেই একই স্বপ্ন বুকে ধারণ করে নিজেদের শ্রম-মেধা-মনন কাজে লাগিয়ে নিরঙ্কুশ অধ্যবসায়ের পর আপনার গর্বের এই দেশসেরা প্রতিষ্ঠানে আমরা পড়ার সুযোগ করে নিয়েছি।’

‘আমরা করোনার সেই বিপদ মুহূর্তে বানিয়েছি লো কষ্ট ভ্যান্টিলেটর, ক্লিন সিটির আশায় পরিত্যক্ত মাস্ক থেকে বানাচ্ছি কনক্রিট, আরো খুঁজছি বিদ্যুতের সহজ উপায়, বানাচ্ছি আর্টিফিশিয়াল আর্মস, সার্জিক্যাল টুলস, পদ্মাসেতুর নির্মাণে আমাদের বুয়েট শিক্ষক এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের অবদান অনবদ্য। শুধু দেশেই না , আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্য দেশের দলগুলো যাদের জন্য বরাদ্দ থাকে আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ এবং গবেষণাগারের সুবিধা, তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরা ছিনিয়ে আনছি বিজয়।’

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন ওই চিঠিতে, ‘আপনি নিঃশর্তভাবে আমাদের অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন এসব গবেষণা খাতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের অভিভাবক। যারা নিজেদের মেধা ও শ্রমের সবটুকু দিয়ে বিজ্ঞানের অবাক করা দুনিয়ার একটা অংশের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে দেখতে চাই। আমরা ত্রাসের রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না, আমরা শুধু দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে জানি। নিজেদের কাজ দিয়ে তা আমরা প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর।’

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি মানবকল্যাণব্রতী, আপনি আমাদের সকলের অভিভাবক, আপনি দেশের অভিভাবক। আমরা জানি দেশের কোথাও কোনো দুঃখজনক পরিস্থিতি চললে, দেশের কোথাও সংকট চললে, আপনার হৃদয়ে গভীর রক্তক্ষরণ হয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, আশির দশকে স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে এই দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।’

এতে আরও বলেন, ‘অথচ বিগত বছরগুলোতে আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে ক্ষমতার নেতিবাচক দিকগুলোই প্রত্যক্ষ করেছি। ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের মাঝে সূচনা ঘটেছে আধিপত্য, দাপট, র‍্যাগিং, শিক্ষকদের অপমান, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নিপীড়ন, খুনোখুনিতে মেতে ওঠার মত ঘটনা এবং এর ব্যাপ্তি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে এর চরমতম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল’৯৯ এর সাবেকুন্নাহার সনি আপু, যন্ত্রকৌশল’'০৯ এর আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাই এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল'১৭ এর আবরার ফাহাদ ভাইকে হারিয়েছি।’

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র আবরার ফাহাদ ভাই এর হত্যাকাণ্ডই নয়, এর পূর্ববর্তীতেও অসংখ্য শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং এর দ্বারা কিংবা ছাত্ররাজনৈতিক দাপটের দ্বারা অমানুষিকভাবে নিপীড়িত হওয়ার ঘটনা রয়েছে, যা আমাদের বুয়েটের র‍্যাগিং স্টোরি আর্কাইভে সারি সারি আকারে লিপিবদ্ধ আছে। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার শাহরিয়ারকে স্ট্যাম্প দিয়ে রাতভর বেধড়ক মারধর করা হয়৷ ১৭ ব্যাচের মেহজাদ গালিবকে নগ্ন করে সোহরাওয়ার্দী হলের ছাদে তুলে স্ট্যাম্প দিয়ে সারারাত মারা হয়৷ ১৫ ব্যাচের সামিউত তৌসিফকে মেরে হাত পা ভেঙে দেয়। মারতে মারতে তিনটা স্ট্যাম্প ভেঙে ফেলা হয়। এই সামিউত তৌসিফ ছিল এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, তার চাচা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। তার লিগামেন্ট ছিড়ে পায়ে ফ্র‍্যাকচার হয়ে যায়। সালাম না দেওয়াতে সাখাওয়াত অভির হাত ভেঙে ফেলে আবরার ফাহাদের হত্যাকারী অমিত সাহা। সৌমিত্র লাহিড়ী থাপ্পড় দিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে ফেলে একজনের৷ এরকম আছে আরো অসংখ্য কাহিনি।’

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দাপটের আড়ালে ছাত্ররাজনীতি আমাদের ক্যাম্পাসে উন্মুক্তভাবে বিচরণের অধিকার, ক্যাম্পাসের সুস্থ অ্যাকাডেমিক পরিবেশ, আমাদের স্বাধীনতা, হলের মেসের টাকার সৎ ব্যবহার, ক্যাম্পাস মাদকমুক্ত থাকা, নবীন আগত বুয়েটিয়ানদের একটি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন উপভোগ এর অধিকার সবকিছুই হারিয়ে গিয়েছিল। ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও রুখে দিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ৷’

ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বরাবরই একটি নিরাপদ এবং সুস্থ ক্যাম্পাস চেয়ে এসেছে যেখানে ক্ষমতাচর্চার লোভ লালসার শিকলে আবারো জিম্মি হয়ে যাবে না সকলের নিরাপত্তা, শিক্ষাঙ্গনের উপযুক্ত পরিবেশ। সুস্থ নেতৃত্ব এবং নৈতিকতা বিকাশের সকল উপাদান ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির উপস্থিতি ব্যতীতও গত কয়েক বছরে উপস্থিত ছিল এবং এতে সুস্থ নেতৃত্বের চর্চায় শিক্ষার্থীরা তাদের উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছে।

প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের বাৎসরিক ফেস্টিভ্যাল আয়োজন, প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের নিজস্ব সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং অ্যাকাডেমিক অর্গানাইজেশন, সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজ, বিভিন্ন ক্লাবের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে আনন্দের সাথে সম্পন্ন হচ্ছে। আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ক্ষমতা চর্চা ব্যতীত বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সভা-সেমিনার আয়োজন, জাতীয় সহশিক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্জন সহ, ক্যাম্পাসের ভিতরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সফলভাবেই আয়োজিত হয়েছে।’

বর্তমান বুয়েটে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ থাকায় নিজ নিজ প্রকৌশল ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণামুখী কাজে মনোনিবেশ করতে অনুপ্রাণিত হওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি রাজনীতিবিহীন নিরাপদ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য সারাদেশ ব্যাপী জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং সমাদৃত হয়েছে।

রাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাসের গত ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের এই সকল সফলতা আমাদের জানান দেয়, আমরা আমাদের বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ব্যতীতও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যে প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন নেতৃত্ব গঠন এবং বিকাশ প্রয়োজন, তা করতে পারি, স্মার্ট বাংলাদেশ এর লক্ষ্য অর্জনে আমরা নিরন্তর কাজ করে যেতে পারি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জেনে খুশি হবেন যে, বাকিসকল প্রকৌশল-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বুয়েটেও থিসিসের জন্য রিসার্চ টাস্ক চতুর্থ বর্ষে আবশ্যক হলেও আমাদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আগে থেকে বিভিন্ন রিসার্চ-প্রজেক্টে নিজ ইচ্ছায় অংশগ্রহণ করছে। 

এছাড়াও দেশে, বিদেশে বিভিন্ন প্রকৌশল প্রতিযোগিতায়, বিতর্ক প্রতিযোগিতায়, কুইজ প্রতিযোগিতায়, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বুয়েটিয়ানদের সাফল্য গত সাড়ে ৪ বছরে সুস্পষ্ট ভাবে বেড়েছে। আপনি জেনে আরো খুশি হবেন যে তথ্য প্রযুক্তিকে আমরা কতটা এগিয়ে যাচ্ছি, আন্তর্জাতিক কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় আমাদের অর্জন স্বর্ণপদক। Young Engineering and Scientist's Award এর মতো বিশ্ব সমাদৃত অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বুয়েটের ৬ জন এবং শুধু গত বছরেই ৪ জন শিক্ষার্থী। জন হপকিন্স- রাইস ইউনিভার্সিটির মত বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের হেলথকেয়ার চ্যালেঞ্জে আমাদের উপস্থিতি এবং পুরস্কার প্রাপ্তি এখন নিয়মিত। 

থাইল্যান্ড-মালেশিয়ার IEEE কম্পিটিশনে আমাদের বুয়েটিয়ানদের বানানো ড্রোন একের পর এক পুরস্কার জিতেছে। মার্স রোভারে চ্যালেঞ্জেও আমাদের দলের সাফল্য নিয়মিত।শুধুমাত্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নয়।সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্টে উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে বুয়েটের এক স্টার্ট আপ।

একই সাথে সিনিয়র-জুনিয়র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামিয়েছে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ফেস্ট, ডিপার্টমেন্টাল ডে যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা আমাদের সহপাঠীরাও যথেষ্ট খুশি হয়েছে আমাদের আয়োজনে। এ আয়োজন-অংশগ্রহণ সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র একটি নিরাপদ ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের কারণে। যেখানে হল রেসিডেন্ট কোন ছাত্রের চিন্তায় থাকতে হয়নি হলে তাকে র‍্যাগের সম্মুখীন হতে হবে বা এটাচড কোন শিক্ষার্থীরও উদ্বেগ ছিল না ক্যাম্পাসে আসলে তাকে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হবার পর থেকে আজ অবধি প্রতিটি জাতীয় দিবস সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে আসছি। আমরা ছাত্ররা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জাতীয় মূল্যবোধ ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনেপ্রাণে ধারণ করি। দেশের গৌরবময় ইতিহাস, ত্যাগ-তিতিক্ষা আমরা অন্তরে লালন করি, ভবিষ্যতে পথচলায় অনুপ্রেরণা নেই। আমরা বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতীয় মূল্যবোধ, দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ আমাদের সকলের জন্যই প্রযোজ্য এবং একান্ত পালনীয়। আমরা সাংগঠনিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে এসেই এই সচেতনতা রাখি।

অথচ অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কতিপয় ব্যক্তি বা গণমাধ্যমের তৎপরতায় ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েট ক্যাম্পাসকে জাতীয় চেতনার বিরোধী মতাদর্শের স্থান হিসেবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিষয়টিতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত।

আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের ব্যাপারে যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। তাই দেশের যেকোনো স্থানের ন্যায় আমাদের ক্যাম্পাসকে আমরা অবশ্যই যেকোনো প্রকারের সন্ত্রাস, মৌলবাদ বা নিষিদ্ধ গোষ্ঠী থেকে নিরাপদ রাখতে সর্বদা তৎপর।

সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে অনেক মহল থেকেই বলা হচ্ছে যে, ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ মৌলবাদী বা সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম বিদ্যমান এবং এর ফলশ্রুতিতেই তারা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির চর্চার পক্ষে যুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আপনাকে নির্দ্বিধায় বলতে চাই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি যেকোনো মুহূর্তে এসকল নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যেকোনো কার্যকলাপ ক্যাম্পাসে চলমান দেখি শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিব এবং প্রশাসনকে অবহিত করব। এমনকি ভবিষ্যতে যদি ক্যাম্পাসে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সেটার বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান দৃঢ়।

বুয়েট ক্যাম্পাসে এই চার বছর আমরা নির্বিঘ্নে কাটিয়েছি , সেখানে ছায়া হয়ে ছিলেন আমাদের শিক্ষকেরা। আমাদের মত দেশ জুড়ে লাখো শিক্ষার্থী এমন একটা ক্যাম্পাসের স্বপ্ন নিয়েই বাড়ি ছাড়ে যেখানে তাদের উপর অকারণে জুলুম হবেনা, নির্যাতিত হতে হবেনা , দিন রাত কারো ভয়ে তটস্থ থাকতে হবেনা , বাবা মাকে দুশ্চিন্তায় চোখের পানি ফেলতে হবেনা। চার বছর আগে আপনার দৃঢ় এবং দ্রুত হস্তক্ষেপে আমরা নতুন করে এই ক্যাম্পাসে বাঁচতে শিখেছি।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই ছোট্ট একটা চাওয়ার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত পাচ্ছি হুমকি , হচ্ছি লাঞ্ছিত, অপদস্থ। আমরা , আমাদের ছোট ভাই বোনেরা আরও একবার সেই অন্ধকার দিনগুলোর সাক্ষী হতে চাইনা। আমাদের মাননীয় ভিসি মহোদয় এবং আমাদের সকল শিক্ষকের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে । আমরা জানি তারা তাদের সন্তানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট আছেন এবং থাকবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে সবিনয়ে অনুরোধ আপনি আমাদের পাশে দাঁড়ান। আপনি সকল সময়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন, আমরা জানি এই দুর্দিনে আপনি আমাদের ছেড়ে যাবেন না। 

আমাদের স্বনামধন্য অ্যালাম্নাই, বুয়েটের অধ্যাপক ইমেরিটাস, প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত বলেন যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন অধ্যাদেশ করে শিক্ষকদের রাজনীতি, রাজনৈতিক কার্যকলাপ ইত্যাদির অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের জন্য অধ্যাদেশের খসড়া যখন বঙ্গবন্ধুর সামনে উপস্থাপন করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন যে এই দুটো বিশ্ববিদ্যালয় নষ্ট করা চলবে না।খসড়া অর্ডিন্যান্স বঙ্গবন্ধু ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বুয়েটের শিক্ষকরা তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন। এই এজেন্ডাতে তিনি দেখা করতে রাজি হননি। তখন শিক্ষকরা কথা বলতেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলীর সঙ্গে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বুয়েটের পড়াশোনার পরিবেশের গুরুত্ব, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বুয়েটের প্রকৌশলী এবং দক্ষ প্রযুক্তিবিদের গুরুত্ব বঙ্গবন্ধুর চিন্তায় প্রাধান্য পেয়েছে সবসময়। আপনারা সবাই জানেন দেশের জন্য এই সময়ে মেধাবী দক্ষ প্রকৌশলীর গুরুত্ব কতখানি। আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখি, তারা তাদের জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসার , কাঠামোগত উন্নয়নকে নিরবচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে বিশেষভাবে তাদের প্রকৌশলীদের সমৃদ্ধ করার ব্যবস্থা করছে। কিন্তু বলতে ভীষণ কষ্ট হয় ,অনেক কষ্টে পাওয়া সেই আকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীরা আজ ছাত্ররাজনীতির করাল গ্রাসের থাবা থেকে নিজেকে রক্ষার যুদ্ধ করতে করতে জর্জরিত। এই বিদ্যাপীঠে ঠিকমতো রুটিনমাফিক পড়াশোনা ও গবেষণায় মনোনিবেশ করার পর কোনো ছাত্রের পক্ষে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেয়ার সময় দেয়া সম্ভব নয়। অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলছি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার মাটিতে দাঁড়িয়ে আজ এই ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীদের দিনের পর দিন রাস্তায় থাকার কথা নয়। 

আমাদের চাওয়া, বুয়েটকে ঘিরে আমাদের জাতির জনকের যে ভিশন ছিল, তাকে বাস্তবায়ন করা হোক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন বুয়েটের প্রকৃতি ভিন্ন। তাই তিনি নিজে রাজনীতির আওতা থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাইরে রেখেছিলেন। আজ যখন তাঁরই গড়ে তোলা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বুয়েটের মতো বিশেষায়িত একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যেকোনো মূল্যে রাজনীতির আওতায় আনার কথা বলে, আমরা বিশ্বাস করি তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও সিদ্ধান্তকে অপমান করা হয়। 

দেশমাতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, বুয়েটকে নিয়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে পলিসি গ্রহণ করেছিলেন, তার বাস্তবায়ন করুন। বুয়েটকে ছাত্র রাজনীতির বাইরে রাখুন, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও। কারণ সুবিচারের জন্যই আইনের সৃষ্টি। আমাদের অনুরোধ, আপনি দয়া করে আমাদের ক্যাম্পাসে আসুন; ছাত্ররাজনীতিহীন বুয়েট গত কয়েকবছর ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আদর্শ ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে, সেটা আমরা আপনাকে দেখাতে চাই।

আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা প্রযুক্তিবিদ্যায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে দিবো খুব শীঘ্রই। আহসান উল্লাহ হল আয়োজিত নবীনবরণ ও সমাপনী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রো ভিসি মহোদয় বলেছিলেন, "ছাত্ররাজনীতি বিহীন ক্যাম্পাসে আমরা ভাল আছি, সৃজনশীল কাজ করছি, আমরা র‍্যাংকিংয়ে ফোকাস করছি।" সেই অনুষ্ঠানে স্যার আরও বলেন, " University should go higher. আমি ইন্টারভিউ দিয়েছি প্রথম আলোতে আমরা কিছু পলিসি রোল আউট করেছি। যদি পলিসিগুলা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে down the road maybe within 5-6 years, তোমরা এই বুয়েটের র‍্যাংকিং ৫০ এর মধ্যে দেখতে পারবা।"

শেষ কয়েকবছর এই প্রত্যয় নিয়েই প্রতিটি প্রকৌশল বিভাগে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছি, ইতোমধ্যে যার ফলও পেতে শুরু করেছি। আমাদের এই পথচলা আপনিই নির্বিঘ্ন রাখতে পারেন। সেই আশাতেই এই চিঠি। আমরা, আপনার হাজারো সন্তান আপনার সহযোগিতার প্রতীক্ষায় আছি।’

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতনে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ নিহত হন। এর প্রতিবাদে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। এরপর ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। 

চলতি বছরের গত ২৮ মার্চ দিবাগত রাত ১টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন বলে অভিযোগ তুলে ছয় দফা দাবি তুলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করে আসছেন তাঁরা। আন্দোলনকারীদের দাবি, তাঁদের দাবি মেনে নিলে তাঁরা অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে ফিরবেন।

এদিকে ছাত্রলীগ নেতাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানোর অভিযোগ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েটের পুরো কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদধারী ইমতিয়াজ রাব্বিকে বুয়েট হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েট কর্তৃপক্ষের দেয়া ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ বৈধতা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রিটটি করেন।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ [email protected]