আসন্ন ঈদ উল ফিতর ও পাহাড়ের বৈসাবির আমেজকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পন্যের দাম বেড়েই চলেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি মাছ-মাংস ও কাপড়ের দোকানে গলা কাটা দাম রাখছে ব্যবসায়ীরা। খাগড়াছড়ি মাংস বাজারে হাড্ডিসহ প্রতি কেজি মাংস ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করছিল ব্যবসায়ীরা।
রাতারাতি হঠাৎ এ দাম বৃদ্ধি করে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। তারা সরকারি নির্দেশনা তো মানছেইনা উল্টো দাম বৃদ্ধি করে যেন এবার সরকারকেই বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখালো ব্যবসায়ীরা। ফলে খাগড়াছড়ি বাজারে আসা ভোক্তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা। বাজারে প্রশাসনের কার্যত কোন তদারকি নেই। ফলে যে যেভাবে পারছে পণ্য বিক্রি করছে। এতে সাধারণ ভোক্তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনই অভিযোগ সাধারণ ভোক্তাদের।
সোমবার (৮ এপ্রিল) সরজমিনে ঘুরে দেখা যায় ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছে ৮০০ টাকা করে। আর হাড্ডি ছাড়া শুধু মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা করে। মূলত গত শনিবার থেকে ব্যবসায়ীরা এ দাম বৃদ্ধি করেছে।
এর আগে খাগড়াছড়ি বাজারে হাড্ডিসহ গরুর মাংসের দাম ছিল ৭০০ টাকা এবং হাড্ডিছাড়া শুধু মাংসের দাম ছিল ৮৫৯ টাকা। এদিকে ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৪০-২৫০ টাকা, সোনালী ৩৭০-৩৮০টাকা আর দেশী মুরগী ৫৫০-৫৭০ টাকা কেজি বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। ১৮০ টাকার তেলাপিয়া মাছও ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
কিছুদিন আগে এসবের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল খাগড়াছড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতি। সেখানে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. লিয়াকত আলী চৌধুরী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কাউন্সিল অব কনজিউমার রাইটস বাংলাদেশ (সিআরবি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রউফ সহ মাংস ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে গরুর মাংস ৭০০, ব্রয়লার ১৮০, সোনালি ৩৫০ আর দেশী মুরগী ৪৫০ করে বিক্রি করতে নির্দেশ দিয়েছিল বাজার ব্যবসায়ী সমিতি। গরু ও মুরগীর এ অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি নিয়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হলেও প্রশাসনের কোন তদারকি চোঁখে পড়েনি।
এদিকে কাপড়ের দোকানে গলা কাটা দাম রাখছে ব্যবসায়ীরা। কোন রশীদ ছাড়াই যে যেভাবে পারছে বিক্রি করছে কাপড়। অরাজকতার আরেক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে কাপড়ের দোকান গুলোতে। শাড়ি কাপড় কিনতে আসা ভোক্তা আবু সাইদ বলেন, 'কিছুদিন পূর্বে আমি যে শাড়ি ৮০০ টাকায় ক্রয় করেছি সে একই শাড়ির আমার নিকট ১৫০০ টাকা রাখা হয়েছে। ৬-৭ টা দোকান ঘুরে কোথাও কম দাম পাইনি।' আলমগীর বলেন, 'রোজার শুরুতে যে পাঞ্জাবি আমি ১০০০ টাকায় কিনেছি সে পাঞ্জাবি এখন ২১০০ টাকার উপরে।'
খাগড়াছড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদুল আলম বলেন, 'আমরা গরু ও মুরগী ব্যবসায়ীদের একটি যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। সে মূল্য তারা মানছেনা। তাদেরকে তো আমরা আর জেল-জরিমানা করতে পারবোনা। এটা প্রশাসনের কাজ। প্রশাসন কঠোরভাবে মনিটরিং না করলে বাজার দর নিয়ন্ত্রণে আসবেনা।'
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কাউন্সিল অব কনজিউমার রাইটস বাংলাদেশ (সিআরবি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রউফ বলেন, 'ব্যবসায়ীদের যখন ইচ্ছে তখন মাংসের দাম বৃদ্ধি করে বিক্রি করছে। বাজারে কোন স্থিতিশীলতা নেই। মূলত বাজারে প্রশাসনের নজর দিতে হবে। মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া বা অভিযান পরিচালনা করাটা প্রশাসনের কাজ। আমরা জেলা প্রশাসনকে এসব বিষয়ে বার বার তাগাদা দিয়েছি। প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ ছাড়া বাজার দর নিয়ন্ত্রণে আসবেনা।'
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, 'আমরা এসব বিষয়ে খোঁজ নেব। কোন ব্যবসায়ী মূল্য নিয়ে কারসাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর