কক্সবাজারের উখিয়ায় ডাম্পার ট্রাকের চাপায় বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান হত্যার ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র্যাবের দাবি এদের মধ্যে একজন এই ঘটনার পরিকল্পনাকারী।
সোমবার আলাদা অভিযানে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকা এবং উখিয়ার কোটবাজার এলাকা থেকে এদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে মঙ্গলবার জানান র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন, উখিয়ার হরিণমারা এলাকার মো. কামাল উদ্দিন (৩৯) এবং তুতুরবিল এলাকার হেলাল উদ্দিন (২৭)। কামাল উদ্দিনের পরিকল্পনাতেই বন কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব। এ নিয়ে এঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও পুলিশ।
র্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “পাহাড় কেটে মাটি পাচার রোধে বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানের ধারাবাহিক অভিযানে ক্ষুব্ধ হয়ে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, হরিণমারা এলাকায় স্থানীয় হেলাল, গফুর ও বাবুলের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে আসছিল। চক্রের অধীনে প্রায় ১০/১২ টি ডাম্পার ও কয়েকটি মাটিকাটা ড্রেজার রয়েছে। তারা রাতের অন্ধকারে বন কর্মকর্তাদের অগোচরে পাহাড়ের মাটি কেটে ডাম্পার প্রতি ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করত। এসব মাটি জমি ভরাট করার জন্য কিনতেন অনেকে।”
নিহত সাজ্জাদুজ্জামান হরিণমারা বন অঞ্চলের দায়িত্বপূর্ণ বিটের কর্মকর্তা ছিল। তিনি একজন সাহসী ও সৎ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন উল্লেখ করে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত তিনি বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেন। এসব অভিযানে পাঁচটি মাটি কাটার ড্রেজারসহ কয়েকটি ডাম্পার আটক করেন এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বন আইনে কয়েকটি মামলা করেন। এসব কারণে তিনি অপরাধী চক্রের চক্ষুশূলে পরিণত হন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল বলেন, “অপরাধীরা তাকে শায়েস্তা করার জন্য নানান পরিকল্পনা করে। গত ২৯ মার্চ তিনি আবারও অভিযান যান এবং পাহাড়ের মাটি বোঝাই অবস্থায় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ড্রাইভার কামালের একটি ডাম্পার আটক করেন। এসময় কামালসহ চারজনের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলাও করেন। ফলে কামালসহ অন্যরা তার উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হন। ফলে চক্রটির সদস্যরা মিলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।”
সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩১ মার্চ রাতে চালক বাপ্পি ড্রাইভার কামালসহ দুইজন হেল্পারকে সঙ্গে নিয়ে পাহাড়ের মাটি কাটতে যায়। এ কাজে ব্যবহার করা হয় সৈয়দ আলমের মালিকানাধীন একটি ডাম্পার। অন্যদিকে সৈয়দ আলম বন কর্মকর্তাদের উপর নজরদারি করতে স্থানীয় বাজারে অপেক্ষা করতে থাকেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, পাহাড় কাটার খবর পেয়ে সাজ্জাদ বন বিভাগের আরেক সদস্য মো. আলিকে নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন। বাপ্পি ও কামাল মাটি বোঝাই ডাম্পার নিয়ে ফেরত আসার সময় পথে উলটো দিক থেকে বন কর্মকর্তার মোটরসাইকেলটি আসতে দেখে। তখন ডাম্পারের ড্রাইভার বাপ্পির পাশে বসে থাকা কামাল পরিকল্পনা অনুযায়ী গাড়ি না থামিয়ে মোটরসাইকেলটি চাপা দেওয়ার জন্য বাপ্পিকে নির্দেশ দেয়।
এই নির্দেশ পেয়ে বাপ্পি গাড়ি না থামিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী সাজ্জাদ ও তার সহযোগীকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই ড্রাম্পারের চাপায় মাথায় আঘাত পেয়ে সাজ্জাদ মৃত্যুবরণ করেন এবং তার সহকর্মী মোহাম্মদ আলী আহত হন।
এ ঘটনায় উখিয়া বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বাদী হয়ে এজাহারনামীয় ১০ জন এবং অজ্ঞাত পাঁচ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাব অধিনায়ক জানান, এই মামলায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে গত ৮ এপ্রিল মো. বাপ্পী (২৩) ও ১ এপ্রিল ছৈয়দ করিমকে (৩৫) পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল।
নিহত বন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান (৩০) কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বিট অফিসের বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিল। তিনি মুন্সিগঞ্জের গজরিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে।
এ ঘটনায় আহত হন বনরক্ষী মোহাম্মদ আলী (২৭), তিনি টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ঝিমংখালী এলাকার আবুল মঞ্জুরের ছেলে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর