মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে মাটি বহনের ট্রাক আটকের প্রতিবাদে মৌলভীবাজার টু বিয়ানীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেছে ট্রাক শ্রমিক ও চালকরা। উপজেলার থানা কমপ্লেক্সের সামনের সড়ক অবরোধের কারণে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩ টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ৫ ঘণ্টা ব্যাপী এ সড়ক অবরোধে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
পুলিশ ও শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, ট্রাক শ্রমিকরা নিয়মিত কৃষি জমি থেকে মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। ট্রাক দিয়ে মাটি নেওয়ার সময় মাটি মহাসড়কে পড়ে সড়ক বিনষ্ট সহ নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। গত দু-দিন আগে থানার ওসি এসএম মাইন উদ্দিন দুটি ট্রাক আটক করে মাটি বহনের সময় ত্রিপল (স্থানীয় ভাষায় তেরপাল) দিয়ে মাটি বহন করার জন্য শ্রমিক নেতাদের নির্দেশনা দেন। শ্রমিক নেতারা এতে সম্মতি জানালেও পুনরায় ত্রিপল দিয়ে মাটি বহন না করায় গতরাতে একটি ট্রাক আটক করে। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা মহাসড়কে ট্রাক আড়াআড়ি করে রেখে সড়ক অবরোধ করেন। ৫ ঘণ্টা অবরোধের পর জনদুর্ভোগ চরণে উঠলে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) দীপঙ্কর ঘোষ ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। পরে সকাল আটটার দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজার জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার পর শ্রমিকেরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সরজমিনে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে গিয়ে জুড়ী থানার সামনে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস, পণ্য বহনকারী ট্রাক, সিএনজি, বিদেশ যাত্রীদের পরিবহণ করা গাড়ি, পিকআপ ভ্যান আটকে থাকতে দেখা যায়। এতে উপজেলার বীরমুক্তিযোদ্ধা এম এ মুমিত আসুক চত্বর থেকে বাছিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে রওয়ানা হতে দেখা যায়।
আলাপকালে যানজটে আটকা পড়া ঢাকা থেকে সিলেটের বিয়ানী বাজারগামী এনা পরিবহনের বাসের যাত্রী আবু সাঈদ বলেন, সাড়ে চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর অনেকটা বাধ্য হয়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছি। যেখানে গিয়ে গাড়ি পাই ওই গাড়ি দিয়ে গন্তব্যস্থলে যাব। এসময় তিনি এনা পরিবহনের সকল যাত্রী ইতিমধ্যে হেঁটে চলে গেছেন বলে জানান।
পোনা মাছ পরিবহণ করা এক ট্রাক চালক জানান, দীর্ঘ সময় আটকে থেকে আমার গাড়িতে থাকা অধিকাংশ পোনা ইতোমধ্যেই মারা গিয়েছে।
জুড়ী উপজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য কামরুল হাসান বলেন, পুলিশ অন্যায়ভাবে তাঁদের ট্রাক আটক করেছে। অনুরোধের পরও ট্রাক ছাড়েনি। তাই সবাই ক্ষুব্ধ। পরে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের ব্যাপারে জেলা নেতাদের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়ায় অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
আলাপকালে উপজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তজম্মুল আলী ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল আজিজ বলেন, শুধু বালু পরিবহনের সময় ট্রাকে ত্রিপল ব্যবহার করা হয়। মাটির ক্ষেত্রে কখনো তা ব্যবহার করা হয় না। আর গাড়ির চাকায় লেগে থাকা মাটি সড়কে পড়ে। ট্রাকের ওপর থেকে মাটি পড়ে না। অনাবাদি জমি থেকে কেটে আনা মাটি পরিবহণ করা হয় বলে তিনি দাবি করেন।
জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাইন উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন বেআইনিভাবে বিভিন্ন স্থানের কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে ট্রাকে করে পরিবহণ করা হয়। মাটি ঢেকে রাখা হয় না। ঝাঁকুনির সময় গাড়ি থেকে মাটি সড়কে পড়ে। এতে বৃষ্টিতে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন।
ওসি আরও বলেন, গত সোমবার রাতেও থানার সামনে দুটি মাটি পরিবহনকারী ট্রাক আটকানো হয়। পরে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা গিয়ে ত্রিপল দিয়ে মাটি ঢেকে পরিবহণ করা হবে বলে লিখিত অঙ্গীকার করেন। কিন্তু তা মানা হয়নি। আজ সন্ধ্যার পর এ বিষয়ে শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর