মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের দিলখুশা চা-বাগান আকস্মিক বন্ধ ঘোষণা করে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক বাগান ছেড়ে চলে গেছেন। বাগান বন্ধের নেপথ্যে বাগানের বড় বাবু বলাই বসাক জড়িত এমন অভিযোগ করে তার অপসারণ দাবি করছেন সাধারণ চা শ্রমিকরা। এছাড়াও তারা ওই বড় বাবুর বিরুদ্ধে শ্রমিক হয়রানির নানা অভিযোগ করেছেন।
এদিকে বাগান বন্ধের ঘোষণায় তিন দিন থেকে শ্রমিকেরা ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে বাগান খুলে দেওয়াসহ চা বাগানের বড় বাবু বলাই বসাকের অপসারণ চেয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করছে বাগান এলাকা।
বাগানের শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, দিলখুশা চা-বাগান 'হামদর্দ টি কোম্পানি' নামের একটি প্রতিষ্ঠান ইজারা নিয়ে পরিচালনা করছে। বাগানে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ৬০০ নারী-পুরুষ শ্রমিক রয়েছেন। ১৩ এপ্রিল রাতে বিপুল বুনারজি নামের বাগানের এক শ্রমিক সহকারী ব্যবস্থাপক শিপলু তালুকদারের বাংলোতে গিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলার চেষ্টা চালান। এ সময় তাঁকে আটক করে জুড়ী থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পরে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিটমাটের জন্য শ্রমিকেরা তাঁকে ছাড়িয়ে আনেন।
এরপর জিজ্ঞাসাবাদে বিপুল শ্রমিকদের জানান, বাগানের প্রধান করণিক বলাই বসাকের সঙ্গে সহকারী ব্যবস্থাপক শিপলু তালুকদারের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর জের ধরে বলাই তাঁকে ব্যবহার করেন। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) শ্রমিকেরা ব্যবস্থাপক সাঈদুজ্জামানের কার্যালয়ে গিয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে দুই-এক দিনের মধ্যে বিষয়টি মীমাংসার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেন। এ সময় ব্যবস্থাপক ২৬ এপ্রিল বৈঠক হবে বলে জানান।
একপর্যায়ে সময় পেছানোয় শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরে তাঁরা ফিরে যান। শুক্রবার বাগানে সাপ্তাহিক ছুটি। সকালের দিকে শ্রমিকেরা বাগান বন্ধ ঘোষণার খবর পান। পরে ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে গিয়ে দেয়ালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ দেখিয়ে বাগান বন্ধের নোটিশ সাঁটানো দেখেন। ব্যবস্থাপক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বাংলোয় পাননি। তাঁরা বৃহস্পতিবার গভীর রাতে চলে গেছেন জানতে পারেন। বলাই বসাকও বাগান ছেড়ে চলে যান। এ খবরে ২০০-৩০০ শ্রমিক ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে তাঁদের সঙ্গে অন্য শ্রমিকেরাও যোগ দেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগান বন্ধ থাকায় সাধারণ শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে পেয়ে সাধারণ শ্রমিকরা বাগান বন্ধের নেপথ্যে বাগানের প্রধান করণিক (বড় বাবু) বলাই বসাকের নানা অপকর্মের কথা তুলে ধরেন। বাগান বন্ধ থাকায় গত তিন ধরে শ্রমিকরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বলে তারা জানান। বাগান বন্ধের ঘোষণায় তিন দিন থেকে শ্রমিকেরা ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে বাগান খুলে দেয়া সহ চা বাগানের বড় বাবু বলাই বসাকের অপসারণ চেয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করছে বাগান এলাকা।
এ বিষয়ে চা বাগানের বড় বাবু বলাই বসাক বলেন, এ হামলার সাথে আমি জড়িত নয়। শ্রমিক বিপুল বুনারজি আপনার নির্দেশে হামলা করেছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি এ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে নানা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতে থাকেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজংসহ জনপ্রতিনিধিগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধানে বাগানের ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ব্যবস্থাপক মো. সাঈদুজ্জামান বলেন, শ্রমিক দ্বন্দ্বের জেরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এমন আশঙ্কায় কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে বাগান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে নোটিশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে বাগান খোলার সিদ্ধান্ত হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর