নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন,আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করে থাকি, এই নির্বাচনে তার চেয়ে অধিক পরিমাণে সদস্য মোতায়েনের প্রচেষ্টা করা হবে।
মঙ্গলবার(২৩ এপ্রিল) নির্বাচন ভবনে ষষ্ঠ উপজেলা ভোট নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিক এ তথ্য জানান তিনি।
এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া চার নির্বাচন কমিশন, জননিরাপত্তা বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দপ্তর, মন্ত্রণালয় সচিব,সিনিয়র সচিব ও দপ্তর প্রধানদের সঙ্গে সমন্বয় সভায় বসেছিলেন কমিশন। সভার মূল বিষয় ছিল যার যেটা করণীয় সেটা সবাই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে যেন যত্ন সহকারে করেন।
তিনি বলেন,আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তারা যেন এবং জনপ্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন তারা যাতে এই নির্বাচনটা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে আরো সুন্দর ও স্বার্থকভাবে আয়োজন করেন, এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তের মধ্যে আমরা মূলত যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করে থাকি, এই নির্বাচনে তার চেয়ে অধিক পরিমাণে সদস্য মোতায়েনের প্রচেষ্টা করা হবে। যেহেতু উপজেলা নির্বাচন চার ধাপে সম্পন্ন করা হবে, জেলা পর্যায়ে যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও জনপ্রশাসনের সদস্য রয়েছে, তারা ওখানেই ধাপে ধাপে দায়িত্ব পালন করবে। তারা বলেছে আমাদের জনবলের ঘাটতি হবে না।
তিনি বলেন,আমাদের পার্বত্য তিনটি উপজেলাতে বিশেষ করে- বান্দরবানের থানচি, রুমা এবং রোয়াংছড়িতে যৌথ বাহিনীর অপারেশন চলমান রয়েছে৷ আপাতত এই তিনটি উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে সু্বিধাজনক সময়ে আয়োজনের চেষ্টা করবো। গোয়ান্দা সংস্থাগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপজেলা ভিত্তিক বিজিবি মোতায়েন করা হবে। উপজেলা ভেদে দুই থেকে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। টোটাল জনবলের সংখ্যা উপজেলা ভিত্তিক বাড়িয়ে দেবো।
বড় দল আসবে না, এর প্রভাব ভোটে থাকবে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের যে গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে, তারা যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে নির্বাচনে কোনো ধরণের সহিংসতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করে নাই৷ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে যেহেতু অনেক দল অংশ নিয়েছে দলীয় প্রতীক ছাড়া। একাধিক প্রার্থী একই দলের রয়েছে। এছাড়া যে সব দল নির্বাচন বর্জন করেছে তাদেরও কিছু কিছু অনুসারিরা এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
সুতরাং নির্বাচন প্রতিদ্বদ্বিতাপূর্ণ হবে কমিশন আশা করে এবং এজন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, ম্যাজিস্ট্রট মোতায়েন থেকে শুরু করে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে যাতে নির্বাচনে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তার পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে সুষ্ঠুভাবে বাড়ি যেতে পারেন, যাতে নির্বাচনে তাদের মতামত প্রতিফলিত হয়।
তিনি বলেন,আইনগতভাবে যার ভোটে অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা রয়েছে তিনি ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এখানে আইনগত বাধা নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের যাদের জনপ্রতিনিধি পূর্বে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের নিকট আত্মীয়দের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বারন করেছেন। এটা তো আইন না। তাদের একটি দলীয় সিদ্ধান্ত।এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একত্রিত করার কোনো সুযোগ নাই।আমরা চাই অধিক সংখ্যক প্রার্থী আসবে। জনপ্রশাসন সমন্বিতভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োহন করবে। যত প্রার্থী আসবে স্থানীয় নির্বাচন তত সুষ্ঠু হবে বলে মনে করি।
চার ধাপে অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ইতিমধ্যে তিন ধাপের তফসিল দিয়েছে ইসি।আজ চতুর্থ ধাপের পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন(ইসি)।
প্রথম ধাপের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিল ও বাছাইয়ের সময় শেষ। বৈধ প্রার্থী এক হাজার ৭৮৬ জন, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল, আর ১৫২ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে।
এই ধাপের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করবেন আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলা প্রশাসক।
দ্বিতীয় ধাপের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিল ২১ এপ্রিল শেষ সময়, মনোনয়নপত্র বাছাই ২৩ এপ্রিল, আপিল গ্রহণ ২৪-২৬ এপ্রিল, আপিল নিষ্পত্তি ২৭ থেকে ২৯ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩০ এপ্রিল, প্রতীক বরাদ্দ প্রতীক বরাদ্দ ২ মে। আর ১৬১ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ২১ মে।
এই ধাপের নির্বাচনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভোটারের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি যেখানে সেখানে একাধিক সহকারি রিটার্নিং অফিসার নিয়োজিত থাকবেন।
তৃতীয় ধাপের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন ফরম জমার শেষ তারিখ ২ মে, মনোনয়ন যাচাই-বাছাই ৫ মে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ৬ থেকে ৮মে। আপিল নিস্পত্তি ৯ থেকে ১১ মে। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ই মে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ ১৩ই মে এবং ভোট ২৯শে মে। এই ধাপে ১১২ উপজেলায় ভোট হবে।
এই ধাপে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত জেলা ও অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷ আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর