• ঢাকা
  • ঢাকা, শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ১২ সেকেন্ড পূর্বে
তৌফিক সুলতান
ইন্টার্ন শিক্ষার্থী ,ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
প্রকাশিত : ০৪ মে, ২০২৪, ১০:১৪ দুপুর
bd24live style=

গরমকালের অসুখ বিসুখে সুস্থ থাকার কিছু টিপস

ফাইল ফটো

গরমকালে নানারকম ফলফলাদির দেখা মিললেও অতিরিক্ত গরমহয় অশান্তির প্রধান কারণ অসুখ বিসুখের মাধ্যম।সচেতনতা ও যত্নবান হওয়াতেই মিলবে মুক্তি। গরমের সঙ্গে জনজীবনে বাড়ছে অস্বস্তি। এ অবস্থায় দিনে রাস্তায় বের হওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত গরমে নাজেহাল সবাই। আবহাওয়া অফিস বলছে, গরম আরও বাড়তে পারে।

গরমে অস্বস্তিতে ভোগার পাশাপাশি অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন। ডায়েরিয়া, বমির মতো সমস্যা লেগেই আছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঝুঁকি বাড়ছে আরও কিছু অসুখের।

গ্রীষ্মের মৌসুম শুরুর সময় থেকেই ‘হিট ওয়েভ’ সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই তাপপ্রবাহে যে সকল রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।

হিট সিঙ্কোপ : প্রচণ্ড রোদে বের হলে অনেক সময় মাথা ঘুরে যাওয়া, চোখমুখে অন্ধকার দেখার মতো কিছু শারীরিক সমস্যা হয়। এগুলোকেই ‘হিট সিঙ্কোপ’ বলা হয়। দীর্ঘক্ষণ আগুনের আশপাশে থাকলেও এমন হতে পারে। এমন হলে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা পানিতে গোসল করে নেওয়া জরুরি। কিংবা বরফ পানি দিয়ে শরীর মুছে নিতে পারলে ভালো। অবশ্যই বেশি করে পানি খেতে হবে। না হলে যেকোনো সময় এমন হতে পারে। 

হিট টিটানি : তীব্র তাপপ্রবাহে অনেক সময় হাত-পা বেঁকে যায়। হাত-পায়ের সাড় চলে যায়। হাত আর পা ভাঁজ করতেও বেগ পেতে হয়। এ ধরনের সমস্যাকে ‘হিট টিটানি’ বলা হয়। এমন হলে প্রাথমিকভাবে বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। সেইসঙ্গে হাত-পা মালিশ করতে পারলে ভালো। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে আর পরিমাণ মতো পানি খেলেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠা যায়। 

হিট ক্র্যাম্প : গরমে কায়িক পরিশ্রম বেশি হলে কিংবা দীর্ঘক্ষণ শরীরচর্চা করলে ‘হিট ক্র্যাম্প’ হতে পারে। এমন হলে কাঁধ, ঘাড় ও ঊরুর পেশিতে টান ধরে। বেশি করে পানি খেলে অবশ্য স্বস্তি মেলে। তবে শুধু পানি না খেয়ে স্যালাইন খেলে বেশি উপকার হয়। সেই সঙ্গে বিশ্রাম নিলে আর রোদ এড়িয়ে চললেই টান ধরা কমে যাবে। 
হিট স্ট্রোক : গরমের সময়ে সবচেয়ে ঝুঁকি থাকে হিট স্ট্রোক হওয়ার। এই স্ট্রোক হলে শরীর অনেক শুকিয়ে যায়। ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। শরীরের ভেতরের অংশ গরম হয়ে যায়। কিন্তু হাত-পা ঠান্ডা থাকে। হৃৎস্পন্দনের গতি কমে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। কারো ক্ষেত্রে খিঁচুনি উঠতে পারে। ভুল বকা কিংবা সাময়িকভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়াও হিট স্ট্রোকের লক্ষণ। এমন হলে রোগীকে ভালো করে গোসল করিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। 

হিট পিডিমা : গরমে অনেকের হাত-পা ফুলে যায়। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে ‘হিট পিডিমা’ বলা হয়। অনেকেরই হয় এমন। বিশেষত পা বেশি ফুলে যায়। কখনো আবার হাত ও পা একসঙ্গে ফুলে যায়। এই রোগের বিশেষ কোনো ওষুধ নেই। বিশ্রাম নিলে, বেশি করে পানি খেলে আর উঁচু বালিশের উপর পা তুলে রাখলে দ্রুত সেরে ওঠা যায়।

জ্বর : শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপমাত্রাই (৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট) হলো জ্বর। তবে জ্বর কোনো রোগ নয়, শরীরের কোনো অসুস্থতা বা সংক্রমণের লক্ষণ অর্থাৎ রোগের উপসর্গ হলো জ্বর। বিভিন্ন কারণে জ্বর হতে পারে। যেমন ভাইরাস সংক্রমণজনিত জ্বর-ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, হাম ও জলবসন্ত। এছাড়া টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, নিউমোনিয়া এবং প্রস্রাবের সংক্রমণ ইত্যাদি কারণেও জ্বর হতে পারে। তবে এ সময়ে সাধারণত ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ অত্যধিক বেশি হয়।

ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ : হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, সারা শরীরে ও হাতে-পায়ে ব্যথা অনুভব করা, মাথাব্যথা, খাবারে অরুচি, মুখে বিস্বাদ লাগা; বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া, ত্বকে র‌্যাশ দেখা দেওয়া, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, শীত শীত অনুভূত হওয়া এবং কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা। শিশুদের অতিরিক্ত জ্বরের কারণে কখনো কখনো খিঁচুনি হতে পারে। জ্বর কমানোর জন্য প্রথমে দেহের তাপমাত্রা কমানোর ওষুধ প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। ভাইরাস জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর নয়। শিশুদের বেলায় জ্বর হলে একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

জ্বর হলে প্রাথমিকভাবে কুসুম গরম পানি দিয়ে স্পঞ্জিং করা উচিত। খুব ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা ঠিক নয়। পুরো শরীর কুসুম গরম পানিতে ভেজানো নরম কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে টানা কয়েকবার আলতো করে মুছে দিলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায় এবং খুব ভালো বোধ করে আক্রান্ত রোগী। মাথায় পানি দিতে হবে। রোগীকে ফ্যানের বাতাসের নিচে রাখুন। জ্বর ও ব্যথা কমাতে মাত্রা অনুযায়ী প্যারাসিটামল সিরাপ/ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। উচ্চমাত্রায় জ্বর (১০৩ ফা.) হলে অথবা মুখে খেতে না পারলে মলদ্বারে প্যারাসিটামল সাপোজিটরি ব্যবহার করা প্রয়োজন। খাবার স্যালাইন, ফলের রস, শরবত ইত্যাদি তরল খাবার বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। স্বাভাবিক সব খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়াতে হবে। তবে তরল খাবার অবশ্যই বেশি বেশি দিতে হবে। টকজাতীয় ফল জাম্বুরা, আমড়া, কমলা, লেবু ইত্যাদি খাওয়া ভালো।

জ্বর তিন দিনের মধ্যে প্রশমিত না হলে বা আনুষঙ্গিক অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, অতিরিক্ত বমি, পাতলা পায়খানা এবং ত্বকে র‌্যাশের জন্য দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা : গরমের সময় সাধারণত ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা বেশি হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে তিনবার বা এর বেশি অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বলে। তবে স্বাভাবিক পায়খানা যদি তিনবার বা তার বেশি হয়, তা কিন্তু ডায়রিয়া নয়। যে শিশুরা বুকের দুধ পান করে, তারাও বারবার নরম পায়খানা করে, সেটিও ডায়রিয়া নয়। ডায়রিয়ায় মলের চেয়ে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। পাতলা পায়খানার সঙ্গে যদি রক্তমিশ্রিত থাকে, তবে সেটি আমাশয়।

ডায়রিয়ার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও খনিজ লবণ বের হয়ে যায়। তখন পানির ঘাটতি বা পানিশূন্যতা দেখা যায়। মনে রাখতে হবে, শিশু যেন পানিশূন্যতায় না ভোগে। তাই ডায়রিয়া হলে তাকে ঘন ঘন স্যালাইন খাওয়াতে হবে। তার প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিক আছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে। ছোট শিশুদের কোনো অবস্থায়ই মায়ের দুধ বন্ধ করা যাবে না। ছয় মাসের উপরের শিশুদের ক্ষেত্রে মায়ের দুধের সঙ্গে পানি ও অন্যান্য খাবারও দিতে হবে। একইসঙ্গে তাকে তরল খাবারও দিতে হবে। যতক্ষণ শিশুর পায়খানা স্বাভাবিক না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ নিয়ম মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া শিশুর পায়খানার সঙ্গে যদি রক্ত যায়, তাহলে অবহেলা না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

ঘাম : গরমে শিশুরা অত্যধিক ঘামে। এ কারণে শিশুর বুকে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি, এমনকি নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এ ছাড়া অত্যধিক ঘামে শিশুর শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। ফলে শিশুর পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই শিশু ঘেমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তার শরীর মুছে দিয়ে কাপড় বদলে দিতে হবে। গরমে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। পরিষ্কার রাখতে হবে শরীর ও পরিবেশ। এ সময়টায় শিশুকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাওয়ানো দরকার।

সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়া : গরমে শিশুদের ক্ষেত্রে ঠান্ডার সমস্যাটাও বেশি হতে দেখা যায়। গরমে অতিরিক্ত ঘামের ফলে ঠান্ডা লেগে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ ও নিউমোনিয়া হতে পারে। শিশুদের সংক্রমণের ফলে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ ও নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট নাও হতে পারে। শিশুর শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ হলো-জ্বর, দ্রুত ভারী ও ঘনঘন শ্বাসপ্রশ্বাস, শ্বাসের সঙ্গে শোঁ শোঁ শব্দ, বুকের পাঁজর বা খাচা ডেবে যাওয়া, খেতে না পারা বা খাওয়ানোতে অসুবিধা হওয়া, দুর্বল, ক্লান্তি বা ঝিমুনি ভাব

ঘামাচি : এ সময়ে শিশুর শরীরে ঘামাচি ওঠার প্রবণতা থাকে। তাই শিশুকে প্রতিদিন গোসল করিয়ে পরিষ্কার সুতির পোশাক পরাতে হবে। ঘেমে গেলে দ্রুত শরীর মুছে দিয়ে কাপড় বদলানো উচিত। ঘামাচির জায়গায় শিশুদের উপযোগী পাউডার ব্যবহার করতে হবে। পাউডার লাগানোর আগে শিশুর শরীর মুছে নিন নরম ভেজা কাপড় দিয়ে। গরমে শিশুকে বেশিক্ষণ ডায়াপার না পরিয়ে রাখাই ভালো। অনেক সময় ডায়াপারের কারণে ত্বকে ফুসকুড়ি হতে পারে। তাই খেয়াল রাখতে হবে, ভেজা ডায়াপার যেন বেশিক্ষণ পরিয়ে না রাখা হয়। ডায়াপার নষ্ট হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা খুলে নতুন ডায়াপার পরাতে হবে।

 ঘামাচি গরমের সবচেয়ে বড় সমস্যা। কিন্তু অনেকে বিষয়টিকে ততটা গুরুত্ব দেন না। ঘামাচি কমাতে অনেকেই পাউডার ব্যবহার করেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়। পাউডারের কারণে ঘর্মগ্রন্থিগুলো সংক্রমণ হয়। তখন চিকিৎসকের কাছে ছুটতে হয়। তবে আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে সচেতন হলে বাড়াবাড়ি হওয়ার সুযোগ থাকে না।

এখন প্রচণ্ড গরম! উচ্চ তাপমাত্রার প্রথম শিকার হয় শিশুরা। শিশুরা খুব বেশি স্পর্শকাতর, তাই অন্য সময়ের তুলনায় গরমকাল শিশুদের জন্য বেশি কষ্টকর ও অসহনীয় হয়ে ওঠে। বড়দের মতো আবহাওয়ার দ্রুত তারতম্যের সঙ্গে শিশুরা নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশিরভাগ সময়ই পারে না। গরমে জ্বর, পেট খারাপ, সর্দি, কাশিসহ নানা শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। এ ছাড়া ভাইরাসজনিত বিভিন্ন সংক্রমণ, শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন প্রদাহসহ নিউমোনিয়ায় ভুগতে পারে। এ সময়ে জলবসন্তসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগও বেশি হয়। প্রচণ্ড গরমে থাকে পানিশূন্যতা ও হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। আর এজন্যই গরমে শিশুর দরকার বাড়তি যত্ন। 

হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া : প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোক হয়ে বা মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে। হঠাৎ করে শিশু অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। তীব্র পানিশূন্যতা হলে, রক্তে সুগার বা চিনির পরিমাণ কমে গেলে বা ব্লাড পেশার কমে গেলে শিশু অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারে। এ অবস্থায় আতঙ্কিত না হয়ে তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমেই রোগীকে চিত করে শোয়াতে হবে। সম্ভব হলে একদিকে কাত করে দিতে হবে, যাতে মুখের লালা বেরিয়ে আসতে পারে। শোয়ানোর পর দুই পায়ের দিক মাথা থেকে ১২ ইঞ্চি উঁচু করে রাখতে হবে, যাতে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ ও চলাচল ঠিক থাকে এবং বাড়ে। টাইট পোশাক পরে থাকলে খুলে অথবা ঢিলা করে দিতে হবে, বিশেষ করে বুকের, গলার আর কোমরের। ঘাড়ের নিচে উঁচু কিছু রেখে মাথাটা নিচে নামিয়ে থুতনি উপরে রাখতে হবে, যাতে শ্বাসপ্রশ্বাস চলাচলে বাধা তৈরি না হয়। যদি ৩ মিনিটের মধ্যে জ্ঞান না ফেরে, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিকটস্থ চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

প্রয়োজনীয় উপদেশ : 

১. সদ্যজাত শিশুদের সবসময় ঢেকে রাখতে হবে, যেন শরীর উষ্ণ থাকে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন ঘেমে না যায়। 
২. গরমের সময় মশা, মাছি, পিঁপড়া ইত্যাদি পোকামাকড়ের প্রকোপ বেড়ে যায়। এগুলো শিশুর অসুস্থতার কারণ হতে পারে। ঘরকে পোকামাকড়মুক্ত রাখতে হবে। 
৩. গরমে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং ধুলাবালি থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। 
৪. বাইরে বের হলে শিশুর জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে।
৫. ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে, যেন র‌্যাশজাতীয় সমস্যা না হয়। 
৬. প্রচুর পানি খাওয়াতে হবে, যেন প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে।
৭. গরমের সময় প্রচুর মৌসুমি ফল পাওয়া যায়। মৌসুমি ফল শিশুকে খেতে দিন। জুস করে দিতে পারেন। এতে শিশুর ভিটামিনের চাহিদা মিটবে ও শিশুর পুষ্টিও পূরণ হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। 
৮. ঘেমে গেলে ঘাম মুছে দিতে হবে। শরীরের ঘাম শুকিয়ে গেলে শিশুর ঠান্ডা লাগতে পারে। 
৯. যতটা সম্ভব শিশুকে সদ্য তৈরি খাবার ও তাজা ফলমূল খাওয়াতে হবে। 

এই সময়টাতে গরমের জন্য প্রায় সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ নানান কর্মক্ষেত্র বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। তার মধ্যে আবার মৃত্যু সংবাদ সম্মেলন করছে চারপাশে।  

গরমকালে নানারকমের অসুখ বিসুখের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

গরমকালে শরীরে ঘামের পরিমাণ বেড়ে যায়। আমরা জানি সাধারণত ঘামের মাধ্যমে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়।

কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কারণে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তারতম্য ঘটলে এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় সমস্যার সৃষ্টি হয়।

গরমের সময় তাপমাত্রা ও আদ্রতা বেড়ে যায়।

ফলে শরীরে রক্তসঞ্চালন ক্রিয়া, কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ওপর এই তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বৃদ্ধির প্রভাব পড়ে। এর ফলে শরীরে দেখা দেয় বিভিন্ন অসুখ বিসুখ।
গরমে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ঘাম শরীরে শুকিয়ে গেলে, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও ধুলাবালির মধ্যে বেশিক্ষণ থাকলে ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণত এ সময় ঘামাচি, সামার বয়েল (ছোট লাল দানার মতো গোটা, যেখান থেকে পুঁজ তৈরি হতে পারে), পানি শূন্যতা ইত্যাদি দেখা দেয়।
এসব রোগবালাই মোকাবেলায় বেশি করে পানি পান করতে হবে। পানির সঙ্গে অন্যান্য পানীয়, যেমন ডাবের পানি, ফলের জুস খাওয়ার মাধ্যমেও উপকার পাওয়া যেতে পারে।

তবে প্যাকেটজাত জুস না খেয়ে তাজা ফলের রস খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। এছাড়া প্রতিদিন গোসল করতে হবে, সম্ভব হলে সাবান দিয়ে, এতে ত্বকের ওপর জমে থাকা ময়লা ও রোগ জীবাণু দূর হবে। ঘামাচির জন্য শরীরে নন-মেডিকেটেড ট্যালকম পাউডার ব্যাবহার করা যেতে পারে। সামার বয়েলের ওপর বরফ ঘষলে উপকার পাওয়া যাবে। তবে পেকে গিয়ে পুঁজ হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম লাগাতে হবে বা ওষুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া রোদে বাইরে বের হওয়ার আগে সম্ভব হলে শরীরের অনাবৃত অংশে সানস্ক্রিন লোশন মাখিয়ে নেওয়া উচিৎ। হাত পাখা ছোট্ট রুমাল পানির বোতল ছাতা এইসব সরঞ্জাম সাথে রাখলে কিছুটা হলেও উপকার পাবেন।

গরমে পানিবাহিত অসুখ-বিসুখেরও প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। গরমের কারণে পানির চাহিদা বাড়ে। চাহিদা মেটাতে মানুষ অস্বাস্থ্যকর বিভিন্ন উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে। তাছাড়া গ্রীষ্মকালে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য মানুষ রাস্তার পাশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুত আখের রস,আমের জুস, তরমুজের জুস, কাঁচা আমের বর্তা, আইসক্রিম,শষা, শরবত ইত্যাদি কিনে খায়। এর কারণেও দেখা দেয় বিভিন্ন ধরণের অসুখ বিসুখ।

গরমকালে অসুখ বিসুখের মধ্যে ডায়রিয়া, টাইফয়েড জ্বর, হেপাটাইটিস বি, লিভারের ইনফেকশন বা জন্ডিস, পেটের প্রদাহ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব অসুখ থেকে নিরাপদ থাকতে হলে অনিরাপদ উৎস থেকে পানি সংগ্রহ ও পান থেকে বিরত থাকতে হবে।
রাস্তায় পানির তেষ্টা পেলে প্রয়োজনে ভালো প্রতিষ্ঠানের বোতলজাত পানি কিনে খেতে হবে, কিন্তু রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া শসা, পেঁপে, তরমুজ, আখের রস, শরবত ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। যে পানিতে ফলগুলো ধোয়া হয়, তা সাধারণত স্বাস্থ্যসম্মত হয় না।

এছাড়া দোকানে চা খাওয়ার ক্ষেত্রেও সাবধানে থাকতে হয়। কারণ যে পানিতে চা তৈরি হয়, তা বিশুদ্ধ নাও হতে পারে। অনেকে মনে করেন যে পানি গরম করলেই রোগজীবাণু মরে যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পানি ফুটতে শুরু করার পর অন্তত ৩০ মিনিট আগুনে না রাখলে বেশির ভাগ জীবাণু মরে না। শরীরে পানি ও খনিজ লবণের অভাব পূরণের জন্য প্রয়োজনে ওরস্যালাইন ও গ্লুকোজ খেতে হবে। পেটের প্রদাহ এড়াতে বাসি, তেলে ভাজা-পোড়া খাবার এবং হোটেলে খাওয়া বাদ দিতে হবে।

গরমের আরেক আপদ মশা। গরমকালে এডিস ও অ্যানোফিলিস মশা অসুখ ছড়ায়। এর ফলে হতে পারে ডেঙ্গু জ্বর ও ম্যালেরিয়ার মত রোগ। মশা প্রতিরোধ করতে হলে বাড়ির আশপাশের ডোবা-নালা, ড্রেন পরিষ্কার রাখতে হবে। মশারি, মশার কয়েল ও ইনসেক্ট স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। জ্বর দেখা দেওয়ামাত্রই অ্যান্টিবায়োটিক না খেয়ে অন্তত তিন দিন দেখে তারপর ওষুধ খেতে হবে। যদিও অনেকে অপেক্ষা না করেই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলে এটা ঠিক নয়।আবার কেউ কেউ ফার্মেসিতে বসে থাকা করর্মী বা ফার্মাসিস্টদের ডাক্তার ভেবে তাদের দেওয়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে। রেজিস্ট্রার ডাক্তার-এর পরামর্শ ব্যাতিত অ্যান্টিবায়োটিক সেসব করা কখনোই ঠিক না। জ্বর কম রাখতে কোনো অবস্থাতেই এ সময় প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়া যাবেনা।
 
গরমে ভাইরাসের কারণেও অসুখের সৃষ্টি হয়। গরমে ভাইরাল ফিভার বা ভাইরাস জ্বর, হাম ইত্যাদি অসুখ দেখা দেয়। ভাইরাল ফিভারে সাধারণত শরীরের মাংশপেশিতে ব্যথা হয়, সর্দিও থাকে। এমন লক্ষণ দেখা দিলে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার দরকার নেই। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসের বিপক্ষে কোনো কাজ করতে পারে না।

ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। যেকোনো জ্বরেই শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। এছাড়া জ্বর কমাতে গা স্পঞ্জ কর‍া যেতে পারে। হামে আক্রান্তদের অন্তত এক সপ্তাহ পূর্ণ বিশ্রামে থাকা উচিত।

গরমে প্রচুর ঘামার ফলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এর ফলে শরীরে রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা, মাংসপেশিতে ব্যথা, অবসন্নতা, পেট ব্যথা, মাথা ঘোরানো ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে। এজন্য বেশি তাপমাত্রায় বা রোদে দীর্ঘ সময় কাজ কর‍া যাবে না। পাশাপাশি অভ্যাস না থাকলে ভারী কাজ ও শারীরিক পরিশ্রম থেকেও দূরে থাকতে হবে। এছাড়া বেশি করে পানি এবং অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে।
 
গরমে দেখা দিতে পারে হিট স্ট্রোক। হঠাৎ করে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে শরীর আকস্মিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এ সময় ত্বক শুকিয়ে যায়, পালস বেড়ে যায়, তীব্র মাথাব্যথা হয়, বমি বমি ভাব হয়। অনেক সময় রোগী অজ্ঞানও হয়ে যায়। এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগীকে ছায়াযুক্ত স্থানে বাতাস করতে হবে। মাথায় পানি ঢেলে বা শরীর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে। তবে হিটস্ট্রোক আক্রান্ত রোগীকে তাৎক্ষণিকভাবে মুখে পানি বা অন্য কোনো খাবার দেওয়া যাবে না।
গরমকালে সাধারণত বড়দের থেকে ছোটরাই বেশি আক্রান্ত হয়। তাই গরমের সময় তাদের প্রতি বাড়তি নজর রাখতে হবে।

খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার চোখ ভেতরে ঢুকে গেছে কি না, বাচ্চা কম প্রস্রাব করছে কি না, বা পাতলা পায়খানা বেশি হচ্ছে কি না। এর যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা গেলেই দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। এ সময় শিশুদের মূলত ডিহাইড্রেশন ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে দেখা দেয়।

শিশুদের এ রোগ থেকে সুস্থ রাখতে মায়ের দুধ পান করা বাচ্চাকে ঘন ঘন দুধ খাওয়াতে হবে। আলাদা করে বাইরের দুধ বা পানি দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বাতাস আছে বা ফ্যান আছে এমন ঘরে শিশুদের রাখতে হবে। তবে সরাসরি গায়ে বেশি বাতাস লাগে, এমন জায়গায় রাখা যাবে না। এছাড়া বাচ্চাদের কড়া রোদে বের করা যাবে না। ডিহাইড্রেশন ও পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হলে দ্রুত স্যালাইন ও তরল জাতীয় খাবার খেতে দেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ [email protected]