বরিশাল নথুল্লাবাদস্থ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দফায় দফায় হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ শনিবার (৪ মে) সন্ধ্যার পর বাস টার্মিনাল এলাকায় ব্যাপক গাড়ি, দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যাত্রীরা।
জানা গেছে, সকালে বহিরাগতের হামলায় ২ বাস শ্রমিক আহতের ঘটনায় উত্তেজনা দেখা দেয়। পরবর্তীতে বাস শ্রমিকদের সড়ক অবরোধে বরিশালের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলসহ বিভাগের অন্য ৫ জেলার সঙ্গে যান চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়। দুপুরের দিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বিকেলে শ্রমিক ইউনিয়নে ফের দু’গ্রুপের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সন্ধ্যার পর পুরো এলাকা জুড়ে বাস শ্রমিক ও মাহিন্দ্রা শ্রমিকদের মধ্যে হামলা শুরু হলে গাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। উভয় গ্রুপ লাঠিসোটা নিয়ে হামলা শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
সর্বশেষ রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় দু’দল শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিলো। দিনব্যাপী এ হামলা-পাল্টা হামলা ও রাতে ভাঙচুরের সময় পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
শ্রমিকরা জানান, মাদারীপুরের উদ্দেশে বেলা ১২টার দিকে একটি বাস যাত্রী নিয়ে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা ত্যাগ করছিল। তখন একটি মোটরসাইকেলকে সাইড নেওয়ার জন্য বাসের চালক হর্ন বাজান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মোটরসাইকেলে থাকা আরোহীরা বাসের চালককে মারধর করেন। আর তাকে বাঁচাতে অন্য একজন এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর করা হয়। এ সময় বাসের চালক শাকিল ও সৌরভকে মারধরের খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
এ সময় তারা বিক্ষোভ করে এবং হামলাকারীদের আটক করে মারধরের চেষ্টাও করেন অনেকে। শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে একপর্যায়ে টার্মিনালের সামনের বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে।
আহতদের অভিযোগ, বহিরাগতরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েয়েছে। হামলাকারীরা বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নবনির্বাচিত সভাপতি কাজী কবিরের ঘনিষ্ঠজন। কবিরের লোকজন কিছুদিন ধরেই নথুল্লাবাদ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু তারা কেউ পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে জড়িত নন। পরবর্তীতে দীর্ঘ আলোচনা শেষে সমঝোতার আশ্বাসে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় নথুল্লাবাদ এলাকার।
বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম ফকির বলেন, ঘটনার সময় তিনিসহ নেতা-কর্মীরা টার্মিনালের ভেতরে অফিস কক্ষে ছিলেন। চালকের ওপর হামলার খবর শুনে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে আসেন। পরে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান।
তিনি বলেন, কি ঘটনায় হামলা তা আমি জানি না, তবে বহিরাগতরা এ হামলা করেছে। ভবিষ্যতে কেউ টার্মিনালের ভেতরে বহিরাগতদের নিয়ে আসতে পারবে না এবং কোনো প্রশ্রয়ও নিতে পারবে না।
এদিকে শ্রমিকদের অভ্যন্তরীণ ঘটনাকে উসকানি দিয়ে তৃতীয় পক্ষ সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন জেলা বাস মালিক সংগঠনের নেতারা। আর পুরো ঘটনা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি অসীম দেওয়ান।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন জানান, নথুল্লাবাদে শ্রমিক ইউনিয়েনর দু’পক্ষের মধ্যে অনেকদিন ধরে সমস্যা আছে। পাল্টাপাল্টি কমিটি থাকলেও বর্তমানে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। এখানে শ্রমিক ইউনিয়নের যে অফিস ছিল সেটি মে দিবস উপলক্ষে একপক্ষ খুলে দেয়। এতে অন্য পক্ষের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে প্রথমে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে টার্মিনালের ভেতরেও দু’পক্ষের মারামারি হয়। একপর্যায়ে তারা সড়কে এসে অবরোধ করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দুইপক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের বিষয় না ঘটে সে লক্ষে পরবর্তীতে আবারও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর