বাংলাদেশ সরকারের চলমান শিক্ষাখাতে উন্নয়নমূলক মেগা প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান। এটি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচি যা নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইলে আধুনিক ‘মোবাইল ব্যাংকিং’ এর মাধ্যমে হাতে হাতে টাকা পৌঁছে যায়। এভাবে দীর্ঘ বছর ধরে বর্তমান সরকার এই সেবা দিয়ে আসছে শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামে। কিন্তু সরকারের এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগ ব্যাহত করছে কিছু অর্থ লোভী স্বার্থানেস্বী দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা।

এমন ঘৃণিত ঘটনাটি ঘটেছে নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে।

অভিযোগ উঠেছে ইনাতগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে। তিনি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ৪ শিক্ষার্থীর ২৩ হাজার ২ শত  উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শিক্ষক নাজমুল হুদা নিজের মোবাইল নাম্বার ও তার ভাই পিয়াস আহমেদের নাম্বারে উপবৃত্তির টাকা ঢুকে। সেই টাকা হাতিয়ে নেন এই শিক্ষক।

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা গরীব ও হত দরিদ্র। পে-রোল রিপোর্ট অনুযায়ী প্রদত্ত সেইসব নাম্বারে বিগত-২০২২-২৩ অর্থ বছর হতে শিক্ষার্থীদের জন্য আসা উপবৃত্তির টাকা নিয়মিত চলে যায়। আর সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন ওই শিক্ষক।

উপবৃত্তির তালিকায় থাকা একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জামিল মিয়ার ক্ষেত্রে কলেজ শিক্ষক নাজমুল হুদার ভাই পিয়াসের নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বর ব্যবহার করা হয়। 

একই শ্রেণির শিক্ষার্থী রকমিনা আক্তার,আশ্রবী বেগম ও সুমাইয়া বেগমের টাকা আসে শিক্ষক নাজমুল হুদার  বিকাশ অ্যাকাউন্টে। 

বিষয়টি প্রকাশ হলে কলেজের অধ্যক্ষ সঞ্জিত সেন তাৎক্ষণিক শিক্ষকদের নিয়ে জরুরি সভা করেন। সভায় শিক্ষক নাজমুল হুদা ৪ শিক্ষার্থীর ৬ মাসের উপবৃত্তির ২৩ হাজার ২ শত টাকা কলেজের অধ্যক্ষ্যর কাছে ফেরত দেন। এলাকাবাসী অভিভাবকদের প্রশ্ন ৬ মাসে যদি উপবৃত্তির ২৩ হাজার ২ শত টাকা হয়,তাহলে এক বছরে ৪৬ হাজার ৪ শত টাকা। আর বিগত ১০ বছর ধরে শিক্ষক নাজমুল হুদা এই বিষয়ে তদারকি করছেন।

এই ১০ বছরে তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ধারণা এলাকাবাসীসহ অভিভাবকদের। পাশাপাশি শিক্ষক নাজমুল হুদা দীর্ঘদিন যাবত এমন ঘৃণিত কাজে জড়িত থাকলেও কলেজের অধ্যক্ষ সঞ্জিত সেন নির্বিকার কেন এমন প্রশ্নও এলাকাবাসীর। 

অভিভাবকরা বলেন, তাদের সন্তানেরা গত বছর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর তাদের নামে উপবৃত্তি হয়। শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করলে তারা আসবে বলে আশ্বস্ত করেন। এমনকি করোনার কারণে সরকার সেটা বন্ধ করে রেখেছে বলেও জানান। একেক সময় একেক কথা বলেন। এখন জানলাম টাকা ঠিকই এসেছে কিন্তু তাদের সন্তানেরা টাকা পাননি। সেই টাকা আত্মসাৎ হয়ে গেছে। তারা ওই দুর্নীতিবাজ শিক্ষকসহ তার সাথে যারা জড়িত তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক নাজমুল হুদা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কলেজের অধ্যক্ষ সঞ্জিত সেন- এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। 

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাশ অনুপ বলেন বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবো।

সালাউদ্দিন/সাএ