ইন্দ্র মনি বয়স (৭০) ছুঁই ছুঁই। শেষ জীবনে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে চান!অন্যের দেয়া ৫ শতক জমিতে কোনোরকম ঝড়াজির্ন ঝুপড়ি ঘরে বসবাস ১০ বছরের বেশি সময় ধরে।
বরগুনার আমতলীতে গুলিশাখালি ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রামের ইন্দ্র মনি (৭০) জীবনের তাগিদে কখনো গৃহকর্মীর কাজ কখনো বা দিনমজুরের। এ কাজ করেই সংসারের হাল চালিয়েছেন। ইন্দ্র মনি এখন বয়সের ভাড়ে সেই কাজটিও করতে পারেন না। বৃদ্ধের ছাপ স্পষ্ট চোখে মুখে ফুটে উঠেছে। রোগা-সোগা এই বৃদ্ধা তিনবেলা খাবারও ঠিকমতো খেতে পারেন না। খাবারের জোগান দিতে যেন তার ‘ভাত আনতে পান্ত ফুরায়’ স্বামী, সন্তান হারা, ছেলের বউ ও নাতি নাতনিদের কোনো মতে বেঁচে আছেন। ইন্দ্র মনির নিজস্ব কোনো আয় নেই।
ছেলের বউয়ের চায়ের দোকান থেকে যা উপার্জন করেন তিন বেলাও ঠিকমতো খাওয়া হয় না তাদের। সংসারে উপার্জনক্ষম পুরুষ না থাকায় পড়ালেখাও হয়নি বাচ্চাদের।
কখনও আধাবেলা কখনও না খেয়ে কাটালেও দিনশেষে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু নেই। ছোট ছাপড়ার ঝুপড়ির মতো হালকা জড়াঝির্ন টিন শেডের ঘর তার। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের টিনের ছাউনি থেকে ঝুপঝুপ করে বৃষ্টির পানি ঝরে পড়ে। ঘরের ভিতরের সব কিছু ভিজে তছনছ হয়ে যায়। বৃষ্টি র সময়ে তার আশ্রয় হয় অন্যের বাড়িতে।
পানি কাদায় ঘরের ভিতর চলাফেরা করতে ঝামেলা পোহাতেও হয় তাদের। ঘরের চারপাশে ভালো বেড়া না থাকাতে বাতাসে বৃষ্টির পানি বেড়ার ফাঁক দিয়ে আসে। একটু ঝর বাতাস আসলেই ঘরের টিনের ছাউনি উড়িয়ে নিয়ে যায়।
ভূমিহীনদের ঘর উপহার দিয়েছে সরকার। ভেবেছিল সেও ঘর পাবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত পেল না। ঝুপড়ি ঘরেই থাকতে হচ্ছে তাকে। একটি ঘরের জন্য বারবার ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যানের কাছে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি, কিছুই মেলেনি তার। বর্তমানে অসহায় জীবনযাপন করছেন এই বৃদ্ধার ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রায়ণ প্রকল্পের অধীনে সারা দেশের ন্যায় আমতলী উপজেলায় কয়েক ধাপে হতদরিদ্রদের ঘর দেয় সরকার। বৃদ্ধা একটি ঘর পাওয়ার আশায় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও এক বুক হতাশার চিহ্ন নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছে তাকে।
ইন্দ্র মনি হতাশা কণ্ঠে বলেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলো না। স্বামী সন্তান হারা আমি পরিবারকে নিয়ে কোথায় যাবো? কে সাহায্য করবে আমাকে? আমার প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন আমাকে যেন একটা ঘর দেয়। মৃত্যুর আগে হলেও যেন সে পথে থেকে যেতে পারি।
সাথি রানী বলেন, আমার চার ছেলে মেয়েদের কে নিয়ে কোথায় কার কাছে যাবো? ওদের বাবা মারা গেছেন তাও ১০ বছর। তখন থেকেই এই ঝুপড়িতে বসবাস করছি। ভাত'ই ঠিকমতো খেতে পারি না-ঘর তুলবো কি করে? বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে পারি নাই বলে-স্কুলেও পাঠাতে পারি না।
গুলিশাখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড : মনিরুল ইসলাম মনি বলেন ,ইন্দ্র মনি ঘর পাওয়ার যোগ্য হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে মুজিব বর্ষের ঘর ‘যার জমি আছে সে ঘর পাবে’ প্রকল্প আওতায় তাকে ঘর দেয়াড় জন্য সুপারিশ করা হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি তার ৬ শতক জমি আছে, আবেদন করলে তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর