নবীগঞ্জে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিএনপির চিংড়ীর মাছের সাথে পাসের জন্য লড়াই করছেন আওয়ামী লীগের ৫জন নেতা। একাই বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মুজিবুর রহমান শেফু আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ৫জন প্রার্থীকে নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের যে প্রার্থীই পাস করেন না কেন মূল লড়াই হবে চিংড়ির সাথে এই আলোচনা নবীগঞ্জের সর্বত্র।
আগামী ২১ মে নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন প্রার্থীর মধ্যে লড়াই জমে উঠেছে। নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
প্রতিদিনই দিবারাত্রি প্রার্থীরা জমজমাট প্রচার প্রচারণা করছেন। উঠান বৈঠক, বাড়িবাড়ি গিয়ে লিফলেট পোস্টার পেটুন বিতরণ চলছে। বিভিন্ন বাজার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো পোস্টার লিফলেট ও ব্যানারে চেয়ে গেছে। ফুটপাতের দোকান থেকে চায়ের টেবিলে এখন ভোটের আলোচনা জমে উঠেছে। আজ (১৯ মে) রাত ১২টার পর থেকে প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাবে।
বিএনপির মুজিবুর রহমান শেফুর চিংড়ি মাছের সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় ৫ জন প্রভাব শালী প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। সরাসরি বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও নবীগঞ্জে মূল লড়াই হবে বিএনপি আওয়ামী লীগের মধ্যে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। নবীগঞ্জে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির একক প্রার্থী রয়েছে।কিন্তু উক্ত দুই পদে আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা ভিন্ন পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীরা আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামীলীগের কাছে থেকে পদ ছিনিয়ে নিতে। এদিকে নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের সাথে সাথে নবীগঞ্জ উপজেলা সর্বত্র উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সরগরম হয়ে উঠে। নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলাসহ গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। প্রার্থীরা বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়, মতবিনিময়সহ দোয়া কামনা করছেন। প্রার্থীরা এলাকার উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে-উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মজিবুর রহমান চৌধুরি শেফু (চিংড়ি মাছ), নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. ইমদাদুর রহমান মুকুল (হেলিকপ্টার), হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম নূরউদ্দিন চৌধুরি বুলবুল (দোয়াত কলম), বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ফজলুল হক চৌধুরি সেলিম (ঘোড়া), জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ (মোটরসাইকেল), জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন চৌধুরি (আনারস) জাতীয় পাটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহ আবুল খায়ের (কৈ মাছ), যুক্তরাজ্য প্রবাসী শেখ মোস্তফা কামাল (কাপ পিরিচ)।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরি (তালা), বর্তমান নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গতি গোবিন্দ দাশ (মাইক), পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আলিম ইয়াছিনী (টিয়াপাখি), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আলমগির আহমেদ চৌধুরি সালমান (বৈদ্যুতিক বাল্ব), যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা মো. অনড় উদ্দিন জাহিদ (উড়োজাহাজ), জাতীয় পাটির নেতা মুরাদ আহমদ (চশমা),কৃষক লীগের নেতা হেলাল চৌধুরি (আইসক্রিম) রুবেল আল মামুন তালুকদার (টিউবওয়েল), মো. সিদ্দিকুর রহমান চৌধুরি (বই)।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে- বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম (হাঁস) এবং উপজেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ছইফা রহমান কাকলি পেয়েছেন (ফুটবল) প্রতীক।
হবিগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রভাংশু সোম মহান প্রতীক বরাদ্দ দেয়াড় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ উপজেলায় আগামী ২১ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নবীগঞ্জে মোট ভোটার ২ লাখ ৮২ হাজার ৭ শত ১৪।
নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান শেফু বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি শতভাগ আশাবাদী বিজয়ী হবো। তিনি বলেন আমি জনগণের চাপে প্রার্থী হয়েছি। আমি একাই আওয়ামী লীগের ৫ জনের সাথে লড়াই করছি। প্রশাসনের লোকজন বলছেন আমি চাপ মুক্ত নির্বাচন করতে তারা মাঠে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করবেন। আমি এখন মাঠে লেভেল প্লেয়িং দেখছি এই অবস্থা থাকলে আমা কোন অভিযোগ নেই।
হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম নূর উদ্দিন চৌধুরি বুলবুল বলেন, বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন দিবে এবং বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন দলীয় ভাবে বিএনপি নির্বাচন বর্জন বললো তাদের নেতাকর্মীরা পুরোদমে মাঠে কাজ করছেন। তাই লড়াই হবে আওয়ামী লীগ বিএনপির মধ্যে।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জিলুফা সুলতানা বলেছেন, নবীগঞ্জে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সকল প্রার্থীর জন্য আইন সমান থাকবে। নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ। নির্বাচনে কোনো ধরনের বলপ্রয়োগ-বিশৃংখলা-অনিয়ম ও জালিয়াতি বরদাশত করা হবে না। আইন হাতে তুলে নিলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা একটি দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন উপহার দিতে চাই। এজন্য সকল প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই।
পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন (বিপিএম সেবা) আরো বলেন, ভোট হবে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। কোন ভোটারকে কেউ কেন্দ্রে আসতে বাধা দিলে তাকে কঠোর হাতে দমন করবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভোটের দিন পুরো উপজেলায় নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো থাকবে। ইতিমধ্যে আমাদের পুলিশের চৌকস দল ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আপনারা সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং আপনাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। সুষ্ঠু ভোট প্রদানে কেউ বাধা প্রদান করলে সাথে সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাবেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর