
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে মঙ্গলবার রাতে নেত্রকোনার পূর্বধলার দুলচাপুর গ্রামে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকের পোল্ট্রি ফার্মে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও পুকুর পাড়ের গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। হামলাকারীরা বিজয় মিছিল করে তাণ্ডব চালায়। এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আসাদুজ্জামান নয়নের সমর্থক সাইদুল ইসলামের পোল্ট্রি ফার্মে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকরা মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বিজয় মিছিল করে ফার্মের ভেতর প্রবেশ করে তাণ্ডব চালায় এবং ভাঙচুর করে। এসময় প্রায় ১০ লক্ষ তাকার ক্ষতি সাধন করেছে ফার্মের মালিকের দাবি। রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার পূর্বধলার চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করেন। তারা হচ্ছেন- আসাদুজ্জামান নয়ন (দোয়াত কলম), মো. মাছুদ আলম তালুকদার টিপু (আনারস) ও এ টি এম ফয়জুর সিরাজ জুয়েল (মোটর সাইকেল)। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় আসাদুজ্জামান নয়নের সমর্থকদের সাথে অপর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের বিরোধ চলছিল।
এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মাছুদ আলম তালুকদার টিপু ও এ টি এম ফয়জুর সিরাজ জুয়েলের অভিযোগ আসাদুজ্জামানকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নেত্রকোণা- ৫ (পূর্বধলা) আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। দুই প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা ও কর্মী সমর্থকদের মারপিটের অভিযোগও ওঠে আসাদুজ্জামান সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
এরই জের ধরে মঙ্গললার পূর্বধলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে রাত পৌনে ১০ টার দিকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী প্রার্থী এ টি এম ফয়জুর সিরাজ জুয়েলের সমর্থক ইপজেলার ইয়ারন গ্রামের টিটু, জয়, মহেন্দ্রপুর গ্রামের রমজান, দুলচাপুর গ্রামের তৌফিকসহ ২৫-৩০ জন বিজয় মিছিল বের করে। মিছিল শেষে ২৫-৩০জন লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের দুলচাপুর গ্রামে আসাদুজ্জামান নয়নের সমর্থক সাইদুল ইসলামের পোল্ট্রি ফার্মে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ফার্মের ডিম ভাঙচুর করে, ডিম ও মোরগ নিয়ে যায়। ফার্মের ভেতর পুকুর পাড়ের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলে। এ সময় সাইদুল ইসলাম ফার্মে ছিলেন না।
হামলাকারীরা তার স্ত্রী ও সন্তানদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকি প্রদান করে। ফার্মের মোরগ ও নগদ নিয়ে যায়। অস্ত্রের মহড়া দিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। খবর পেয়ে রাতেই পূবধলা থানা পুলিশ ঘটনাস্হল পরিদর্শন করে।
ফার্মের মালিক সাইদুল ইসলাম বলেন, আমি আসাদুজ্জামান নয়নের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেছিলাম। এ জন্য নির্বাচনের আগে থেকেই মোটর সাইকেলের সমর্থকরা আমাকে নানা ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। নির্বাচন শেষে মোটর সাইকেল নিয়ে বিজয় মিছিল করে হামলা চালায়। তারা আমার খামারের ৭০০ থেকে ৮০০ মোরগ নিয়ে গেছে। মোরগের ডিম ভেঙে ফেলেছে পুকুর পাড়ে কলা গাছসহ বিভিন্ন জাতের গাছ কেটে ফেলেছে। ডিম বিক্রির প্রায় ৫ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। রাতেই পুলিশ দেখে গেছে। আমি থানায় মামলা করব। পুলিশ ও ডিএসবির লোকজন দেখে গেছে।
সাইদুল ইসলামের স্ত্রী মোসা. আঙ্গুরা খাতুন বলেন, মোটর সাইকেলে করে ২৫-৩০জন আমাদের ফার্মে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। মোরগ নিয়ে গেছে। আমার স্বামী, চেলে ও পরিবারের লোকজনকে দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়ে গেছে। আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।
চেয়ারম্যান পদে এ টি এম ফয়জুর সিরাজ জুয়েলের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি মোবাইল রিসিভ করেন নি।
পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের পর মঙ্গলবার রাতে একজন প্রার্থীর সমর্থকের মোরগের ফার্মে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ রাতেই ঘটনা¯ল পরিদর্শন করেছে। এ ব্যাপারে এখনও থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর