রাজবাড়ীতে একটি বাড়ি থেকে তিনটি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে চোরচক্র। এসময় গোয়াল ঘরের মধ্যে একটি মানিব্যাগ, দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও নাম-ঠিকানা ফেলে রেখে যায় তারা।
রোববার (২১ জুলাই) দিবাগত রাতে সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের কৃষক নুরুউদ্দীন প্রামাণিকের বড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
নুরুউদ্দীন প্রামাণিক জানান, তার গোয়াল ঘরে তিন লাখ টাকা মূল্যের একটি ষাঁড় ও দুটি গাভী গরু ছিল।রোববার দিবাগত রাত ১০ টার দিকে গোয়াল ঘর তালা দিয়ে পরিবারের সদস্যরা সবাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২ টার দিকে তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বের হয়ে দেখেন গোয়াল ঘরের দরজা খোলা। এসময় তিনি দৌড়ে ঘরের ভেতরে গিয়ে দেখেন একটি গরুও ঘরে নেই। তবে সেসময় তিনি গোয়াল ঘরের মেঝেতে একটি মানিব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেন। মানিব্যাগের মধ্যে আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী এক যুবকের পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি এবং ছবির খামের ওপর এক ব্যক্তির নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দেখতে পাওয়া যায়।
এদিকে, খামে দেয়া ঠিকানার সূত্র ধরে ওই এলাকার ইউপি সদস্য শেখ শফিকুল আজমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ইউপি সদস্য বলেন, আমার এলাকায় এই নামে একজন আছেন। তবে তিনি খারাপ ছেলে নন। তিনি ও তার বাবা ইট-খোয়ার ব্যবসা করেন। তারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তবে তার আপন চাচাতো ভাই গরু চোর চক্রের সঙ্গে জড়িত।
এর আগে তিনি উত্তরবঙ্গে চোরাই গরু বোঝাই ট্রাক নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন। তখন তিনি পুলিশের কাছে চুরির সঙ্গে ফেলে যাওয়া ঠিকানার যুবকের জড়িত থাকার কথা জানান। কিন্তু পুলিশ তদন্তে চুরির সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা পায়নি। মূলত পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে তাকে ফাঁসাতে পুলিশের কাছে মিথ্যা বলেছিলেন তার চাচাতো ভাই। এবারও হয়তো তাকে ফাঁসাতে মানিব্যাগে নাম-ঠিকানা লিখে গোয়াল ঘরে ফেলে এসেছে। তা না হলে যে চুরি করবে সে কখনও নিজের নাম-ঠিকানা লিখে ফেলে আসবে এটা অবিশ্বাস্য।
ইউপি সদস্যের কাছ থেকে ওই যুবকের মোবাইল নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ও আমার বাবা ইট ও খোয়ার ব্যবসা করি। আমার আরেক ভাই জমি মাপার কাজ করেন। আমিও মাঝেমধ্যে জমি মাপার কাজ করি। আমরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তবে আমার আপন চাচাতো ভাই গরু চোর চক্রের অন্যতম হোতা। দীর্ঘদিন ধরে তাদের সঙ্গে আমাদের জমিজমাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলছে। দেড় বছর আগে তিনি সিরাজগঞ্জে চোরাই গরু বোঝাই ট্রাক নিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। সে সময় তিনি আমাদের ফাঁসাতে পুলিশের কাছে আমার ও আমার বাবার নাম বলে। পরে পুলিশ তদন্ত করে চুরির সঙ্গে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা পায়নি। এরপর আমরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বোয়ালমারী থানায় জিডি করি।
আলী শেখ বলেন, আমার ধারণা এবারও আমাকে ফাঁসানোর জন্য গরু চুরি করার পর আমার নাম-ঠিকানা লিখে ফেলে রেখে এসেছে।
নাম-ঠিকানার সঙ্গে লেখা মোবাইল নম্বরটি কার জানতে চাইলে তিনি পুরো নম্বরটি শুনে বলেন, ‘এই মোবাইল নম্বর আর আমার মোবাইল নম্বরের মধ্যে একটি ডিজিট উল্টা-পাল্টা লেখা হয়েছে। অর্থাৎ ৬৫ লিখতে গিয়ে ৫৬ লিখেছে। মূলত সে আমার নম্বর লিখতে গিয়ে ভুল করেছে। তাহলে আপনারাই বুঝে নেন কিভাবে আমাকে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আমি এর বিচার চাই।’
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইফতেখারুল আলম প্রধান বলেন, 'গরু চুরি ও গোয়াল ঘরে মানিব্যাগ ফেলে রেখে যাওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
সর্বশেষ খবর