
বিশ্বের দ্বিতীয় এবং দেশের সর্ববৃহৎ দানাদার ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে অবস্থিত যমুনা সার কারখানায় (জেএফসিএল) গ্যাস সংযোগ দিয়ে চালু করার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে কারখানার প্রধান ফটকের সামনে যমুনা সার কারখানা শ্রমিকদল আঞ্চলিক শাখা ও উপজেলা শ্রমিকদলের আয়োজনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। গত ১৫ জানুয়ারি বিকালে আওয়ামিলীগ সরকার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কারখানার সার উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
স্থানীয় ও কারখানা সূত্র জানায়, দীর্ঘ প্রায় নয় মাস যাবৎ যমুনা সার কারখানা গ্যাস সংযোগ না দেয়ায় বন্ধ রয়েছে। এতে করে একদিকে সরকার বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অপরদিকে কারখানার গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত গ্যাস সংযোগ দিয়ে চালু করার দাবিতে কারখানার প্রধান ফটকের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবীর তালুকদার শামিম। বক্তব্য রাখেন, উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম তালুকদার, উপজেলা বিএনপির সদস্য চান মিয়া চানু, পোগলদিঘা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ ফকির, উপজেলা কৃষকদলে আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ, মনিরুজ্জামান আদম, রাশেদুজ্জামান লিটন প্রমুখ। বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও কর্মচারীরা তারাকান্দি এলাকায় সরিষাবাড়ি-ভুয়াপুর প্রধান সড়কে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল সরিষাবাড়ি-ভুয়াপুর সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। এতে কারখানার কয়েকশ শ্রমিক-কর্মচারী ও সার ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম তালুকদার বলেন, বিগত দিনে আওয়ামী লীগের নেতারা লুটপাট করে কারখানা ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন যমুনা সার কারখানাকে বাঁচাতে গ্যাস সরবরাহ জরুরি হয়ে পড়েছে। চলতি বছরের গত ১৫ জানুয়ারি সংকটের অজুহাতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তিতাস কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ প্রায় আট মাস কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকায় যমুনার বিভিন্ন মূল্যবান যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ বিনষ্ট হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনতিবিলম্বে যমুনায় গ্যাস সংযোগ প্রদান না করলে বৃহৎ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, যমুনা সারকারখানা বাণিজ্যিক ভাবে ১৯৯২ সালের ১লা জুলাই দানাদার ইউরিয়া উৎপাদন শুরুর পর থেকে দৈনিক ১৭০০ মে.টন দানাদার ইউরিয়া সার এবং ১০৭৮ মে.টন অ্যামোনিয়া উৎপাদনে সক্ষম। এ সারকারখানাটি ৩৭০ পিএসআই চাপে ৪৬ এমএমসিএফডি গ্যাস প্রয়োজন হয়। গ্যাস সরবরাহ ২৫০ পিএসআই থেকে ১৫০ পিএসআইএ নীচে নেমে এলে সার উৎপাদন সম্ভব হয় না। চাহিদার তুলনায় গ্যাসের চাপ কম থাকায় গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর কারখানাটির ইউরিয়া ও অ্যামোনিয়া উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর ১লা নভেম্বর সরকার গ্যাস সংযোগ সচল করার পরদিন ২ নভেম্বর উৎপাদনে ফেরে যমুনা সারকারখানা। গত ৬ ডিসেম্বর দুপুরে আবার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ত্রুটি মেরামত করে ১০ ডিসেম্বর পুনরায় কারখানার উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে গ্যাস সংকটের অজুহাতে প্রায় ছয় মাস যাবৎ সার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ কারখানা জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ীসহ উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলাসহ দেশের ১৯টি জেলায় কৃষকদের মাঝে স্বল্প সময়ে সারের চাহিদা পূরণ করে আসছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর