
এবার দুর্গোৎসবে থাকছে না তেমন কোনো জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। ধর্মীয় রীতিনীতি ছাড়া আনুষ্ঠানিকতাও কিছুটা কাটছাঁট করা হয়েছে। এ বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় কমেছে মণ্ডপের সংখ্যাও। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলছেন, বন্যার প্রভাব আর বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বল্প আয়োজনের মধ্যদিয়ে উৎসবে মেতে ওঠবেন তারা। এর মধ্যে অন্যতম কারণ আর্থিক সংকটের বিষয়টিও। এখন জেলার সবকটি মন্দিরে চলছে দুর্গোৎসবের শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি। শেষ হয়েছে মণ্ডপ সাজানোর কাজ। প্রতিমা তৈরির কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এখন বিভিন্ন মণ্ডপে চলছে রং-তুলির আঁচড়ের কাজ। আর কদিন পর ষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শুরু হবে মূল আনুষ্ঠানিকতা। তবে এবারও জেলার প্রতিটা মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।
জানা গেছে, এবার জেলায় ১০৪ টি মন্দিরে দুর্গা পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ২৮টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩১টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ২০টি এবং জীবননগর উপজেলায় ২৫টি পূজামণ্ডপে তৈরি করা হয়েছে। গত বছরে জেলায় মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ১২৩টি।
মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাঁদা-মাটির কাজ। এখন কিছু কিছু মণ্ডপে চলছে দেবী দুর্গার গায়ে রং-তুলির আঁচড়ের কাজ। তারপর সজ্জিত হবে মণ্ডপ। আলোকসজ্জা আর প্যান্ডেলে সাজবে গোটা মন্দির প্রাঙ্গণ। ৮ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে এবার দেবী আসছেন দোলনায় চড়ে। এবার খুব একটা আশীর্বাদ নিয়ে আসছে না মা দুর্গা। তবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভাষ্য, মা দুর্গা মানেই আশীর্বাদ। আর সবাইকে আশীর্বাদ দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে গমন করবেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলছেন, প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। মণ্ডপে গানবাজনা ও হলি-খেলা সিঁদুর খেলা আরও অন্যান্য বিভিন্ন আয়োজন থাকবে সীমিত। ফলে খুব একটা আনন্দ আয়োজন থাকছে না। তবে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় সবাই।
শহরতলীর দৌলতদিয়াড়ের বারোয়ারি দুর্গা মন্দিরের কোশাধ্যক্ষ অঞ্জন সাহা আবির বলেন, বন্যার প্রভাব ও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার সীমিত পরিসরে আয়োজন করা হচ্ছে দুর্গা উৎসব। পূজার সব আয়োজনে থাকবে খুবই অল্প। মন্দির নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বী কাজল চক্রবর্তী বলেন, মন্দিরের মা দুর্গার প্রতিমা তৈরির মাটির কাজ শেষ হয়েছে। আর দুইদিন পর শুরু হবে মা দুর্গার গায়ে রং তুলির আঁচড়ের কাজ। এরপর পূজা মণ্ডপগুলো সাজানোর কাজ চলবে। তারপর শুরু হবে শারদীয় দুর্গা পূজা। এবার মহা ষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে দোলনায় চড়ে আগমন ঘটাবে। গমন ঘটবে ঘোড়ায় চড়ে।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত কুমার সিংহ রায় বলেন, এবার বেশ কিছু স্থানে দুর্গাপূজা হচ্ছে না। নানাবিধ কারণের পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণও অন্যতম। এছাড়া, যেসব মণ্ডপে দুর্গাপূজার হচ্ছে সেসব মণ্ডপে ও আয়োজন নিরাপত্তাজনিত কারণে কিছুটা কাটছাঁট করা হয়েছে। তবুও ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে সব থেকে বড় এ উৎসব পালনে দিন গুণছে সনাতনীরা।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রিয়াজুল ইসলাম (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) বলেন, পূজা উপলক্ষ্যে জেলার ১০৪ টি মন্দিরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ২২টি বিশেষ মন্দির এবং ১৯ টি অতি বিশেষ মন্দিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে। সর্বোপরি সকল মণ্ডপে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকরাও দায়িত্ব পালন করবেন।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর