
হঠাৎ করেই চুয়াডাঙ্গায় আবারও বেড়েছে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রোগীর চাপ এতোটাই বেশি যে সদর হাসপাতালে সদর হাসপাতালের প্রবেশ দ্বারের বারান্দা পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয়ে আছে। পর্যাপ্ত বেড না থাকাতে অসংখ্য রোগী মেঝেতে অবস্থান করে চিকিৎসা গ্রহণ করছে। ফলে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সরা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ড ঘুরে এই অস্বাভাবিক রোগীর চাপ দেখা যায়।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনের প্রবেশ মুখে মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছে এক শিশু রোগী। তার মা সোনিয়া খাতুন শয্যাপাশে বসা। বেড না পেয়ে আর ধারণ ক্ষমতার বাইরে রোগীর চাপে মেঝেতে অবস্থান নিতে হয়েছে এক বছরের ছেলে হামজাকে নিয়ে। কয়েকদিন আগেও শিশু হামজা ঠান্ডা আর হালকা জ্বরে ভুগছিল। এরপর তার শারীরিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর নিউমোনিয়া আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসা চলছে। প্রতিদিন গড়ে এই হাসপাতালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে রোগী আসছে ৪৫ থেকে ৫০ জন। গত একসপ্তাহ ধরে নিউমোনিয়া রোগীর চাপ বেড়েছে সদর হাসপাতালে। শিশু ওয়ার্ডের দুই কক্ষ মিলে ২৬ টি বেড আছে। এর বিপরীতে রোগীর ভর্তি প্রায় দুই শতাধিকের উপরে ছুঁয়ে গেছে। ফলে নিউমোনিয়া রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে দায়িত্বরত নার্সরা। কম জনবল আর অল্প কয়েকজন নার্স দিয়ে চালানো হচ্ছে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসা। আবহাওয়া পরিবর্তনে সকাল বিকাল ও রাতে বিভিন্ন সময়ে ভ্যাপসা গরম আর হালকা ঠান্ডা অনুভূত হওয়ার কারণে এই নিউমোনিয়া আক্রান্ত হচ্ছে শিশুদের।
রোগীর স্বজনরা জানান, সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ বেশি। ফলে সেই পরিমাণ বেড নেই। তাই নিরুপাই হয়ে রোগীর সাথে রোগীর বিছানা ঠেকিয়ে মেঝেতে অবস্থান করতে হচ্ছে। হাসপাতালের প্রবেশ মুখের মেঝে পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয়ে আছে। হাসপাতালের চারপাশ খুব নোংরা পরিবেশ দুর্গন্ধের কারণে চিকিৎসা নিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। আবার কয়েকটি ফ্যান নষ্ট। যার ফলে গরমে খুব দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত বেড আর চিকিৎসক বাড়াতে হবে তাহলে চিকিৎসা ভালো হবে এই হাসপাতালে।
এক রোগী স্বজন তাসলিমা বেগম বলেন, গেল কয়দিন ধরে এই হাসপাতালে পড়ে আছি ছেলে নিয়ে। সর্দি থেকে জ্বর তারপর শুরু হয় নিউমোনিয়া। এরপর এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। কিন্তু প্রচুর রোগীর চাপ। একটু পা ফেলে যে হাঁটবো তারও কোনো পরিবেশ নেই। ফলে অনেক রোগী সব নিউমোনিয়া আক্রান্ত। ডাক্তার আসছে একবার করে দেখে চলে যাচ্ছে। আবার পরে একবার আসছে। এরপর নার্সরা সারাদিন দেখভাল করছে।
আরেক রোগীর স্বজন আজমিরা খাতুন বলেন, নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী এতোই বেশি যে শিশু ওয়ার্ড থেকেও হাসপাতালের প্রবেশ মেঝে পর্যন্ত ভরে গেছে। অনেক রোগী এত রোগী হাসপাতালে এসে কখনো এর আগে দেখিনি যে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে এই রোগী বাড়ে। এই হাসপাতালের চারপাশ খুব নোংরা আবার কয়েকটি ফ্যান নষ্ট। যার ফলে গরমে খুব দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই নিজেই অনেক সময় রোগী হয়ে যাচ্ছি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়া রোগীর বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন করে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। সব রোগী ১ মাস থেকে ১ বছরের বয়সীরা এই নিউমোনিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। এতে চিন্তার কিছুই নেই। চিকিৎসা চলছে। আর রোগীর মায়েদের বলা হচ্ছে এ সময় শিশুর খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। দুই বছরের কম বয়সি শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। কাশি হলে বুকে তেল মালিশ করার প্রয়োজন নাই। কফ পরিষ্কার বা নেবুলাইজার ব্যবহার করাও ঠিক নয়। শিশুর সংকটাপন্ন অবস্থা যেমন-শ্বাসকষ্ট, বমি, খিঁচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর