
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সোবাহান মুন্সী ঘুষ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট মুচলেকা দিয়ে আপাতত রক্ষা পেয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনা উপজেলার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘুষ আর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এই কর্মকর্তাকে দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষক কর্মচারীরা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত সোমবার (৭ অক্টোবর) কাঞ্চনপাড়া গ্রামের মুনিয়া নামের এক শিক্ষার্থী তার পিএসসি সার্টিফিকেট এর নাম সংশোধনের জন্য ১৯ নং উত্তর মহিষার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন এর কাছে যায়।
প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে টিইও স্যারের জন্য ৩ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হবে বলে তার পিয়ন রাসেল মিয়া। ঘুষ দাবি করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই শিক্ষার্থী বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলামের নিকট জানান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সোবাহান মুন্সীকে ডেকে আনেন। কিন্তু আব্দুস সোবাহান মুন্সি ঘুষের বিষয়ে অস্বীকার করলে ১৯ নং উত্তর মহিষার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন, উপজেলা সবচেয়ে সিনিয়র প্রধান শিক্ষক সালাউদ্দিন মাষ্টার, শিক্ষক নেতা সুজল মাষ্টারসহ স্থানীয় শিক্ষা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এক পর্যায়ে বৈঠকে বসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। সকলের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার অভিযুক্ত প্রমাণিত হয়। পরে শিক্ষা পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে, মানবিক দিক বিবেচলা করে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুচলেকা দেয়ার শর্তে আব্দুস সোবাহান মুন্সীকে ক্ষমা করে দেন।
১৭ নং মধ্য মহিষার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালাউদ্দিন বলেন, আমাকে ইউএনও স্যারের অফিস থেকে ফোন করা হয়। আমি স্যারের অফিসে গিয়ে নিজেই বিব্রত হই। আমাদের অনুরোধে ইউএনও স্যার মানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপনারাও বিষয়টি মানবিক ভাবে দেখবেন । দয়া করে নিউজ না করলে আমরা খুশি হবো।
১৯ নং উত্তর মহিষার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেনকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করেও কোন রেসপন্স পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ভেদরগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান শিক্ষক মো: শিরাজুল হক বলেন, আমাকে প্রধান শিক্ষক সালাউদ্দিন ভাই ইউএনও অফিসে যেতে ফোন করে। আমি দ্রুত সেখানে যাই। আমরা ইউএনও স্যারকে অনুরোধ করেছি। এগুলো নিউজ হলে মানসম্মানের বিষয়। আপনারাও আমাদের ভাই দয়া করে নিউজ করবেন না।
এদিকে ভেদরগঞ্জ উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই আব্দুস সোবাহান মুন্সির বিরুদ্ধে একের পর এক পাসেন্টিজ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। এর আগে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় একাধিকবার তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) কে ম্যানেজ করে তিনি দিনের পর দিন এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সোবাহান মুন্সী বলেন, আমি এ ঘটনায় কোন টাকা পয়সা দাবি করি নাই। আমার উপর জুলুম হয়েছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর