
জয়পুরহাটের কালাইয়ের কৃষকরা শীতকালীন আগাম শাকসবজির আবাদ করেও অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে সবজির বাজারগুলোতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে যায় শীতকালীন সকল শাকসবজির। অতিবৃষ্টি কাটিয়ে দফায় দফায় চারা তৈরির পর এখনও শীতকালীন সবজিতে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন উপজেলার কৃষকরা।
সরেজমিনে শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকালে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে কিছু শীতকালীন সবজি উত্তোলন পর্যায়ে আর কিছু সবজি দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। তবে বিগত বছর গুলিতে আগাম সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন কৃষকরা। নতুন নতুন শীতকালীন সবজি কীভাবে বাজারে নামানো যায় এটা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। কিন্তু, চলতি বছরে অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকরা তাদের এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। বিধায়, কৃষকরা এখনও সবজি বুনছেন।
কালাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর আগাম জাতের শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮০ হেক্টর। তবে চাষ হয়েছে ১২০ হেক্টর জমিতে।
উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মাঠগুলোতে সবজি চাষে কৃষকদের ব্যস্ততা বেড়েছে। উপজেলায় সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, করলা, বেগুন, মরিচ, মুলা, লাউ, পটল, বরবটি, গাজর, পালংশাক, লাল শাকসহ হরেক রকমের সবজি চাষ হচ্ছে। কৃষকরা রোদে পুড়ে সবজির খেত পরিচর্যা করছেন। কেউ চারার পরিচর্যা করছেন আবার কেউ সার-বালাইনাশক প্রয়োগ করছেন। এছাড়াও যারা পিছিয়ে পড়েছেন তারা জমি প্রস্তত, বীজ রোপনে তোড়জোড় শুরু করেছেন।
কালাই পৌরসভার আওড়া মহল্লার ফরহাদ হোসেন ও ফারুক হোসেন, দুরুন্জ মহল্লার নুরনবীসহ আরো কৃষকরা জানান, পুরো শীতের সময়েই বাজারে শীতকালীন সবজির চাহিদা থাকে। তবে মৌসুমের শুরুতে শীতকালীন সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। এ কারণে তারা শীত শুরু হওয়ার আগেই শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু করে দিয়েছেন। তারা বরাবরই শাক-সবজি চাষ করে আসছেন।
এ উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালা পারকাটা গ্রামের কৃষক লালমিয়া বলেন, এ বছর ৩০ শতক জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছি। আগাম শীত মৌসুমের জন্য যেসব সবজি চাষ করা হয় তার দাম ভালোই পাওয়া যায়। কিন্তু পরিচর্যা বেশি করতে হয়। পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। আবার বৃষ্টি হলে চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে ভালো দামের আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়।
কালাই পৌরসভার বাসিন্দা,আব্দুল মোমিন বলেন, বেগুন, শিম, টমেটো, মিলে ৪০ শতক জমিতে আগাম সবজি চাষ করেছি। এ বছর বৃষ্টির কারণে আগাম সবজি চাষে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এজন্য একটু বেশি পরিচর্যা করতে হয়েছে। অনেক খরচ পড়ছে। তবে অসময়ে বাজারে এই সবজির চাহিদা থাকে অনেক। এ কারণে এই সবজিগুলো বাজারে বেশি দামে বিক্রি করা যায়। তাই আগাম শীতকালীন সবজি চাষে আমাদের আগ্রহ বেশি থাকে।
কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, বৃষ্টির পর থেকে কৃষকরা আগাম শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ শুরু করেছেন। আধুনিক পদ্ধতিতে কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারেন এবং সবজি চাষে কোনো প্রকার সমস্যায় না পড়েন এজন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি।
কৃষকদের সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সুষম সার, জৈব সার এবং কীটনাশক ব্যবহারের জন্য মাঠ পর্যায়ে তাদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর