• ঢাকা
  • ঢাকা, রবিবার, ১১ মে, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৩০ মিনিট পূর্বে
প্রচ্ছদ / জাতীয় / বিস্তারিত
মাহবুব নাহিদ
কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর, ২০২৪, ০২:০৬ দুপুর

"পিন্ডিও না, দিল্লীও না—শুধুই বাংলাদেশ!"

ফাইল ফটো

"পিন্ডির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়।" -মাওলানা ভাসানী। ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মাওলানা ভাসানী কণ্ঠস্বরই ছিল আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। আজ ১৭ নভেম্বর, বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে এক অমর সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব, গণমানুষের নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। মওলানা ভাসানী ছিলেন সেই অগ্নিপুরুষ, যিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তার রাজনৈতিক আদর্শ, সংগ্রামী চেতনা এবং দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা আজও আমাদের পথপ্রদর্শক। মওলানা ভাসানীর বহু সিদ্ধান্ত এবং সংগ্রাম ছিল প্রমাণ যে, তিনি কখনোই অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য সর্বদা আপোষহীন ছিলেন।

ভাসানী সাহেব একেবারে শুরু থেকেই সবার কাছে এক অসাধারণ নেতারূপে পরিচিত ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে তৈরি হওয়া বৈষম্য এবং শোষণের বিরুদ্ধে তিনি সরব ছিলেন। তার জীবনের একটি স্মরণীয় বক্তব্য ছিল, "পিন্ডির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়।" এই বক্তব্যটি শুধু তার সময়কালেই ছিল না, আজও তা আমাদের সংগ্রামী জাতীয়তাবাদী চেতনার এক শক্তিশালী প্রতীক। তিনি বিশ্বাস করতেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কখনোই কোনো দেশের শাসনাধীন হবে না, দেশের জনগণই তার প্রকৃত মালিক।

মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৭৬ সালে অনুষ্ঠিত ফারাক্কা লংমার্চ ছিল ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম বৃহৎ গণ আন্দোলন। গঙ্গার পানি বাংলাদেশে আসতে না দেয়ার জন্য ভারতের ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের কৃষি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবনযাত্রার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। মওলানা ভাসানী, ৯৬ বছর বয়সে, সাহসিকতার সাথে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন, যা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এক অমিত সংগ্রাম। এই আন্দোলন ছিল ভারতের আগ্রাসন ও পানি বণ্টন সমস্যার বিরুদ্ধে এক বড় প্রতিবাদ।

মওলানা ভাসানী এবং পরবর্তীকালে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করার যে সংগ্রাম হয়েছে, তা অনেকাংশে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করেছিল, কিন্তু তারপর থেকেই বাংলাদেশের প্রতি ভারতের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বাড়তে থাকে। দেশ গঠনের প্রথম থেকেই ভারত বাংলাদেশে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছিল। 

শেখ হাসিনার সরকারের ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারত যে সহায়তা করেছে এবং নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে, তার ফলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত সরকার যেমন শিলিগুড়ি করিডোর (চিকেন নেক) এবং মংলা বন্দরের বাণিজ্যিক সুবিধা গ্রহণ করেছে, তেমনি নানা ধরনের সমঝোতা স্মারক সই করার পরেও বাংলাদেশের স্বার্থকে উপেক্ষা করে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের একতরফা সিদ্ধান্ত দেশবাসীর মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। 

এছাড়া, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে সীমান্তে নিরীহ মানুষ হত্যার ঘটনা, মাদকের অবাধ প্রবাহ, এবং বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের জনগণের ওপর নির্যাতনও ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিরোধিতা বৃদ্ধি করেছে। এই বিষয়গুলো ভাসানীর আন্দোলন ও তার নীতি অনুসরণকারীদের মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে সমালোচনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে শুধু নেতা নয়, সাধারণ জনগণও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আবরার ফাহাদ ছিল সেই যুবক, যার মেধা এবং সাহস বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের অগ্রগতির প্রেরণা ছিল। তিনি যখন ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং জাতীয় স্বার্থে কথা বলেন, তখন তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আবরারের মৃত্যু বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে এক নতুন দিশা দিয়েছে, যেখানে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস হতে পারে না।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলির মধ্যে নদী বণ্টন অন্যতম। ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তা চুক্তি, ফেনী নদী—এগুলো দেশের পানি সংকট এবং কৃষি উন্নয়নের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। কিন্তু ভারত কখনোই এই পানি বণ্টনে বাংলাদেশের পক্ষ নেয়নি। মওলানা ভাসানী যখন ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন, তার লক্ষ্য ছিল একটাই—বাংলাদেশের অধিকারকে রক্ষা করা। তিস্তা চুক্তি বা পানির বণ্টন নিয়ে ভারত কখনোই বাংলাদেশকে ন্যায্য অধিকার দেয়নি, এবং তার উপর একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করেছে।

মওলানা ভাসানীর আদর্শ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা করা। তাঁর জাতীয়তাবাদ ছিল বৈষম্যহীন, সবার জন্য সমান সুযোগ এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাঁর আদর্শে প্রভাবিত হয়ে বলেছেন, "বিদেশে বন্ধু আছে, প্রভু নেই।" অর্থাৎ, বাংলাদেশ কখনো কোনো দেশের প্রতি ঋণী হতে পারে না। দেশের স্বাধীনতা, স্বাধীনতা, এবং জনগণের কল্যাণই তার মূল লক্ষ্য। এই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল বাংলাদেশের প্রকৃত জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।

মওলানা ভাসানী যেমন বলেছেন, “আমি ভারতের বিরুদ্ধে নই, আমি বাংলাদেশের পক্ষে।” এই বক্তব্যটি শুধু ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়, বরং বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি অটুট ভালোবাসা ও বিশ্বাসের প্রতীক। তবে, সম্পর্ক গড়ার জন্য ন্যায্যতা এবং সমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতকে বাংলাদেশি স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, এবং সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য একে অপরের ওপর হস্তক্ষেপ কমানো জরুরি।

আজ আমরা যখন ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সাথে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি, তখন মওলানা ভাসানী, শহিদ জিয়া, আবরার ফাহাদ—এদের আদর্শ আমাদের পথপ্রদর্শক হতে পারে। তাদের বীরত্ব, ত্যাগ এবং সংগ্রাম আজও আমাদের সাহস দেয়। আজকের দিনে যখন আমরা বৈষম্যহীন, স্বাধীন এবং নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, তখন তাদের মতো নেতাদের চেতনা আমাদের শক্তি এবং অনুপ্রেরণা। 

মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের এই অঙ্গীকার, আমাদের জাতীয় স্বার্থে কখনো কোনো দেশের শাসনে না গিয়ে, আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একযোগে লড়াই করার। আমাদের জাতীয়তাবাদকে সম্মান দিয়ে, এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com