
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে নবান্ন উৎসব ঘিরে ঐতিহ্যবাহী জামাইদের মাছের মেলা বসেছে। রবিবার (১৭ নভেম্বর) দিনব্যাপী শুরু হওয়া এক দিনের এ মেলা হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে জমে উঠেছে।
জানা যায়, নবান্ন উৎসবে প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের ২ তারিখে এখানে মাছের মেলা বসে। মেলায় অংশ নেন কালাই পৌরসভা ও উপজেলার মাত্রাই, হাতিয়র, মাদারপুর, হাটশর, হারুঞ্জ, পুনট, বেগুনগ্রাম, পাঁচগ্রামসহ আশপাশের ২৫-৩০ গ্রামের মানুষ। উৎসবে প্রতি বাড়িতে মেয়ে জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকে নিমন্ত্রণ করা হয়। জামাইরা মেলা থেকে শ্বশুর বাড়িতে মাছ কিনে নিয়ে আসে। দূরদূরান্ত থেকেও লোকজন আসেন মেলায় মাছ কিনতে।
মেলায় বিশালাকৃতির একটি কাতল মাছ মাথায় তুলে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন কালাইয়ের মূলগ্রাম গ্রামের আজিজুল হক। ১৩ কেজি ওজনের কাতল মাছটির দাম হাঁকেন ১৩ হাজার টাকা। মেলায় ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিগহেড কার্প ও সিলভার কার্প মাছ বেশি বিক্রি হয়েছে। প্রকারভেদে রুই ও কাতলা মাছ বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে।
কথা হয় ক্রেতা সোহেল রানা ও রবিউল ইসলামসহ বেশ কয়েক জনের সঙ্গে। প্রত্যেকে জানান, এবারের মেলায় প্রচুর মাছ উঠেছে কিন্তু দাম অনেকটা বেশি।
কালাই উপজেলার শাইলগুন গ্রামের এস এম আকতার বলেন ১০ কেজি ওজনের বিগহেড কার্প কিনলাম ৪ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, মেলায় বহু ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের দেখে ভালো লাগছে। আসলে বাঙালি জীবন থেকে উৎসবগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এ রকম উৎসবে অংশ নিতে পারলে ব্যস্ততম জীবনে কিছুটা হলেও প্রশান্তি আসে।
মাছ ব্যবসায়ী রুহুল আমীন, নজরুল ইসলাম, রাজু, সাইফুল ও শহিদুল জানায়, মাছের মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হলেও বিক্রি সেই তুলনায় কম। তারপরও যেটুকু হয়েছে, সব খরচ বাদে তাতে লাভ ভালয় টিকবে।
পাঁচশিরা মাছের মেলার ইজারাদার প্রতিনিধি গোলাম আজম জানায়, প্রতি বছর এই মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসব বিরাজ করে। আজও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এই মেলায় এবার ৫০-৬০টি স্টলের মাধ্যমে দিন শেষে এখানকার ব্যবসায়ীরা অন্তত কোটি টাকার মাছ কেনা-বেচা করবেন। এই মেলাকে ঘিরে সব ধরণের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও পৌর প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করে থাকেন বলেও তিনি জানান।
কালাই উপজেলা মৎস্য অফিসার তৌহিদা মুহতামিম বলেন মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক ধরনের মাছ এসেছে। মাছ কিনতে ক্রেতা ও বিক্রেতারাও আসছে। এটা শুধু কেনা-বেচার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা। মেলাকে কেন্দ্র করে উপজেলায় উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করে। কোন ফরমালিন যুক্ত মাছ আছে কিনা এবং নিষিদ্ধ মাছগুলো কেউ বিক্রি করছে কিনা এ বিষয়ে মেলায় আমাদের দপ্তর থেকে সবসময় মনিটরিং করা হচ্ছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর