
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী আগামী ২৯ থেকে ৩১ মে এর মধ্যে উপকূলে আঘাত হানতে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় মন্থা। নতুন ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসে উপকূলজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলোতে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ায় শ্যামনগর উপকূলের প্রায় ২০০ মানুষ ও অসংখ্য গবাদিপশু প্রাণ হারিয়েছে। মৎস্য ও কাঁকড়া প্রকল্প, কাঁচা পাকা ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষেতে ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে।
এসব ঘটনার পর শুধু গাবুরা ছাড়া শ্যামনগর উপকূলের বেড়িবাঁধ গুলো এখনো নাজুক অবস্থায় পড়ে আছে।
শ্যামনগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫ ও ১৫ নম্বর ফোল্ডারের মোট ১৪৫.৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রিন্স রেজার তথ্যানুযায়ী ৮ থেকে ১০ পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ অথচ সাতটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী ২৭টি পয়েন্টের প্রায় ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ।
এরমধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় আছে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম দুর্গা বাটি, দাতিনাখালি, আটুলিয়া ইউনিয়নের বড় কুপট, খোন্তা কাটা ও সরদারবাড়ী, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাঠি,ঝাপা,চাউলখোলা ও পশ্চিম পাতাখালি, কাশিমাড়ী ইউনিয়নের ঝাপালির মমিন নগর, কৈখালী ইউনিয়নের মির্জাপুর, দক্ষিণ জয়াখালী ও জয়াখালী হুলা, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মৌখালী গাজি বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন, হরিনগর খাদ্যগুদাম ও সিংহরতলী, গাবুরা ইউনিয়নের নেবুবুনিয়া,গাগড়ামারি ও কালিবাড়ী।
ইতিপূর্বে পূর্ব ও পশ্চিম দুর্গা বাটি,দাতিনাখালী বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী নজরুল ইসলা বলেন, প্রায় প্রতিবছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই এলাকার বেড়িবাঁধ বিপর্যস্ত হয়। মানুষের দুঃখ ও দুর্দশার শেষ থাকে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামান্য সহযোগিতা ও স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রমে পুনরায় আবার ঘুরে দাঁড়াতে হয় কিন্তু এভাবে আর কতদিন? এই মুহূর্তে শ্যামনগরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ বুড়িগোয়ালিনীতে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সহযোগিতা করে যাচ্ছে তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন না করায় বিপর্যয় ঘটতে পারে।
পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আমজাদ হোসেন জানান, ১০ টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ তবে অধিক ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় আছে ৪টি পয়েন্ট। এগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে যাচ্ছে। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতে মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখান থেকে পরিত্রাণ পেতে গাবুরার মত মেগা প্রকল্প ছাড়া রক্ষা নেই। আমাদের ত্রাণের প্রয়োজন নেই টেকসই বেড়িবাঁধ যদি নির্মাণ করা যায় তাহলে উপকূলের মানুষ খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম পল্টু (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, গত ২৭শে এপ্রিলে ইউনিয়নের সিংহড়তলী হঠাৎ বেড়িবাঁধ ধসে যায়। ইউনিয়ন পরিষদের সকল সদস্য,পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সর্বোপরি সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় রিং বাঁধ দিয়ে কোন রকম রক্ষা করতে পারি। একই রকম ঝুঁকিপূর্ণ আরো তিনটা পয়েন্ট আছে যেখানে কাজ করা খুবই জরুরী। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি কিন্তু তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ ইমরান সরদার বলেন, শ্যামনগর উপকূল একবারে ঝুঁকিপূর্ণ এটা আমরা বলবো না। আমাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী উপজেলা জুড়ে তিন কিলোমিটারের মতো জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ আছে। যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমাদের জিও রোল, জিও সিট, পর্যাপ্ত লেবার, বালু বহনকারী বালগেটসহ সবকিছুই রেডি আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন বলেন, গত ১৫ বৃহস্পতিবার উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিংয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা গুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন সার্বিক বিষয় সবসময় নজরদারিতে থাকবে।
উপকূলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়ন হিসেবে বুড়িগোয়ালিনী, পদ্মপুকুর ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নকে চিহ্নিত করা হয়। এই ইউনিয়নগুলোতে ইতিপূর্বে একাধিকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। উপকূলের মানুষের প্রাণের দাবি "ত্রাণ নয় টেক সেই বেড়িবাঁধ চাই"এই আশা একদিন পূরণ হবে সেই প্রত্যাশার উপকূলবাসী।
আরমান/সাএ
সর্বশেষ খবর