
এবার কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে ১০ টি দানবাক্সে মিললো ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া গেছে। এছাড়া দানবাক্সে মিলেছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার।
তিন মাস ১৪ দিন পর শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এরমধ্যে ১০টি দানবাক্স ও একটি ট্রাঙ্ক ছিল। এতে পাওয়া যায় ২৯ বস্তা টাকা। পরে মসজিদ কমপ্লেক্সের দুই তলায় নিয়ে টাকা গণনার কাজ শুরু হয়।
সারাদিন গণনা শেষে সন্ধ্যা ৭ টায় জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান আনুষ্ঠানিক ভাবে এ ঘোষণা দেন।
টাকা গণনার সময় তদারকিতে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) অতিরিক্ত দায়িত্ব (উপপরিচালক (উপসচিব), স্থানীয় সরকার, বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) (অতিরিক্ত দায়িত্ব), মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও অতিরিক্ত দায়িত্ব (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর জেবুন নাহার, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (স্থানীয় সরকার শাখা ও লাইব্রেরি শাখা) মাহমুদুল হাসান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ মিয়া, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত শাখা, মিডিয়া সেল, ব্যবসা ও বাণিজ্য শাখা) রওশন কবির, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (রেকর্ডরুম শাখা, তথ্য ও অভিযোগ শাখা এবং প্রবাসী কল্যাণ শাখা) ছামিউল ইসলাম, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা, আইসিটি শাখা এবং ই-সেবা কেন্দ্র মোছা. আজিজা বেগম, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (সাধারণ শাখা, ট্রেজারি শাখা, ও এস এস, জুডিশিয়াল মুন্সিখানা শাখা ও ফৌজদারি নকল খানা) এস এম মেহেদী হাসান, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (গোপনীয় শাখা) মোঃ রিয়াদ হোসেন, রূপালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এছাড়াও নিরাপত্তায় ১০ জন সেনা সদস্য, ১৭ জন পুলিশ সদস্য, ৯ জন আনসার সদস্য, পাগলা মসজিদের হাফিজিয়া মাদরাসার ১৩৩ জন ছাত্র, ঐতিহ্যবাহী জামিয়া এমদাদিয়া মাদরাসার ১৫৫ জন ছাত্রসহ ৩৬ শিক্ষক ও স্টাফ, রূপালী ব্যাংকের ৭৫ কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সাড়ে ৪০০ লোকজন গণনার কাজে অংশগ্রহণ করেন।
এসময় উপস্থিতি ছিলেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী।
এর আগে ১৭ আগস্ট ৩ মাস ২৬ দিনে পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো থেকে পাওয়া যায় ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা।
এরপর চলতি ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া যায়।
এ ছাড়াও গত বছরের ৯ ডিসেম্বর তিন মাস ২০ দিন পর দানবাক্স খোলা হয়েছিল। ২৩টি বস্তায় তখন রেকর্ড ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার পাওয়া গিয়েছিল।
গত বছরের ১৯ আগস্ট খোলা হয়েছিল আটটি দানবাক্স। তখন রেকর্ড ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সাড়ে ১৩ ঘণ্টায় ২০০ জনেরও বেশি লোক এ টাকা গণনা শেষে রেকর্ড ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা পাওয়া যায়। এ ছাড়া একটি ডায়মন্ডের নাকফুলসহ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও পাওয়া যায়।
মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে।
মসজিদের খতিব, এলাকাবাসী ও দূরদূরান্ত থেকে আসা লোকজন সূত্রে জানা যায়, এ মসজিদে মানত করলে মনের আশা পূর্ণ হয়—এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এ মসজিদে দান করে থাকেন।
জনশ্রুতি আছে, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন এলাকাবাসী।
মসজিদটিতে এবার আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৬০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর