
দেশের সংখ্যালঘুদের সমস্যা নিয়ে কীভাবে অবাধ, সত্য তথ্য সংগ্রহ করা যায় সে বিষয়ে ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শ চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, প্রকৃত খবরটা জানতে হবে। সেই প্রক্রিয়াটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এত বড় দেশে যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু প্রকৃত তথ্য জানতে হবে, যাতে তাৎক্ষণিক সমাধান করা যায়। যেদিক থেকেই হোক দোষী দোষীই। তাকে বিচারের আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক শুরু হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর গতকাল বুধবার দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজেদুর রহমান, হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, জুনায়েদ আল হাবিব ও মুনির হোসাইন কাসেমী, বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের (বেফাক) মহাসচিব মাহফুজুল হক, ইসলামী বক্তা ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমদুল্লাহ, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব আবদুল মালেকসহ কয়েকজন আলেম বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।
সরকার গঠনের আগে বিমানবন্দরে দেওয়া বক্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, তখন আমি বলেছিলাম আমরা একটা পরিবার। আমাদের নানামত, নানা ধর্ম থাকবে, নানা রীতিনীতি থাকবে কিন্তু আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। এটাতে জোর দিয়েছিলাম। আমাদের শত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আমরা পরস্পরের শত্রু নই। আমাদের জাতীয়তা, পরিচয়ের প্রশ্নে এক জায়গায় চলে আসি। আমরা বাংলাদেশি, এক পরিবারের সদস্য।
ড. ইউনূস বলেন, শপথ গ্রহণের পরে শুনতে আরম্ভ করলাম সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। তখন মনটা খারাপ হয়ে গেল। এর পরপরই আমি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গেলাম। সেখানেও বললাম আমরা একই পরিবারের সদস্য। সব দাবিদাওয়া বাদ দিলেও একটা দাবি পরিষ্কার আমাদের সকলের সমান অধিকার, বলার অধিকার, ধর্মের অধিকার, কাজকর্মের অধিকার। সেটা এসেছ সংবিধান থেকে। নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য, রাষ্ট্রের দায়িত্ব সেটা নিশ্চিত করা।
বিদেশি কিছু প্রচারমাধ্যমে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে- এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন আবার নতুন কথা, হামলা হচ্ছে, অত্যাচার শুরু হচ্ছে। ...আমি খোঁজ নিচ্ছি, কি হচ্ছে? সবদিকে দেখলাম, এটা (হামলা-অত্যাচার) হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ...ভেতরে গিয়ে দেখতে হবে। সত্যটা কোথায়?
সঠিক ও প্রকৃত তথ্য কীভাবে পাওয়া যাবে তার ওপর জোর দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, সঠিক তথ্য কীভাবে পাব, সেটা আমাদের জানার। প্রকৃত তথ্য, অনেক সময় সরকারি তথ্যের ওপর ভরসা করে লাভ নেই। কর্তা যা চায়, সেভাবে বলে। আসলটা মন খুলে বলতে চায় না। আমরা আসল খবরটা জানতে চাই। সেই প্রক্রিয়াটা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এত বড় দেশে যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু প্রকৃত তথ্য জানতে চাই। তাৎক্ষণিক খবর পেলে যাতে সমাধান করা যায়। যেদিক থেকেই দোষী দোষীই। তাকে বিচারের আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব।
কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে প্রথম সেই পরিবেশ সৃষ্টির ওপর জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, প্রথম কথাটা হলো না হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যবস্থা করা।
সংখ্যালঘুদের সমস্যা নিয়ে কীভাবে অবাধ, সত্য তথ্য সংগ্রহ করা যায় সে বিষয়ে ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শ চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তথ্য সংগ্রহকারীর নিরাপত্তা এবং তথ্যদানকারীও যাতে বিব্রত না হন, তাও নিশ্চিত করতে হবে।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর