• ঢাকা
  • ঢাকা, রবিবার, ০৮ জুন, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১৩ মিনিট পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৩:৫৮ দুপুর

স্কুলশিক্ষক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হেনরী

ফাইল ফটো

সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী। তার স্বামী হলেন সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার লাবু।  হেনরী স্কুলশিক্ষক হিসেবে তার জীবন শুরু করেন। ওই পেশাতে থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী রুমানা মাহমুদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি পরাজিত হন। পরে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচটি ইমামের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ২০০৯ সালে তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পান।  এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। গত ১৫ বছরে ৪৯টি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করেছেন প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। 

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, হেনরী ছিলেন নির্ধারিত বেতনভুক্ত বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। তার হঠাৎ ফুলেফেপে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠাকে মানুষ স্বাভাবিক মনে করে না। তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন বলে শোনা যায়। সাধারণ মানুষের ধারণা, ওইসব খাত থেকে তিনি বেপরোয়াভাবে দুর্নীতি করে এত অর্থবিত্তের মালিক হয়ে উঠেছেন। এগুলো অনুসন্ধান করে বিচারের আওতায় আনা দরকার।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি (সিরাজগঞ্জ-২) জান্নাত আরা হেনরী ও তার স্বামী সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম তালুকদারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অবৈধ সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আসিফ আল-মাহমুদ ও শাহ আলম সেখ বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক শহিদুল আলম সরকার। এর আগে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ নভেম্বর জান্নাত আরা হেনরী, তার স্বামী শামীম তালুকদার ও মেয়ে মুনতাহা রিদায়ী লামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয় গত ২০ আগস্ট। অনুসন্ধান শেষে অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থপাচার ও ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্যপ্রমাণ পায় দুদক।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা হেনরী রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ১৫ বছরে ৪৯টি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করেছেন প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। এর আগে স্কুলশিক্ষিকা থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী রুমানা মাহমুদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি পরাজিত হন। পরবর্তী সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচটি ইমামের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ২০০৯ সালে তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পান। তার দায়িত্ব পালনকালেই আলোচিত হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটে। ঋণ জালিয়াতির হোতা হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ জবানবন্দিতেও কয়েকজন ঘুস নিয়েছেন বলে জানালেও পরিচালনা পর্ষদের হেনরীসহ অন্যদের দায়মুক্তি দেয় দুদক। পরবর্তী সময়ে হেনরী অবৈধ সম্পদ অর্জনে হয়ে ওঠেন বেপরোয়া।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নিজ জেলা সিরাজগঞ্জ ছাড়াও বাড়িগাড়িসহ স্থাবর সম্পদ রয়েছে ঢাকা, পটুয়াখালী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলায়। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ সদরের গজারিয়ায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন বৃদ্ধাশ্রম ‘হেনরীর ভুবন’। এর পাশেই গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল রিসোর্ট ‘কিছুক্ষণ’। তার ব্যবহৃত তিনটি গাড়ির মধ্যে রয়েছে হুড খোলা ল্যান্ডক্রুজার, দুটি প্রাইভেট কার। এছাড়াও সিরাজগঞ্জের নর্থ-ওয়েস্ট জেনারেশন কো. লিমিটেডের আওতাধীন যমুনা সেতু পশ্চিম সয়দাবাদ পাওয়ার প্ল্যান্ট, ভেড়ামারা পাওয়ার প্ল্যান্টসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাড়ায় খাটে শতাধিক মাইক্রোবাস। যার অধিকাংশই রয়েছে হেনরী দম্পতির স্বজনদের নামে।

জান্নাত আরা হেনরী থাকেন শহরের মুজিব সড়কে তার শ্বশুর সাবেক জেলা আ.লীগের সভাপতি প্রয়াত মোতাহার হোসেন তালুকদারের বাড়িতে। তিনি ওই বাড়িটি আধুনিকায়ন করেন। একই সঙ্গে ওই বাড়ির পাশেই নির্মাণ করেছেন সাততলা আবাসিক ভবন। সিরাজগঞ্জের গজারিয়ায় প্রায় ১২ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন ‘কিছুক্ষণ’ রিসোর্ট ও কেবল তৈরির কারখানা। রিসোর্টের উলটোদিকেই রয়েছে ১৬ বিঘা জমিতে ৫৬ কক্ষের আধুনিকমানের বৃদ্ধাশ্রম। ওই এলাকাতেই হেনরীর শ্বশুরের নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মোতাহার হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। সদর উপজেলার নলিছাপাড়ায় রয়েছে জান্নাত আরা হেনরী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ এবং হেনরী ইনস্টিটিউট অব বায়ো সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি একাডেমিক ভবন। এছাড়া গাজীপুরের শ্রীপুরে দুটি জায়গায় আছে বিলাসবহুল রাস রিসোর্ট। সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন রোডে রয়েছে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন জুবলী প্লাজা। মুজিব সড়কে রয়েছে রাস মেডিকেয়ার, সয়দাবাদ কড্ডার মোড় বাস টার্মিনাল এলাকায় রয়েছে দুটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। শহরের ফজল খান রোডে হেনরী স্কলাস্টিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজও করেছেন তিনি। সিরাজগঞ্জের প্রধান ডাকঘরের বিপরীতে নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবন। এছাড়াও মিয়া আয়রন অ্যান্ড স্টিল নামে একটি প্রতিষ্ঠান এবং গাজীপুরের শ্রীপুরে রয়েছে বিশাল গরুর খামার।

অথচ ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে জান্নাত আরা হেনরী হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন কৃষি খাত থেকে তার বার্ষিক আয় দুই হাজার টাকা। শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছিলেন এমএসএস প্রথম পর্ব। পেশা হিসাবে দেখিয়েছিলেন শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইনি পরামর্শক ইত্যাদি। এ খাত থেকে আয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৮০ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। ২০০৮ সালে হেনরীর হাতে নগদ টাকা ছিল আড়াই লাখ টাকা। আর স্বামী লাবুর ছিল নগদ ২ লাখ টাকা। নিজ নামে ছিল সাড়ে ১৭ শতক কৃষিজমি। আর অকৃষি জমি ছিল ৩৬ শতক। স্বামী লাবুর নামে ২ লাখ টাকা মূল্যের কৃষিজমি ছিল ৩ বিঘা। একই শ্রেণির জমি ছিল সাড়ে ৬ শতক। হলফনামায় হেনরীর স্বর্ণালংকার ছিল ২০ ভরি। সব মিলে স্বামী-স্ত্রীর ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছিল।

১৫ বছরের ব্যবধানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় হেনরী ও স্বামী শামীম তালুকদার লাবুর ৬৬ কোটি ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩০৭ টাকার আয়সহ সম্পদ দেখানো হয়েছে। যার কৃষি খাতে আয় দেখানো হয় বছরে ৩ লাখ, তিনটি দোকান ভাড়া থেকে ৮ লাখ ৯১ হাজার, ব্যবসা থেকে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ২৫ হাজার ২৯৬, চাকরি/সম্মানি ভাতা ২৮ লাখ ১৩ হাজার ৭৯৯ এবং ডেইরি-ফিশারি ও ব্যাংক মুনাফা ৩ কোটি ২৬ লাখ ২৪ হাজার ৬৬১ টাকা। জান্নাত আরা হেনরীর বর্তমান স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নিজ নামে কৃষিজমি ১ হাজার ৩৪৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যার মূল্য ৩ কোটি ৯৬ লাখ এবং স্বামীর নামে ৫২১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যার মূল্য ৭৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। নিজ নামে অকৃষি জমি ১৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যার মূল্য ৩ কোটি ৮৭ লাখ ৫ হাজার টাকা। স্বামীর নামে পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ১০০ শতাংশ অকৃষি জমি রয়েছে। হেনরীর নিজ নামে ৫ কোটি ২২ লাখ ১৪ হাজার টাকা মূল্যের চারটি ভবন এবং স্বামীর নামে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা মূল্যের একটি দালান (বৃদ্ধাশ্রম) দেখানো হয়েছে।

এছাড়া অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নগদ টাকা নিজ নামে ২২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫ এবং স্বামীর নামে ২২ লাখ ৮৮ হাজার ৩৩৫ টাকা। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে নিজ নামে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪০ এবং স্বামীর নামে ১ কোটি ২০ লাখ ৮৫ হাজার ৭৩৫ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ, তালিকভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার আছে নিজ নামে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। পোস্টাল বা সেভিংস সার্টিফিকেটসহ সঞ্চয়পত্রে স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ নিজ নামে আছে ৩৩ কোটি ৪৯ লাখ ২৯ হাজার ৭৬৭ এবং স্বামীর নামে ১ কোটি ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৬১ টাকা। নিজ নামীয় যানবাহনের মূল্য ৩ কোটি ৮৪ লাখ ও স্বামীর নামে ২ কোটি ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ১৫৬ টাকা।

এই দম্পতির বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যুবদল ও ছাত্রদলের তিন নেতা হত্যার তিনটি, একটি অস্ত্র মামলাসহ দুদকে দুটি মামলা রয়েছে। ১ অক্টোবর মৌলভীবাজার থেকে স্বামীসহ গ্রেফতার হয়ে হেনরী ও স্বামী শামীম তালুকদার বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

 

শাকিল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com