
ছাত্রীদের পর্দা করা ও নেকাব পড়া নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়ার নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উখিয়া কলেজের ইতিহাস ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক অধ্যাপক তৌহিদুল আলম।
এমন একটি মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কলেজটির শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) কলেজের একটি হলরুমে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পর্দা করলে মেয়েদেরকে ডাকাতের মতো লাগে।
পর্দা করতে ইচ্ছে হলে মাদ্রাসায় পড়ো, কলেজে পড়ার দরকার নেই বলে দাবি করে এমন কটূক্তি করেছেন তিনি। তার এমন বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করার দাবি জানিয়ে ওই দিন বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেছে কলেজটির শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, হলরুমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে কলজের অনেকছাত্রীরাই পর্দা ও নেকাব পড়ে ক্লাসে এসেছিলেন। তাদের দেখে হঠাৎ ক্ষেপে যান অধ্যাপক তহিদুল আলম। তিনি প্রথমে শিক্ষার্থীদের নিকাব খুলে ফেলতে বলেন। কিন্তু ধর্মীয় বিধিনিষেধ মানায় অনেকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে খোলার অস্বীকৃতি জানালে তিনি আরও ক্ষেপে যান।একপর্যায়ে তিনি পর্দা করতে ইচ্ছে হলে বেরিয়ে যেতে বলেন। সাথে সাথে ওইসব ছাত্রীদের কয়েকজন ক্লাস থেকে বের হয়ে শিক্ষকের এমন আচরণে কষ্ট পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও দাবি করেন, পর্দা-নেকাব পড়লে এদের কে দেখতে ডাকাতের মতো লাগে। পর্দা করতে ইচ্ছে হলে কলেজে কেন; তারা মাদ্রাসায় যেতে পারে না? এমন আপত্তিকর মন্তব্য করে বসেন বলে দাবি করেন প্রত্যক্ষদর্শী ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচার করলে কলেজ ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা অধ্যাপকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ অপসারণের দাবি তুলেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, তিনি কলেজে যোগদানের পর থেকে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তিনি রাতারাতি বোল পাল্টে বিএনপির আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে সচেতন মহল বলেন, শিক্ষকের এমন বক্তব্য অভিভাবকদের মাঝে এর একটি প্রভাব পড়েছে, সেটি হচ্ছে একজন ছেলে টুপি না পরে স্কুলে গেলে খুব একটা সমস্যা নেই, কিন্তু কোন বাবা-মা চাইবে তাদের মেয়েকে ওড়না কিংবা নেকাব ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে? একটা মুসলিম প্রধান দেশে এমন মন্তব্য কিভাবে করতে পারে তা চিন্তাশীল মানুষের বোধগম্য নয়। কেউ কেউ আবার প্রশ্ন করছেন, একজন ছাত্রীর কী সম্ভব নেকাব ছাড়া পুরুষ শিক্ষকের সামনে যাবে? সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ রক্ষায় এমন শিক্ষকের দাবি পরিহার করা প্রয়োজন। এই মন্তব্য তথাকথিত নারীবাদী নামের ভোগবাদীদের ইশারায় যে করা হয়েছে তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। ইরানি একটি প্রবাদ রয়েছে, নগ্নতা যদি সভ্যতা হয় তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে সভ্য জীবজন্তু।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক তৌহিদুল আলম বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করে বলেন, আপনার কাছে এমন ভিড়িও থাকলে প্রচার করুন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর