
কক্সবাজারের চিহ্নিত অস্ত্রধারী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী আবুল মনছুর লুদুইয়া। তিনি পৌরশহরের এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। তিনি জমি দখল, খুন, অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ অস্ত্র এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অন্তত ২০ মামলার আসামি। সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজি করে বিপুল সম্পদের অধিকারী লুদুর অফিসে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তাও নিয়মিত হাজিরা দিত।
দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে কক্সবাজার শহরের হাশেমিয়া মাদ্রাসা এলাকা থেকে আওয়ামীলীগের এই ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে আ.লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে ভয়ে তটস্থ ছিল গোটা কক্সবাজারের ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ এবং নিরীহ মানুষ। রাজনৈতিক আশ্রয়ে খুন, খারাবি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী তৎপরতায় অরাজকতা সৃষ্টি করে তিনি মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল। তার বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তত ২০টি স্পর্শকাতর মামলা। আলোচিত এই অস্ত্রধারীকে গ্রেফতার করায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে অনেকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধী মিছিলে যোগ দিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে তিনি মারমুখী ভূমিকা পালন করেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে সন্ত্রাসী লুদু আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর দমন-নিপীড়ন চালিয়েছে।
কক্সবাজারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধী মিছিলে সরাসরি অংশ নেন তিনি। ওই মিছিলে ছাত্রদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও অস্ত্রের যোগান দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অনেকেই আওয়ামীলীগের ভাড়াটিয়া ত্রাস হিসেবে চিনেন তাকে। গত ১৭ বছর কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকা রুমালিয়ারছড়া ও জেল গেইট এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে আওয়ামীলীগের এই সন্ত্রাসী।
সূত্র জানান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের ব্যানারে নাম লেখান কক্সবাজার উত্তর রুমালিয়ারছড়াস্থ হাশেমিয়া মাদ্রাসা গেইট এলাকার আব্দুস ছবুর সওদাগরের ছেলে সন্ত্রাসী আবুল মনছুর লুদু। এরপর সন্ত্রাসী ইকবাল হোসেন ছোটন, মুবিনুল হক মুবিন, ফারুক, জিয়াবুল ও জসিমসহ প্রায় ১৫/২০ জনের একটি সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলে। শুরু হয় তাদের ত্রাসের রাজত্ব। ২০০১ সালের মে মাসে সিটি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কলেজ ছাত্র আলমগীর ও তার চাচা বিডিআর সদস্য আমীরুল আলমকে গুলি করে নতুন করে আলোচনায় আসেন ছাত্রলীগ নেতা লুদু। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আমীরুল আলম। এই হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন বেশ উত্তাল সৃষ্টি হয় কক্সবাজারে।
এর আগে ২০০১ সালের মার্চ মাসে চাঁদাদাবী ও লুটপাটের ঘটনায় সন্ত্রাসী লুদুইয়া ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছিল উত্তর রুমালিয়ারছড়া এলাকার রোবহান উদ্দিন আহমেদ। এরপর ২০০২ সালে পাবলিক হল ময়দানে এক অনুষ্ঠানরত জনসভায় প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে জনসভা পণ্ড করে। তখন এক মহিলাকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছিল তৎকালীন ছাত্রলীগের ক্যাডার এই লুদুইয়া।
৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধী মিছিলে যোগ দেন কক্সবাজার পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সন্ত্রাসী লুদুইয়া। প্রকাশ্যে মিছিলে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন তিনি। অবশেষে বুধবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর