
ঠাকুরগাঁওয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেমের প্রলোভনে ফেলে মিলন হোসেন (২৩) নামের এক যুবককে অপহরণের ২৫ দিন পর তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।হত্যাকাণ্ডের শিকার নিহত মিলন হোসেন ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও এর চাপাপাড়া গ্রামের পানজাব আলীর ছেলে এবং সে দিনাজপুর সরকারি পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র ছিল। গ্রেফতারকৃতরা হলেন সেজান আলী (২৬), রত্না আক্তার রিভা (১৯) ও মুরাদ হোসেন (২৫)।
গ্রেফতারকৃত সেজান আলী ও মুরাদ হোসেন এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সেহরির সময় সদর উপজেলার শিবগঞ্জ মহেশপুর বিট বাজার এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে অপহরণকারী সেজান আলীর বাড়ীর পরিত্যক্ত টয়লেট থেকে মিলনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ এবং ভোররাতেই রত্না আক্তার রিভাকেও নিজবাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মরদেহ উদ্ধারের পর ভোরেই বিক্ষুব্ধ জনতা অপহরণকারী সেজানের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ারসার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গেলেও তাদের আগুন নেভাতে বাঁধা দেয় বিক্ষুদ্ধরা।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও ও সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত হয়ে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ ও অবরোধ সরিয়ে ফেলা হয়।
ভুক্তভোগী পরিবার ও পুলিশ সুত্র জানায়, অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে কলেজ পড়ুয়া মিলনকে অপহরণ করে চক্রটি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারী রাত সাড়ে ৮ টায় ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট এর পিছনে প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় মিলন। ঘটনার দিন রাত ১টার সময় ভুক্তভোগী পরিবারকে মুঠো ফোনে অপহরণের বিষয়টি জানায় অপহরণকারীরা। প্রথমে ১২ ঘন্টার মধ্যেই মুক্তিপণের ৩ লাখ টাকা চায় অপহরণকারীরা।
পরদিন দুপুরে টাকাটা দিতে রাজি হয় মিলনের পরিবার। তবে পরে চক্রটি ৫ লাখ দাবি করে। পরদিন আরও বেড়ে ১০ লাখ হয়। তিনদিন পরে ১৫ লাখ চায় চক্রটি। সবশেষে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। ৯ মার্চ রোববার রাতে পুলিশকে না জানিয়ে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা অপহরণকারী চক্রের কাছে বুঝিয়ে দেয় অপহৃত মিলনের বাবা পানজাব আলী। টাকা দেবার পরও ছেলেকে না পেলে পুলিশকে সবটা জানালে পরে অনুসন্ধানে নামে পুলিশ।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে মিলনকে অপহরণে ঘটনায় আমরা দুইজনকে গ্রেফতার করি। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে ও তাদের দেখানো মতে আমরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছি।
এছাড়াও পরে বৃহস্পতিবার একটি মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোট তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করেছি। এ চক্রটি এ ধরনের ঘটনা এর আগেও ঘটিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আর কেউ জড়িত আছে কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভোর রাতেই পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত আসামিদের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর